কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নায়কদের দেখতে সিলেটে তারুণ্যের ঢল নেমেছিলো। সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার কানায় কানায় ভর্তি হয়ে লোক সমাগম ছিলো চৌহাট্টা পয়েন্ট ও রাস্তা পর্যন্ত। নাহিদ-সারজিস-হাসনাতদের সঙ্গে ‘জুলাই পদযাত্রা’ করে হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন তরুণ ও ছাত্র-জনতা। তাদের মাঝে বিরাজ করছিলো উৎসবের আমেজ।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সিলেটে ছিলো জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ‘জুলাই পদযাত্রা’ ও সমাবেশ। বিকাল ৫টায় পদযাত্রা শুরু করার কথা থাকলেও শুরু হয় পৌনে ৬টায়। সুনামগঞ্জের কর্মসূচি শেষ করে এনসিপি নেতৃবৃন্দ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ফটকে পথসভা করেন। পরে আসেন সিলেট শহিদ মিনারে।
চৌহাট্টা পয়েন্ট থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহিদ মিনারে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে হয় সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলটির প্রধান নাহিদ ইসলাম বলেন- বিচার, সংস্কার ও নতুন বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমরা মাঠে নেমেছি। জুলাইয়ের শহীদদের উত্তরসূরি হিসেবে আমরা শপথ নিচ্ছি, নতুন বাংলাদেশ হবে বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত ও মর্যাদাসম্পন্ন দেশ।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন- শহীদ রুদ্র সেন, শহীদ এটিএম তুরাবসহ ১৭ জনের বেশি শহীদের রক্ত সিলেটের মাটিতে মিশে আছে। এই সিলেট হবে এনসিপির নতুন দুর্গ। নতুন বাংলাদেশের অন্যতম স্থান।
নাহিদ বলেন- সিলেট কেবল একটি প্রশাসনিক জেলা নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান সিলেট সব সময় বুক চিতিয়ে লড়েছে বাংলাদেশের পক্ষে।
তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের সময় মাওলানা ভাসানীর আহ্বানে সিলেটবাসী পূর্ববঙ্গের পক্ষে রায় দিলেও, আমরা পূর্ণ সিলেট পাইনি। করিমগঞ্জ কেটে নিয়ে আসামের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল এবং এখন আওয়ামী আমলেও সিলেট উপেক্ষিত থেকেছে। এই অঞ্চলের গ্যাস, পাথর ও খনিজসম্পদ ব্যবহার হলেও সিলেটবাসী বঞ্চিত।
প্রবাসে সিলেটিদের অবদান তুলে ধরে নাহিদ বলেন, লন্ডনে যাঁরা বাংলাদেশকে তুলে ধরছেন, তাদের ঘামে আজ দেশের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে। আমরা সেই প্রবাসীদের ভোটাধিকার এবং নীতিনির্ধারণে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চাই।
বিচার সংস্কার এবং নতুন সংবিধান প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, আগামী ৩ জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ হবে। জুলাইয়ের চেতনাধারী সবাইকে সেখানে থাকতে হবে।
এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারি, যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. জায়েদুর রহমান, অর্পিতা শ্যামা দেব, যুগ্ম আহ্বায়ক এহতেশাম হক ও আবু বাকের মজুমদার প্রমুখ।
অনুষ্ঠান বিকাল ৫টা থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ৩টা থেকে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেন লোকজন। একপর্যায়ে কানায় কানায় ভর্তি হয়ে উঠে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ। আশপাশ রাস্তাজুড়ে লোকজন দাঁড়িয়ে এনসিপি নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা শুনেন। এসময় চৌহট্টা পয়েন্ট দিয়ে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
এনসিপির অনুষ্ঠানে আসা কয়েকজন তরুণ বলেন- যারা স্বৈশাসকের হাত থেকে এ দেশকে মুক্ত করেছে তাদের একনজর দেখার জন্য এখানে আসা। আমাদের প্রত্যাশা- নাহিদ-সারজিস-হাসনাতদের হাত ধরেই একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠুক।
অনুষ্ঠানে আসা আরও কয়েকজন বললেন- আজকের (শুক্রবার) সমাবেশে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটেছে। এনসিপির অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বেশ সংখ্যক মাদরাসাছাত্ররাও। ফলে এনসিপির প্রথম কর্মসূচি সিলেটে সফল। একরকম চমকই দেখিয়েছে দলটি সিলেটে।