কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলে প্রায় ৩০ কোটি বই ছাপতে হবে সরকারকে। প্রাথমিকের বই ছাপার বিষয়টি সরকার অনুমোদন দিলেও মাধ্যমিকে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সংশোধিত বই এবং পুরোনো কারিকুলাম নিয়ে আগেভাগেই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কাজ শুরু করলেও অনিশ্চয়তা পিছু ছাড়ছে না। মাধ্যমিকের বেশ কয়েকটি লটের দরপত্র নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় শেষ পর্যায়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠিয়েছিল ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি। ফের ২৪ কোটি বই ছাপার বিষয়টি | অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় কমিটিতে উঠছে আজ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, আজ যদি ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির ৬০০ কোটি টাকার পাঠ্যবইয়ের দরপত্র অনুমোদন না হয়, তাহলে এনসিটিবিকে নতুন করে দরপত্র আহ্বান করতে হবে। ফলে বছরের প্রথম দিন সব শ্রেণির শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছানো অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। ছাপাখানা মালিকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতি ফর্মায় (১৬ পৃষ্ঠা) অন্তত ৩০ পয়সা বাড়িয়ে দিতে।
এনসিটিবি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, যদি দরপত্র বাতিল করে নতুন করে দরপত্র চাওয়া হয় তাহলে বই ছাপতে সমস্যা হবে বলে জানিয়েছেন ছাপাখানার মালিকরা। দরপত্র বাতিল হলে পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ পিছিয়ে যাবে। চলতি বছরের মতো আগামী বছরেও ফেব্রুয়ারি-মার্চে শিক্ষার্থীদের হাতে উঠবে নতুন বই। কম সময় বেঁধে দেওয়ার অজুহাতে ছাপাখানা মালিকরাও অধিক লাভ করতে নিম্নমানের বই সরবরাহ করতে পারে।
বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, রিটেন্ডার (পুনঃদরপত্র) হলে সময় বেশি লাগবে। এক্ষেত্রে অনেক কাজ আগেই শেষ করা থাকে বলে দ্রুতও হয়। তবে এক্ষেত্রে সরকারের সদিচ্ছা থাকতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা না থাকলে দ্রুত হবে। তা না হলে বই ছাপাতে দেরি হবে। কিন্তু এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ফাইলবন্দি না করে কম সময়ে কার্যকর ভূমিকা শিক্ষা উপদেষ্টাকেই নিতে হবে।
তিনি আরো বলেন, অনিয়ম বোধে প্রিন্টার্সরা যেন বেশি সুযোগ পায় সে কারণে এবার লট বাড়ানো হয়েছে। ফলে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান এবার কাজ পেয়েছে। দরপত্র স্থগিত করা হলে বই ছাপানোর কাজ আড়াই মাস পিছিয়ে যাবে। এতে নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীর কাছে বই তুলে দেওয়া সম্ভব নয়। আবার কাগজের দামও বৃদ্ধি পাবে।
জানা গেছে, এর আগে গত মঙ্গলবার ২০২৬ সালের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির সব ধরনের দরপত্র অনুমোদনের সুপারিশ সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির ৩২তম সভায় অনুমোদন না করেই স্থগিত হয়। ষষ্ঠ শ্রেণির ৯৭টি দরপত্রে মোট চার কোটি ৩২ লাখ বইয়ের প্রাক্কলিত ব্যয় ৮০ কোটি চার লাখ টাকা। সপ্তম শ্রেণির ৯৪টি দরপত্রে মোট তিন কোটি ৯০ লাখ বইয়ের প্রাক্কলিত ব্যয় ২০০ কোটি ২০ লাখ টাকা। আর অষ্টম শ্রেণির ৮৯টি দরপত্রের তিন কোটি ৬৬ লাখ বইয়ের প্রাক্কলিত ব্যয় ২২৩ কোটি ১২ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, পাঠ্যবই ছাপার কাজের জন্য ব্যবসায়ীরা প্রথমে দরপত্রে অংশ নেন। যিনি সর্বনিম্ন দরদাতা হন তার দরপত্র মূল্যায়ন করে এনসিটিবি। যাচাই-বাছাই শেষে সেটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের ক্রয় কমিটির অনুমোদনের পর সেটি যায় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে। সেখান থেকে প্রয়োজন হয় সম্মতির। এরপর ব্যবসায়ীদের নোটিফিকেশন অ্যাওয়ার্ড (নোয়া) দেওয়া হয়। নোয়া পাওয়ার পর এনসিটিবির সঙ্গে চুক্তি করতে হয়। চুক্তির জন্য ২৮ দিন সময় পান তারা।
পিপিআরের শর্ত অনুযায়ী চুক্তির পর ৪০ দিন সময় পান মুদ্রণ ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যেই বই ছেপে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেন। কিন্তু এবার মাধ্যমিকের তিন শ্রেণির কাজ ক্রয় কমিটিতেই আটকে দেওয়া হয়েছে।
এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্য পুস্তক উইং) অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অবগত রয়েছে। সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে। বই সংগ্রহের বিষয়টি দ্রুত অনুমোদন প্রয়োজন। যদি আমাদের পুনঃদরপত্র আহ্বান করতে হয় তাহলে সময় বেশি লাগবে। পাশাপাশি মানও খারাপ হতে পারে।
(মূল রিপোর্ট : বাংলাদেশের খবর)
.png) 
                     
                     
                     
                         
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    