কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
সিলেট সিটি করপোরেশনের দুই মেয়াদের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচনি ইশতেহারের মধ্যে একটি ছিলো- মহানগরের সড়ক ও ফুটপাত হকার বা দখলমুক্ত করা। কিন্তু তিনি পারেননি। দফায় দফায় উদ্যোগ নিয়েও হয়েছেন ‘বিফল’। পারেননি অপসারিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও। এ ক্ষেত্রে এই দুই মেয়রের অভিযোগের তির ছিলো ট্রাফিক পুলিশের প্রতি। টাকা নিয়ে ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্রব্যবসায়ীদের (হকার) রাস্তা ও ফুটপাতে বসতে দেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কতিপয় সদস্য। এতে জড়িত রয়েছেন কিছুসংখ্যক অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাও। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়েছে।
এই অবস্থায় নগরবাসী যখন আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন- হঠাৎ তখন ধুমকেতুর মতো আশার আলো হয়ে উদয় হলেন নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. সারওয়ার আলম। আসলেন, ঘোষণা দিলেন, শুরু করে দিলেন কাজও।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) জেলা প্রশাসক সিলেট মহানগরের রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। সঙ্গে রেখেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের দুই মেয়াদের প্রশংসিত মেয়র, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরীকে।
শনিবার দুপুরে সিলেট নগরভবনের পেছনের লালদিঘীরপাড় মাঠ পরিদর্শনে যান জেলা প্রশাসক ও সাবেক মেয়র। এসময় সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মাঠে গিয়ে তারা দেখেন- গত দুই মেয়রের মেয়াদে ওই মাঠে কয়েক দফায় ক্ষুদ্রব্যবসায়ীদের জন্য তৈরি করে দেওয়া শেডগুলো ঠিক নেই। কোনো জায়গায় নিজেদের মতো ভিটা উঁচু করে দখল করে নিয়েছেন কেউ, আবার কোনো কোনো জায়গায় স্থায়ীভাবে দখল করে অন্যকে বসতে দিচ্ছেন না কোনো হকার। এছাড়া বেশিরভাগ হকার মাঠেই নেই, আছেন মহানগরের ব্যস্ততম সব সড়ক ও ফুটপাত দখল করে। মাঠ পরিদর্শন শেষে হকারদের ১ সপ্তাহের সময় বেঁধে দেন জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম।
এ বিষয়ে শনিবার সন্ধ্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক কওমি কণ্ঠ-কে বলেন- ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্রব্যবসায়ী বা হকারদের এক সপ্তাহ সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে সবাইকে মহানগরের সব রাস্তা ও ফুটপাত ছেড়ে দিতে হবে। পাশাপাশি একই সময়ের মধ্যে লালদিঘীরপাড় মাঠে আগের নির্দেশনা ও স্থাপিত শেড অনুযায়ী বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী দোকানকোটা তৈরি করে পণ্যসামগ্রী নিয়ে বসে ব্যবসা করতে হবে। এ বিষয়ে সহযোগিতার করছে সিটি করপোরেশন। ভিটা এক ফুটের বেশি উঁচু করা যাবে না। এছাড়া এক লাইনে সবজি, এক লাইনে মাছ-শুটকি, এক লাইনে কাপড়, এক লাইনে জুতো- এভাবে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে বসতে হবে। নির্দেশনা অমান্য করলে এবার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন- কাজ চলমান অবস্থায় এই এক সপ্তাহ হকারদের কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। তারা ফুটপাতে বসতে পারবেন, তবে রাস্তায় দোকান বসাতে পারবেন না।
এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন- এই মাঠে হকারদের ব্যবসার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের চাঁদাবাজির খবর পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নিরীহ হকারদের পাশে রয়েছে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন।
এদিকে, দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে মতিবিনিময়কালে জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম ঘোষণা দিয়েছিলেন- সিলেটের ঐতিহ্যের স্মারক কিনব্রিজ থেকে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) হকারদের পুরোপুরি উচ্ছেদ করবেন। কথা অনুযায়ী গতকাল দুপুরে অভিযান চালিয়ে কিনব্রিজটি হকারমুক্ত করা হয়। এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক নিজে। সঙ্গে ছিলেন সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও।
সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে কিনব্রিজ দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচলও বন্ধ করে দিবেন বলেছিলেন জেলা প্রশাসক। তবে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন দক্ষিণ সুরমার সকল ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দাবির প্রেক্ষিতে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন ডিসি।
শনিবার অভিযান শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন- আর কখনোই ঐতিহ্যবাহী এ সেতুতে হকার বসতে দেওয়া হবে না।
সিলেট মহানগরের রাস্তা ও ফুটপাত হকাররা দখল করে নেওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসী ও পথচারীদের। তালতলা, বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার ও আম্বরখানাসহ গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যস্ততম সব সড়কে হকারদের কারণেই প্রায় সবসময় যানজট লেগে থাকে। এবার যদি নতুন জেলা প্রশাসকের তৎপরতায় সিলেটের রাস্তা ও ফুটপাত হকারমুক্ত হয়, তবে আক্ষরিত অর্থেই প্রশংসায় ভাসবেন ডিসি মো. সারোয়ার আলম।