সিলেটে পরিবেশের দুই মামলা, বিএনপি নেতাসহ আসামি ১৬

কওম কণ্ঠ রিপোর্টার :

সিলেটের কুমারগাঁও মৌজায় ব্যক্তিমালিকানাধীন দুটি টিলা কাটার অভিযোগে প্রবাসী বিএনপি নেতা আব্দুল হকসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

সোম ও মঙ্গলবার (১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর) সিলেটের জালালাবাদ ও এয়ারপোর্ট থানায় মামলা দুটি করেন পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট জেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক মামুনুর রশিদ।

এয়ারপোর্ট থানায় দায়েরকৃত মামলার এজাহারে উল্লেখ- সিলেট মহানগরের ৩৭ নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত টিলারগাঁও, আখালিয়া এলাকার কুমারগাঁও মৌজার ৭০ নং জেলস্থিত ১১৯২ নং খতিয়ানের ২১০৮ নং দাগের অন্তর্গত দৃশ্যমান ও রেকর্ডীয় টিলা রকম ভূমি কর্তন সংক্রান্ত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের অফিস সহায়ক মো: আবু সুফিয়ান টিলা কর্তনের স্থান সরেজমিন পরিদর্শন করেন। এসময় টিলা রকম ভূমি কর্তন ও মাটি অপসারণের প্রমাণ পেয়ে গত ১৫ জুলাই পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয় কর্তৃক মহানগরের জিন্দাবাজার নিউ হক ম্যানশনের আশফাক আহমেদ, বিশ্বনাথ উপজেলার মীরেরচর গ্রামের প্রবাসী আব্দুল হক, মোগলগাঁও লামাপাড়া এলাকার আলাউদ্দিন হাসু, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পুটামারা গ্রামের সুহেল এবং মহানগরের ৩৭ নং ওয়ার্ড বড়গুল এলাকার সিদ্দিক আলীর বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট নোটিশ জারি করা হয়।

বিষয়টি নিয়ে ২৩ জুলাই অনুষ্ঠিত শুনানী শেষে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়েরের আদেশ হয়। এর প্রেক্ষিতে গত ২১ আগস্ট সহকারী কমিশনার (ভূমি), মহানগর রাজস্ব সার্কেল থেকে ঘটনাস্থলের সত্যায়িত রেকর্ড প্রাপ্তিসাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও তিন থেকে চার জনকে আসামী করা হয়েছে।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়- বর্ণিত টিলার মালিক প্রবাসী আব্দুল হকের নির্দেশনায় কেয়ারটেকার আশফাক আহমেদ ও অন্য বিবাদীরা পরস্পর যোগসাজসে টিলার মাটি কর্তনপূর্বক অপসারণ করেছেন। বিবাদীরা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি গ্রহণ ব্যতিরেকে আনুমানিক ১৩৫ ফুট দৈর্ঘ্য, ৭৫ ফুট প্রস্থ, গড় উচ্চতা ১৩ ফুট এবং ১,৩১,৬২৫ ঘনফুট দৃশ্যমান টিলা রকম ভূমি কর্তন করে টিলার মাটি অপসারণ করেছেন, যা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ধারা ৬ (খ) অনুযায়ী বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

টিলাটির মালিক এজাহারে উল্লেখিত ২নং আসামি যুক্তরাজ্য প্রবাসী পোর্টসমাউত সিটি বিএনপির সাবেক আহবায়ক আব্দুল হক (শাহ এম এ হক) বলে জানা গেছে।

অপরদিকে, জালালাবাদ থানায় দায়েরকৃত মামলার বাদী সিলেট মহানগরের হাওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও টিলার মালিক মালিক উজ্জামান। তার মামলায় তারাপুর চা- বাগানের স্টার টি স্টেটের ব্যবস্থাপক ও প্রধান সমন্বয়ক রিংকু চক্রবর্তী, মোহাম্মাদীয়া এলাকার জাবেদ, খালেদ ও জাহাঙ্গীর, দুসকি এলাকার আমির হামজা ও সেলিম, মোহাম্মাদীয়া এলাকার বিল্লাল, দুসকি এলাকার কয়েছ আহমেদ এবং মোহাম্মাদীয়া এলাকার জুবায়ের আহমেদ ও রাজু আহমেদ সহ আরও ছয় থেকে সাতজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে- ৮ সেপ্টেম্বর জালালাবাদ থানার সদর উপজেলার কুমারগাঁও মৌজার ৪৬৬ নম্বর খতিয়ানের ২১৯২ নম্বর দাগের অন্তর্গত দৃশ্যমান ও রেকর্ডীয় টিলা কাটার স্থান সিলেট মহানগর রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ আলীম উল্লাহ খানের নেতৃত্বে পরিবেশ অধিদপ্তরের টিম সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে টিলা কাটা এবং টিলার মাটি অপসারণের প্রমাণ মেলে। তবে পরিদর্শনকালে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি।

টিলাটি মামলার প্রধান আসামি মালিক উজ্জামানের রেকর্ডীয় ভূমি বলে উল্লেখ করা হয়।

এজাহারে আরও বলা হয়, আসামিরা পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়ে আনুমানিক ২৩৫ ফুট দৈর্ঘ্য, ১১৫ ফুট গ্রন্থ, ৪৩ ফুট গড় উচ্চতা এবং ১১ লাখ ৬২ হাজার ৭৫ ঘনফুট দৃশ্যমান টিলারকম ভূমি কেটে মাটি অপসারণ করেছেন। যা বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ধারা ৬ (খ) অনুযায়ী বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।