কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
আগের বিয়ের কথা গোপন ও বিয়ের পর পরকীয়ায় জড়োনো কারণে স্ত্রীকে খুন করেছেন এক প্রবাসী স্বামী। ঘটনার ৩ দিন পর একটি মেমোরি কার্ডের সূত্র ধরে ঘাতক স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) সিলেটের এয়ারপোর্ট থানার একটি টিম সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার থানাধীন রাঙ্গারচর গ্রামে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ফারুক আহমদকে গ্রেফতার করেছে। তিনি সুনামগঞ্জ সদর থানার রাঙ্গারচর গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে ও ওমান প্রবাসী।
স্ত্রীকে খুনের বিষয়ে তিনি শনিবার (১৮ অক্টোবর) সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (২য়) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে তাকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান- গত ১৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় সিলেট এয়ারপোর্ট থানাধীন লাক্কাতুরা চা বাগানের ভাইগণ নামক নির্জন টিলার ঝোপঝাড় থেকে এক অজ্ঞাতনামা নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মৃতদেহটি আংশিক পচনধরা অবস্থায় ছিল। প্রাথমিকভাবে ওই নারীর বয়স প্রায় ২৫ বছর অনুমান করা হয়। পরনে ছিল নতুন লাল রঙের শাড়ি, হালকা গোলাপি রঙের বোরকা। লাশের গলায় হলুদ রঙের ওড়না পেঁচানো ছিল। মৃতদেহের পাশেই পাওয়া যায় একটি লেডিস হ্যান্ডব্যাগ। ভেতরে পাওয়া যায় কয়েকটি জামাকাপড় এবং একটি মেমোরি কার্ড।
পরবর্তীতে পিবিআই ও সিআইডি লাশের আঙ্গুলের ছাপ সংগ্রহপূর্বক পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করলেও আঙ্গুলে পচন ধরায় পরিচয় নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। পরে মেমোরি কার্ডে থাকা রেকর্ডকৃত মোবাইলের কথোপকথনের অডিও তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং সংশ্লিষ্ট নম্বরের সিডিআর সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে পুলিশ মৃত নারীর পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।
নিহত নারী হলেন- সুনামগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার থানার মওলারপাড় গ্রামের মৃত মাহতাব মিয়ার মেয়ে রাবেয়া বেগম।
পরে তথ্যপ্রযুক্তি ও বিভিন্ন মাধ্যমে অনুসন্ধান চালিয়ে পুলিশের সন্দেহ হয় নিহতের স্বামী ফারুক আহমেদের প্রতি এবং শুক্রবার তাকে দোয়ারাবাজার থানাধীন রাঙ্গারচর গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতারের পর প্রাথমিকভাবে ফারুক হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করলেও জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করলে তিনি হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেন।
ফারুক পুলিশকে জানান- স্ত্রী রাবেয়া বেগমের পূর্বের বিয়ে গোপন করা এবং তিনি ওমানে অবস্থানকালে অন্য পুরুষের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়া নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মনোমালিন্য চলছিল। তিনি সম্প্রতি দেশে ফিরেন এবং স্ত্রীর প্রতি ক্ষোভ থেকে গত ১৩ অক্টোবর বেড়ানের কথা বলে স্ত্রীকে নিয়ে হযরত শাহজালাল (রহঃ)-এর মাজারে আসেন। সেখানে জিয়ারত শেষে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের উত্তর-পূর্ব দিকের নির্জন টিলায় নিয়ে যান স্ত্রীকে। সেখানে বিকেল চারটার দিকে তার ফুফাতো ভাই আলামিনের সহায়তায় স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে গলা টিপে হত্যা করেন।
ঘটনার পর এয়ারপোর্ট থানায় ফারুক ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে রাবেয়ার চাচা রিপন মিয়া মামলা দায়ের করেছেন।
এ হত্যা মামলার অপর আসামি আলামিনকেও গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।