সিলেটে বহিষ্কৃত যুবদল নেতা বললেন ‘ষড়যন্ত্র’

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বহিষ্কৃত যুবদল নেতা এনামুল হক। তিনি সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।  

রবিবার (১৯ অক্টোবর) যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়া স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্ততে তাকে বহিষ্কারের তথ্য নিশ্চিত করা হয়। 

দল বলছে- দলীয় নীতি ও আদর্শ পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হককে প্রাথমিক সদস্য পদসহ দল থেকে বহিষ্কার করা হলো। 

তবে এ বিষয়ে মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বেলা আড়াইটায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এনামুল হক বলেছেন- যদিও সম্প্রতি একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনার প্রেক্ষিতে সিলেট জেলা যুবদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে আমাকে আমার দল বহিস্কার করেছে। কিন্তু- আপনারা জানেন- গত ১৪ অক্টোবর হবিগন্জ যাওয়ার পথে নবিগন্জ বিজনা ব্রিজ নামক স্থানে দু' জন লোক আমাদেরসহ গাড়ির ভিডিও ধারণ করছিলেন। আমার গাড়ির চালক এর কারণ এবং তাদের পরিচয় জানতে চাইলে দু' জনের মধ্যে উচ্চবাচ্য হয়। তারা নিজেদের মুখে সাংবাদিক বললেও তাদের গলায় কোনো কার্ড বা ফিতা ছিলনা । পরে জানতে পারি তারা ফেসবুক অ্যাক্টিভিস্ট। যাইহোক উচ্চবাচ্য বিনিময়ের এক পর্যায়ে আমার চালক তাদের একজনকে ধাক্কা দিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হচ্ছে দেখে আমি উভয়কে নিবৃত করার চেষ্টা করি। কিন্তু খুব দ্রুত ওই দু' জন লোক তাদের এলাকার আরও প্রচুর মানুষ জড়ো করে। এমনকি তারা আমার ড্রাইভারের উপরও চড়াও হয়। এক পর্যায়ে ওই এলাকার বিএনপির নেতৃবৃন্দসহ তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে। স্থানীয় মুরব্বিদের হস্তক্ষেপে আপোষে বিষয়টির মিমাংসা হয়ে যায়। সেখানে তারা দাবি হাজার টাকাসহ ৪টি মোবাইল হারিয়েছে, আমাকেই তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আমি মোট ১ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে আপোষে বিষয়টির মিমাংসা করি। সেখানে যে আপোষনামা স্বাক্ষরিত হয়েছে তার কপি সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে জমা দেওয়া আছে আপনারা দেখতে পারেন। আপোষনামা অনুযায়ী ১ লাখ ৭২ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পর তারা ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন যে, আমি সহযোগীতা করেছি এবং সন্তোষজনক নিষ্পত্তি হয়েছে। 

পরে আমিও শহরে ফিরে আসি এবং স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। তবে আশ্চর্যের ব্যাপার হলো এই যে, ঘটনা নিষ্পত্তির ৪/৫ দিন পর গত ১৯ অক্টোবর রবিবার দেখি একটি ফেসবুক পেইজে সেই ঘটনার ভিডিওটি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আরও আশ্চর্য ব্যাপার এই যে, ওই ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়ার মাত্র কয়েক ঘন্টা পর আমার দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি আমার প্রাথমিক সদস্য পদসহ আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছেন।

আমি আমার অভিভাবক নেতৃবৃন্দকে এজন্য মোটেও দোষ দিচ্ছিনা। বরং দলের ভেতরে থাকা বিশেষ কিছু মহল প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে বলে আমি মনে করি।

নইলে যেখানে ফাঁসির আসামীকেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়, একজন কর্মিকেও বহিষ্কার আদেশের আগে শোকজ করা হয়, সেখানে আমাকে কোনো প্রকার সুযোগ না দিয়েই সামান্য কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে এমন গুরুদণ্ড দেওয়া হতো না।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন- সারাটা জীবন জাতীয়তাবাদী রাজনীতির জন্য লড়াই করেছি। জাতীয়তাবাদী আদর্শের একজন সৈনিক হিসাবে বিগত ১৭ বছরের স্বৈরাচারী শাসনামলে কেবলমাত্র শহীদ জিয়ার আদর্শ বুকে লালনের কারণে ৫৩টি মামলার আসামী হিসাবে অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হয়েছি। এক দুইবার নয়, অন্তত ১০ বার কারাবরণ করেছি। এমনকি নিজের বাবা আমার গোটা ভাইয়েরাও বিভিন্ন মামলার আসামী হয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন। পরিবারটি জাতীয়তাবাদী আদর্শের রাজনীতির সাথে জড়িত। আমাদের এত ত্যাগ সত্তেও আমার দলের শ্রদ্ধেয় নেতৃবৃন্দ যা ভালো মনে করেছেন তাই করেছেন। তাদের সিদ্ধান্তকে সম্মাণ জানিয়ে আমি বিনয়ের সাথে তাদের প্রতি আপনাদের মাধ্যমে এই আহ্বান জানাই, পুরো ঘটনা প্রয়োজনে আপনারা গোপনে দলের পক্ষ থেকে তদন্ত করে দেখুন। যদি সত্যি আমি দোষী হই আমার কিছু বলার নেই। আর নির্দোষ হলে আমার বহিষ্কার আদেশ পূণ:বিবেচনা করার বিশেষ অনুরোধ রইলো।