কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
উন্নয়নে বৈষম্যের কারণে সিলেটবাসীকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলনের অংশ হিসেবে রবিবার (২ নভেম্বর) বেলা ১১টা থেকে জনতাকে নিয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছিলেন সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। পরে বিকাল ৪টার দিকে সিলেট জেলা প্রশাসকের দেওয়া আশ্বাসের ভিত্তিতে কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা দেন তিনি।
রবিবার বেলা ১১টা থেকে মহানগরের সিটি পয়েন্ট এলাকায় এই অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচির শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন- সিলেটের সঙ্গে উন্নয়ন নিয়ে চরম বৈষম্য করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে আজ আমরা রাজপথ দখলে নিলাম। সরকারের যৌক্তিক জবাব না পাওয়া পর্যন্তআমরা রাজপথ ছাড়বো না।
তাঁর বক্তব্যের বিকাল পর্যন্ত চলে বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্টজনের বক্তব্য। সিলেটের আলেম-সমাজের নেতারাও বক্তব্য রাখেন। এছাড়া গানে গানে সরকারের সিলেটবিদ্বেষী আচরণের প্রতিবাদ করেন বিশিষ্ট চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জহিরুল ইসলাম অচিনপুরী।
অবস্থান কর্মসূচি পালনকালে জোহরের নামাজ আন্দোলনকারীরা সিটি পয়েন্টেই আদায় করেন।
এদিকে, বিকাল ৪টার দিকে সিলেট জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম তাঁর কার্যালয় থেকে গাড়ি নিয়ে বের হতে গেলে আন্দোলনকারীরা গাড়িটি আটকে দেন। এসময় ডিসি গাড়ি থেকে নেমে কর্মসূচিস্থলে গিয়ে সিলেটবাসীর দাবিগুলো নিয়ে দ্রুত সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কথা বলে সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন।
এসময় আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী আরিফুল হক চৌধুরী বলেন- নতুন জেলা প্রশাসকের প্রতি সিলেটবাসীর আস্থা রয়েছে। আমরা আজ তাঁর আশ্বাসে অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করছি।
এর আগে গণঅবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্যকালে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন- ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল সিটি করপোরেশনকে ২৪০০ কোটি টাকা, চট্টগ্রামকে ৩১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও সিলেটের ১৯০০ কোটি টাকার প্রকল্প ফিরিয়ে দেওয়া হয়। প্রকল্প কাটছাট করতে বলা হয়। সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে বসে থাকা সিলেটবিদ্বেষীদের কারণে বারবার সিলেটবাসী বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন- সিলেটের বিশেষ ট্রেন চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়, এটি সিলেটবাসীর প্রতি বিদ্বেষ ও বিদ্রূপ ছাড়া কিছু নয়। চলতি মাসে সিলেটের উন্নয়নে ন্যায্য বরাদ্দ না হলে আরও তিন বছর সিলেটবাসীকে উপেক্ষিত থাকতে হবে। কারণ- ডিসেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দেশে সব ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর নির্বাচিত সরকার এসে নীতি ঠিক করতে করতে তিন বছর চলে যাবে। তাই এখনই আমাদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে হবে সরকারকে। না হলে সিলেটবাসীকে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিতে বাধ্য হবো।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) রাতে কুমারপাড়াস্থ নিজ বাসভবনে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে এ কর্মসূচির ডাক দেন আরিফুল হক চৌধুরী। ওই সময় তিনি বলেন, সিলেটের উন্নয়ন বৈষম্য ও সরকারি প্রকল্পে অবহেলার প্রতিবাদেই এই অরাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছে। সিলেট অঞ্চলের ন্যায্য দাবি আদায়ে ‘সিলেট আন্দোলন’ নামে একটি সার্বজনীন প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হয়েছে। এতে বিএনপির নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, সাংবাদিক, ধর্মীয় ও পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা যুক্ত রয়েছেন।
এদিকে, রবিবারের কর্মসূচি সফলের লক্ষ্যে শনিবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মশাল ও সভা করেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। হযরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ এলাকা থেকে মশাল মিছিলটি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে অনুষ্ঠিত হয় সভা।