- গণ-অভ্যুত্থানে গু লি : বিস্ফোরক আইনে মামলা
কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
গত বছরের জুলাই-আগস্টে শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও বেশ মারমুখি ছিল পুলিশ। ছত্রভঙ্গ করতে আন্দোলনকারীদের দিকে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ করে তারা। ৫ আগস্ট বিকেল পর্যন্ত সিলেট বিভাগে পুলিশের গুলিতে মারা যান সাংবাদিক ও ছাত্রসহ প্রায় অর্ধশত লোক। এ কারণে পুলিশের প্রতি সিলেটের মানুষেরও ছিল তীব্র অসন্তোষ।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে আদালত ও থানায় হতে থাকে একের পর এক মামলা। এগুলোর বেশিভাগই হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে। আর এই বিস্ফোরক আইনে দায়েরকৃত দুটি মামলার আসামি পুলিশ কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) ট্রাফিক প্রধানের (উপ-কমিশনার) গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আগে তিনি ছিলেন এসএমপি’র ডিবি (গোয়েন্দা) শাখার প্রধান।
বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। পাশাপাশি এসএমপি কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে হতাশাও ব্যক্ত করেছেন তারা।
তবে এসএমপি কর্তৃপক্ষ বলছেন, ‘ওই কর্মকর্তাকে ৫ আগস্টের পর সিলেটেই রাখা হয়েছিল। এ কারণেই তাকে ট্রাফিক ডিসি’র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
৫ আগস্টের আগে এসএমপি’র ডিবি ডিসি ছিলেন তাহিয়াত আহমেদ চৌধুরী। দেশের পট পরিবর্তনের পর দায়েরকৃত দুটি মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয় তাকে। উভয় মামলাতেই ২ নম্বর আসামি তাহিয়াত। এর মধ্যে একটি ৪ আগস্টে সিলেট মহানগরের সোবাহনীঘাট এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে এবং অপরটি একই তারিখে মহানগরের বন্দরবাবাজারস্থ লালবাজার এলাকায় অভ্যুত্থানকারীদের হামলা ও নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে। এ দুই মামলার মধ্যে একটির বাদী হচ্ছেন সিলেট মহানগরের খারপাড়ার (বাহারপাড়া) বাসিন্দা মো. সাজন আহমদ সাজু (২৫) ও অপরটির বাদী সোনারপাড়ার (নবারুন) বাসিন্দা মো. জুবেল আহমদ স্বপন (৩০)। দুটিই বিস্ফোরক আইনে মামলা বলে জানা গেছে। তবে এ দুই মামলায় বর্তমানে জামিনে রয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা তাহিয়াত চৌধুরী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মামলা দায়েরের পর পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তা তাহিয়াত আহমেদ চৌধুরীকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাভুক্ত দক্ষিণ সুরমার আলমপুরস্থ ‘ডাম্পিং কেন্দ্রে’ ‘পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম)’ করে রাখা হয়। গত ৪ জানুয়ারি এসএমপি কমিশনার মো. রেজাউল করিম (পিপিএম- সেবা) স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে (তাহিয়াত) ট্রাফিক বিভাগের ডিসি পদে পদায়ন করা হয়।
এ বিষয়ে সিলেটের সচেতন মহলের বক্তব্য, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, হত্যা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় সিলেটে যে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে, তাদের প্রায় সবাইকে অন্যত্র সংযুক্ত বা ওএসডি করা হয়েছে। কিন্তু এসএমপি’র সাবেক ডিবি ডিসি তাহিয়াত আহমেদ চৌধুরীকে সিলেটেই রেখে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণের বিষয়টি হতাশাজনক। ‘বিষয়টি সিলেটবাসীর সঙ্গে তামাশার নামান্তর’- যোগ করেন তারা।
প্রশ্ন ছুঁড়ে তারা বলেন, ওই পুলিশ কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার বদলে কেন দেওয়া হলো ‘প্রাইজিং পোস্ট’?
সলমান আহমদ চৌধুরী নামের একজন সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিকেলে ফেসবুকে লিখেন, ‘সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক ডিবি প্রধান তাহিয়াত আহমেদ চৌধুরীকে ট্রাফিকের ডিসি হিসেবে পদায়ন করেছেন পুলিশ কমিশনার মহোদয়। সাবেক এই ডিবি কর্মকর্তা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় প্রকাশ্যে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণসহ গভীর রাতে বাসা-বাড়িতে তল্লাশি করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন। তার বিরুদ্ধে ২টি মামলা থাকলেও কোন অদৃশ্য শক্তির বিনিময়ে কমিশনার মহোদয় তাকে এসএমপিতে বহাল রাখছেন? মামলার আসামি হিসেবে নীরবে থাকা এই পুলিশ কর্মকর্তা কি আদৌ বল প্রয়োগ করে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারবেন?’
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক ফয়সাল হোসেন বলেন- বিষয়টি নিয়ে আমরা সমন্বয়করা আলোচনা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবো।
এসএমপি কমিশনার মো. রেজাউল করিম (পিপিএম- সেবা) বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার কিছু নেই। পুলিশ কর্মকর্তা তাহিয়াত আহমেদ চৌধুরী আগেও সিলেটে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তা যদি অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পান, তবে মন্ত্রণালয়ের অনুমতিসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’