বেলায়েত হুসাইন
‘এই তোরা সবাই জলদি ঘুম থেকে ওঠ। মাগরিবের আজান দিচ্ছে’- নাফিজের এমন ডাকে নাশাত, রোহান, ফাহাদ, তাওহীদ, তালহার ঘুম ভাঙল। টানা কয়েক দিন তীব্র দাবদাহের পর আজ ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য আজ ওদের গভীর ঘুম।
সদরঘাট সংলগ্ন একটি মেসে থাকে ওরা। চারজন পড়ে জগন্নাথ ইউনিভার্সিটিতে আর বাকি দুজন কাজী নজরুল ইসলাম কলেজে। প্রত্যেকের শ্রেণি, বিভাগ ও বয়স আলাদা হলেও একটি জায়গায় ওদের শেকড় অভিন্ন। ওরা সবাই দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বাসিন্দা। এজন্য একই মেসে থাকে।
এই ছয়জনের আরও একটি দিক থেকে মিল। ওদের সবার পরিবারই মোটামুটি ধর্মপ্রাণ। শৈশবে ওরা ধর্মীয় পরিবেশ পেয়েছে। এজন্য নামাজ-কালামসহ ইসলাম পরিপালনের ক্ষেত্রে ওরা বেশ আন্তরিক। আজ আসরের নামাজ ছুটে যাওয়ায় তাই ওরা বেশ চিন্তিত।
খাল-বিলে বর্ষার পানি সবেমাত্র কমতে শুরু করেছে। গ্রামাঞ্চলে ভোরের দিকে ঘাসের ওপর শিশির বিন্দুও চোখে পড়ছে। বোঝা যাচ্ছে- দরজায় কড়া নাড়ছে শীত। এমন মুহূর্তে দিনের বেলায় আমাদের দেশের আবহাওয়া একটু উষ্ণ থাকে, তাই বলে গত চার-পাঁচ দিন যে গরম পড়েছে, তা অসহ্য। সর্বশেষ কবে যে, এই মৌসুমে এমন গরম পড়েছিল, মনে করা যাচ্ছে না।
এমনই তীব্র দাবহাহের পর আজ স্বস্তির বৃষ্টি হয়েছে রাজধানীতে। তাই জোহরের পর দুপুরের খাবার শেষে নাফিজ-নাশাতরা আচ্ছা একটা ঘুম দেয়ার উদ্দেশ্যে বিছানায় যায়। এক ঘুমে মাগরিব। মানে সবাই আসরের নামাজ কাজা করে ফেলেছে।
ওদের মেসের অদূরেই মসজিদ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজান ওদের কানে আসে। বেশিরভাগ সময় জামাতে নামাজ আদায়ের চেষ্টা করে ওরা, কিন্তু আজ ওদের সবাই আসরের নামাজ মিস করল। এখন এটার কাজা ওরা কীভাবে আদায় করবে; জামাতে নাকি একাকী, কেরাত উচ্চস্বরে হবে নাকি নিচু আওয়াজে?- এই বিষয়গুলো নিয়ে ওরা ভাবছিল।
দ্রুত অজু করে মসজিদে মাগরিব পড়তে গেল ওরা। নামাজ শেষে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবু হুরাইরা কাসেমীকে ব্যাপারটি জানালো। ইমাম সাহেব বললেন, ‘কাজা নামাজ ছুটে গেলে একাকী পড়ার সুযোগ আছে। তবে একসাথে একাধিক ব্যক্তির নামাজ কাজা হয়ে গেলে জামাতের সাথেই তা আদায় করা উচিত।’
ইমাম সাহেব আরও বললেন, ‘আর কাজা নামাজ জামাতের সাথে আদায় করলে উচ্চস্বরে কিরাতবিশিষ্ট নামাজে ইমামকে উচ্চস্বরেই কিরাত পড়তে হবে। হাদিস শরিফে এসেছে যে, রাসুল (সা.) সাহাবাদের নিয়ে সূর্যোদয়ের পর ফজরের কাজা আদায় করেছেন এবং তাতে উচ্চস্বরে কিরাত পড়েছেন। (কিতাবুল আছার-ইমাম মুহাম্মাদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হাদিস : ১৬৮)’
তবে কাজা নামাজের জামাত করলে তা নির্জন স্থানে করা উচিত। যেন অন্য লোকজন নামাজ কাজা হওয়ার বিষয়টি জানতে না পারে বলেও জানালেন ওই ইমাম সাহেব। (ফাতহুল কাদির : ১/১৮৫)
ইমাম সাহেবের এমন উত্তরে ওরা খুব খুশি হলো। তিনি তখন তাদের বললেন, ‘তোমরা অনলাইনে মুফতি নাজিফ ইসলাম ত্বহার ইসলামি আলোচনা ও প্রশ্নোত্তরের ভিডিওগুলো দেখার চেষ্টা করো। তিনি ফরিদাবাদ মাদ্রাসাসহ দেশের স্বনামধন্য মাদ্রাসাগুলোতে পড়েছেন। তার ইলমের গভীরতা অনেক। আশা করি তার থেকে তোমরা দ্বীনি বিষয়ে উপকৃত হতে পারবে ইনশাআল্লাহ।’ ইমাম সাহেবকে শুকরিয়া জানিয়ে নাফিজ-নাশাতরা মেসে ফিরে আসলো এবং সংকল্প করলো- তারা চেষ্টা করবে আর যাতে তাদের থেকে এভাবে নামাজ ছুটে না যায়।