আবারও বিতর্কের জন্ম দিলেন আজহারি

  • এবার ক্ষুব্ধ সিলেটবাসী, ক্ষমা চওয়ার আহ্বান

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছেই না ইসলামিক বক্তা ড. মিজানুর রহমান আজহারি। এবার সিলেটবাসীকে কাটক্ষ করে বক্তব্য দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। সিলেটের আলেম ও সাংবাদিকসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ তাঁর উপর ফুঁসছেন ক্ষোভে।

অপরদিকে, আজহারির অনেক অনুসারী তাঁর পক্ষালম্বন করেও ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম ফেসবুকে করছেন মন্তব্য।

তবে দেখা গেছে- সমালোচনাকারীদের পাল্লাই ভারি। 

সিলেট এমসি কলেজ মাঠে ৩ দিনব্যাপী তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের আয়োজন করেছিলো আনজুমানে খেদমতে কুরআন নামের সংগঠন। ৯ থেকে ১১ জানুয়ারি ছিলো এ মাহফিল। শেষ দিন (১১ জানুয়ারি) মাহফিলের প্রধান আকর্ষণ ছিলেন বিতর্কিত ওয়াজ করে ৪ বছর ‘নির্বাসনে থাকা’ মিজানুর রহমান আজহারি।

মাহফিলে আজহারির সময়সূচি ছিলো রাত ৮টা ১১ মিনিট থেকে রাত ১০টা ১০মিনিট পর্যন্ত। সময়মতো মঞ্চেও উঠেছিলেন তিনি। বয়ানের এক পর্যায়ে প্যান্ডেলে বসা শ্রোতারা ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন এবং বোতল ছুড়ে মারেন সামন থেকে পেছনে- পেছন থেকে সামনে। এসময় তিনি উপস্থিত শ্রোতাদের শান্ত থাকার জন্য বলেন। কিন্তু শ্রোতারা শান্ত হওয়ার বদলে কয়েকটি স্থানে হট্টগোল শুরু করেন। এসময় আজহারি বিশৃঙ্খলাকারীদের ‘আবু-জাহেল-উৎবা-শাইবা’র উত্তরসূরি বলেও আখ্যা দেন। এরপরও কতিপয় শ্রোতা শান্ত না হলে ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিটের মাথায় ‘সিলেট- ওকে আমি বিদায় নেই, যা তোমরা দেখালা ইটস গুড এনাফ ফোর টু-নাইট। সিলেট- আজকে কী করছো এটা মনে থাকবে’ বলে সংক্ষিপ্ত মুনাজাত করে মঞ্চ ছেড়ে চলে যান। 

এর আগে তিনি বলেন- ‘এটা পরিকল্পিত কিছু হতে পারে বলে আমাদের ধারণা করতে হবে। লাখ লাখ মানুষ বসে আছে তোমারা একটু শান্ত হবা না?’

মিজানুর রহমান আজহারির এ কাণ্ডে বিস্মিত হয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে এ ঘটনা ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে এবং সচেতন সিলেটবাসী ক্ষুব্ধ হয়েছেন। 
শনিবার (১১ জানুয়ারি) রাত থেকেই এ নিয়ে ফেসবুকে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। এখনো সেটি অব্যাহত রয়েছে।

সিলেটের অনেকেই মিজানুর রহমান আজহারিকে ক্ষমা চাওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন। বেশিরভাগের মন্তব্য- সিলেটের মানুষের প্রতি আজহারির শব্দগুলো ছিলো খুবই অপমানজনক ও তাচ্ছিল্যের।

ইসলামিক স্টাডি ফোরাম’র কোঅর্ডিনেটর (বাংলাদেশ) হাসানুল বান্না তাঁর ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন-
‘‘সিলেট বাসীর কাছে অনতিবিলম্বে ক্ষমা চান মিস্টার মিজান সাহেব-
"ইনভার্টেড গুলি সব মিজানুর রহমানের বক্তৃতা থেকে সংগৃহীত" -বাকীটুকু লেখকের একান্ত নিজস্ব অভিমত :
مَا كَانَ الرِّفْقُ فِي شَيْءٍ إِلَّا زَانَهُ وَلَا نُزِعَ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا شَانَهُ
জাস্ট একটা সম্পূর্ণ আবেগহীন ফেইস। একটা এত সুন্দর মাহফিলে বক্তার কোন আবেগ নেই, সত্যি ভাবাই যায় না!
বললেন, "আমি এসে জানতে পারলাম, আন্জুমানে খেদমতে কোরআন নাকি ৩৪ বছর ধরে এরকম মাহফিল করে যাচ্ছে" -ভাবেন, কতটুকু অপ্রস্তুত এবং অসম্মানজনক উচ্চারণ; আমাদের প্রিয় এ দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের জন্যে।
এরপর বললেন- "এবং আপামর তৌহিদী জনতা" -লক্ষ লক্ষ কুরআন প্রেমিক জনতাকে শুধুমাএ একটা 'এবং' দিয়ে সম্ভোধন করলেন।
এরপর আমাদের সম্মানিত উস্তায ফুলতলী (রহ.), গহরপুরী (রহ.), কৌড়িয়া (রহ.) ছাড়া উনাদের সমতুল্য আর কারো নাম নিলেন না! অর্থাৎ আগেও বলেছি, 'বক্তা সম্পুর্ন অপ্রস্তুত।
এবার অভিনয় শুরু। নষ্ট শাকিব খানের মতো বার বার হাত নাড়ানো, "এই যে হাত নাড়ালাম, দেখেছি দেখেছি" -মানে আমরা সবাই পুতুল আর উনী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আস্তাগফিরুল্লাহ।
এরপর আইইএলটিএস ক্লাস শুরু। বললেন, "Its my pleasure" -বাহ: তাফসির মাহফিলের জন্যে মিস্টার মিজানে সাহেবের কি সুন্দর সব শব্দ চয়ন!
বললেন, "একেবারে শান্ত হয়ে যান" -লক্ষ লক্ষ লোককে তিনি এভাবে ধমকিয়ে শান্ত করে ফেলবেন!
বাবার বয়সী মানুষটাকে বলতেছেন, "এই যে সাদাটুপি, যদি পারেন একটু বসেন" -অর্থাৎ তাফসিরের মত এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিয়ে তিনি কনসেন্ট্রেশন করছেন অন্যদিকে। অথচ পুরো স্টেজে মডারেটরের অভাব নেই আমাদের। খুব সহজে অন্য কাউকে দিয়ে এ কাজগুলি কি করা যেত না? পুরো প্রোগ্রামটা ঠিক এভাবেই তিনি ভন্ডুল করেছেন উনার অহংকার আর রাগ দিয়ে! আজকের সবকিছুর জন্যে একমাএ এই বাংলিশ মিস্টার মিজানই দায়ী।
আমাদের অত্যন্ত প্রিয় সাদিকুর রহমান আজহারী কিংবা আব্দুল্লাহ আল আমিনের বক্তব্যের ধারে-কাছেও যেতে পারবেন না আমাদের মিজান সাহেব।
এরপর আবারো সিলেট বাসীকে ধমক, "এই সিলেট, এদিকে তাকাও"
বললেন, "আমি একজন আলেম, মুফাচ্ছের" কোন তাফসিরে বক্তা এভাবে নিজেকে উপস্থাপন করে, এটাও খুব দুর্লভ।
আবারও ক্লাস শুরু, "Im a citizen of Bangladesh"
বললেন, "আজ এ দু'টি আয়াতকে চুজ করেছি" -মি. মিজান স্যার, 'চুজ' শব্দটি আপনার ওয়াইফের শাড়ি কেনার বেলায় বেশি করে ব্যবহার করবেন। ফাইজলামি করতে আসেন আপনি তাফসিরে।
বললেন, "রক্ত দিয়েছে আবু সাঈদ" -ভবিষ্যতে 'দিয়েছেন' বলবেন। যার কারণে আজকে সিলেটে আসতে পেরেছেন, তাকে সম্মান দেয়া শিখুন।
যথারীতি আইইএলটিএস ক্লাস, "I like it, I love it"
"কোন excuse দেয়া যাবে না; ওটা নাই, এটা নাই; এরকম কোন কথা হবে না" -মি. মিজান, নিজের খেয়ে সবাই মাহফিলে গিয়েছে; কেন, excuse দেবে না কেন?
"beyondless, boundless, bottomless" -আমি সিউর, বটমলেস এর অর্থ মিজান সাহেব জানেন না। জানলে এভাবে বলতে পারতেন না।
"আর আমাদের উপর স্বাক্ষ্য দেবে স্বয়ং বিশ্বনবী" এখানে 'দেবেন' বলতে আপনার কি মন চায় না স্যার!
এরপর বললেন, "নবী-টবী"
"আমার দিকে তাকান" -লক্ষ লক্ষ মানুষ সব নাকি উনার দিকে খালি তাকাবে।
আবারো রাগ, আসলে মি. মিজান তো রাগ আর অহংকারের একটা নওয়াব নমুনা। পুরো প্রোগ্রামে একি সিচুয়েশন বার বার ক্রিয়েট করেছেন।
"এরকম গেদারিং হলে, পাবলিক ইভেন্ট বন্ধ করে দিতে হবে" -এবার জনতাকে সরাসরি থ্রেট। হো দ্য হেল আর ইউ মি. মিজান টু ডু দ্যট।
"বুঝতে পারে না বোধহয়" -সবখালি বুঝে আমাদের এই স্যার।
"এই, সিলেট, এই, এখানে কি? কি সমস্যা? Look at me, আমার সাথে কথা বল, Deal with me; আমি তো তোমাদের মেহমান, আমি তোমাদের গেস্ট, এরকম নমুনা দেখাইলে হবে" -কত বড় স্পর্ধা। আমার সিলেটের সাথে এই আচরণ। এটা আপনার শশুরবাড়ি না, এটা কুরআনের মাহফিল মি. মিজান"
"এতক্ষণ তো খুব শান্ত ছিলা, ভদ্র ছিলা"
"এই ভালবাসা দিয়া কিছু হবে, রেসপনসেবল হতে হবে, চুপ থাক" -কথাগুলির খালি ওজন দেখুন সম্মানিত সুধী। জামায়াত আর লোক পায় নাই। উনাকে নিয়ে আসছে। সাদিকুর রহমান আজহারী কিংবা আব্দুল্লাহ আল আমিনকে নিয়ে পরবর্তী বছর প্রোগ্রাম করুণ। মিস্টার মিজানকে আনার চিন্তাও আর করবেন না আপনারা।
"fantastic, icy catching, fabulous"
"এই পাশে কুরাইশ, এই পাশে মুসলমান" -হাত দিয়ে ইশারা করে দর্শকদের একাংশকে কুরাইশ মিন করতেছেন নিজের অজান্তেই।
"এই যে আমার ওতো চুল পাকতেছে" -নিজের ফিজিক্যল বিষয় লক্ষ জনতাকে বলতেছেন!
"মুকেশ আম্বানির ওয়াইফ নীতা আম্বানি নাকি গোল্ড ওয়াটার খেয়ে নিজেকে সতেজ রাখে" -তাফসিরের সংক্ষিপ্ত আজকের আলোচনায় এই উদাহরণও দেয়া লাগে!
আবারো প্রচন্ড রাগে ফেটে পড়া। যথারীতি সিলেটকে অপমান- "এই সিলেট, ওকে, বিদায় নেই, আমি চলে গেলাম, ইটস এনাফ টু'নাইট, ওকে, খালাস, হবে না"
"এরকম আচরণ আবু জেহেলের সাঙ্গপাঙ্গরা করে; উতবা, সাইবা, ওলীদ ইবন মুগীরারা কুরআনের মাহফিলে এমন আচরণ করতো"
কুরআনের মাহফিলে অংশ নেয়া লক্ষ জনতাকে কোন মুসলিম কি এমন মারাত্মক গালি দিতে পারে! আপনাকে নি:শ্বর্ত ক্ষমা চাইতে হবে, জাতির কাছে, সিলেট বাসীর কাছে।
খুব স্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছিল, অনেক দুর থেকে আসা ক্রমান্বয়িক ভীড়ের চাপে, শেষদিকে মানুষগুলি একজনের উপর আরেকজন উঠে যাচ্ছিল। এটা হওয়া খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার। পাঁচ মিনিটে এটি ঠিক করা সম্ভব ছিল। আপনি উল্টো বার বার রি-আক্ট করে স্বেচ্ছাসেবকদের কাজ করতে সুযোগ দেন নি।
"ব্যথা পেয়েছো, আহত হয়েছো, Its very common"
-কিভাবে একটা মানুষ এমন কথা বলতে পারেন!
"জুবের ভাই, মোনাজাত করে দিই" -উচ্চারণে পর্যন্ত তাচ্ছিল্য। এটা হবে 'জোবায়ের'। আর এটা কি কথা বলার কোন সিস্টেম!
"আমার দোয়া যদি চাও, stop right now" -আহা! কোন দরবার শরীফের পীর এসে হাজির, 'স্টপ রাইট নাও' হতে হবে।
"এই বিস্তর আলোচনার সুযোগ আমার নাই" -তাহলে কেন আপনি আসছেন, একটু বলবেন?
"ফেরেসতারা টালমাটাল" -বাহ, কত সুন্দর শব্দচয়ন!
"স্লোগান ইজ অন" -আমার তো মনে হয়, উনি এ কথাটা বলার মাধ্যমে যেভাবে তৌহিদী জনতাকে খুব সুক্ষভাবে ইনসাল্ট করেছেন, ঈমানের সাথে জড়িত এ তাকবির -আল্লাহু আকবার।
"আমার দিকে তাকাও, আমার দিকে কানেক্ট করো" -অথচ কথাটা হতে পারতো, 'আল্লাহর সাথে নিজেদের সংযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেন।
সহজ সরল মানুষদেরকে সন্দেহ করে বলা হচ্ছে, "পরিকল্পিত কিছু ওতো হতে পারে"
"@Knowledge + commonsense = হিকমাহ" -এটার সাথেও একমত না মিজান স্যার।
"দাওয়াত দিতে হবে gradually" -gradually শব্দটি এতবার উচ্চারণ করলেন, আর কি কোন সমার্থক শব্দ জানা নেই আপনার!
"এটা কি কোরআনের মাহফিলের পরিবেশ হইল? -দুর অকৃতজ্ঞ আল্লাহর বান্দা। আল্লাহ আপনাকে হেদায়াত দিন। রাত দিন পরিশ্রম করে প্রোগ্রাম আয়োজন করেছেন আমাদের ভাইয়েরা। আর আপনি ইতরামির জন্যে এসেছেন এখানে!
"এই সিলেটি এই, তোমরা তো আগের দুই প্রোগ্রামকে ছাড়াইয়া গেলা" -মানে সিলেটের পাশাপাশি আমাদের প্রিয় অপর দুটি শহরকেও অপমানিত করা হচ্ছে। টাইম উইল সি।
"ডিউ টাইমে মোনাজাতে মুভ করতে পারতাম" -এটা কি সত্যি আজকের তাফসির মাহফিলের প্রধান মুফাচ্ছিরের কথা!
"সিলেট, আজকে কি করছো মনে থাকবে" -এটা ছিল প্রচন্ড ক্রুদ্ধ, সন্দেহপ্রবন, ভীতু এক ব্যক্তির শেষ সম্ভাষণ। সিলেটের কাছে নি:শ্বর্ত ক্ষমা না চাইলে আপনাকে সারা বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত ঘোষণার পাশাপাশি আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করব ইনশা'আল্লাহ।
আল্লাহ তা'য়ালা আপনাকে বুঝতে পারার তৌফিক দিন, দ্বীনের দায়ী হিসেবে আজীবন কবুল করুন। আর দয়া করে পরবর্তী কোন বাংলা ভাষাভাষী প্রোগ্রামে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ইংরেজি শব্দের ব্যবহার করবেন না। এটা মারাত্মকভাবে দৃষ্টিকটু।’’

এদিকে, সিলেটের অনেক স্বনামধন্য সাংবাদিকও আজহারির আচরণের নেতিবাচক দিক তুলে ধরেছন।

সাংবাদিক জুনেদ আহমদ চৌধুরী লিখেছেন- ‘এত ঢাকঢোল পিটিয়ে অন্যান্য জেলা থেকে মানুষ না এনে আলিয়া মাঠে মাহফিল করলে এই সমস্যা হত না। ইতিহাস দেখাতে গিয়ে নিজেরাই এখন ইতিহাস!! অথচ আলীয়া মাঠেই প্রখ্যাত মুফাসসীরে কুরআন আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেব বিশাল বিশাল মাহফিল করেছেন। সকল দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে আপামর মানুষ সেখানে যেতেন। আজ বার বার সিলেটের মানুষ আল্লামা সাঈদী সাহেবকে মনে করছে। মহান আল্লাহ উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসীব করুন।’

দৈনিক প্রভাতবেলার সম্পাদক ও প্রকাশক কবীর আহমদ সোহেল লিখেছেন- ‘১০ লক্ষাধিক মানুষের মাহফিলে পিনপতন নীরবতা আশা করা বোকামি। ২০/৫০ জনের হট্টগোলে এমন পরিস্থিতি হয়নি মোনাজাত করে নিতে হবে। মাইক্রোফন হাতে নিয়ে মঞ্চে বাগাড়ম্বরের নাম নেতৃত্ব নয়। প্রতিকূল পরিস্থিতিকে অনূকূলে নিয়ে আসতে পারাটাই সফলতা। আন্জুমানে খেদমতে কুরআন সংকীর্ণতার উর্ধ্বে উঠতে পারলোনা। সার্বজনীন একটি মাহফিল করার সুযোগ কতিপয় হামবড়া নেতার কারণে হাত ফসকে গেল। তাফসীর মাহফিল সফল। জনতার উপস্থিতি আশা জাগানিয়া।
বান্দরগুলো মানুষ হতে পারলেই সার্থক হবে। আজ এটুকুই। বিস্তারিত লিখবো। ইনশাআল্লাহ।’

দৈনিক নয়াদিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান আব্দুল কাদের তাপাদার লিখেছেন- ‘এই সময়ে মিজানুর রহমান আজহারী সাহেবের এ ধরনের " মিলিয়ন পাবলিক গ্যাদারিং " বন্ধ করে দেওয়া উচিত। এতে অধিক কল্যান নিহিত বলে আমার বিশ্বাস।’

এদিকে, ওয়াজের সময় উপস্থিত শ্রোতাদের প্রতি ‘তুমি’ সম্বোধন নিয়েও বেজায় ক্ষুব্ধ সিলেটবাসী। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মিজানুর রহমান আজহারির প্রতি। তবে তিনি এ বিষয়ে তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুকে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) একটি পোস্টের মাধ্যমে ‘আত্মপক্ষ সমর্থন’ করেছন।

পোস্টে আজহারি লেখেন- ‘আমি মাহফিলগুলোতে সাধারণত শ্রোতাদেরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করি। মাঝে মাঝে কিশোর ও তরুণ শ্রোতাদের ‘তুমি’ বলে এড্রেস করি। কখনো ঢালাওভাবে ‘তুমি’ সম্বোধন করি না।
একটা সময় ছিল যখন মাহফিলগুলোতে বেশিরভাগ শ্রোতা ছিলেন বয়স্করা। পঞ্চাশ কিংবা ষাটোর্ধ্ব মুরুব্বিরা। আলহামদুলিল্লাহ সময় বদলেছে। এখন মাঠে জেন-z দেরকে আমরা শ্রোতা হিসেবে পাচ্ছি। তরুণ প্রজন্মের এই ছেলেগুলো আপনি-র চেয়ে তুমি বললেই বেশী উৎফুল্ল হয়। আর তুমি বলে, আমিও সহজেই তাদের সাথে কানেক্ট করতে পারি।
মূলত ওদেরকে বেশি আপন করে নিতেই, স্নেহভরে এই ‘তুমি’ সম্বোধন।
আপনি-তুমির মিশেলে চলুক না আমাদের ভাবের এই আদান প্রদান।’

উল্লেখ্য, সিলেটের মাহফিলের আগেও (সম্প্রতি) আজহারির একটি ওয়াজ মাহফিলের ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায়- নবিজি (সা.)-এর শৈশবের রাখাল জীবনের বর্ণনা দিতে তিনি ‘কাউবয়’ (রাখাল) শব্দটি ব্যবহার করেন।

নবি সা.-এর শানে এমন শব্দ ব্যবহারকে বেয়াদবি বা দৃষ্টতা বলে আলেম-সমাজের বক্তব্য। ওয়াজের নামে এমন অশালীন ও অনুপযুক্ত শব্দ ব্যবহারের জন্য তাঁকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতেও অনেকে আহ্বান করেছেন।

আবু তালহা তোফায়েল নামের একজন ফেসবুকে লিখেন, ‘জামাত চেষ্টা করছে সাঈদীর গ্যাপ ফিলাপ করতে ৷ কিন্তু তিনি (আজহারী) সিক্সপ্যাক থেকে কাউবয়— মন যা চাচ্ছে, তাই বকে যাচ্ছেন। জাতি সাবধান থাকুন।’

হাসিব আর রহমান নামের একজন লিখেন, ‘আজহারী সাহেবকে দেখতে পার্সিয়ান বিলাইর মত দেখা যায়। কারণে তাকে যদি কেউ 'মিয়াউবয়' বলে, তখন যারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাউবয় বলার কারণে কিছু বলে নাই তারাও কমেন্টে চ্যাইতা যাইব। দলীয়ভাবেই চ্যাইতা যাইব।’

আরজু আহমেদ নামের একজন লিখেন, ‘জনপ্রিয়তা শুদ্ধতার দলিল না। ফলে মিজানুর রহমান আজহারী যখন রাসুল (সা.) প্রসঙ্গে বলেন তিনি ‘কাউবয়’, খাদিজাতুল কুবরার ‘কর্মচারী’ ছিলেন- এইসব কথা তিনি ভুলই বলেছেন। কিন্তু তার ভুলের বাড়তি সমস্যা হলো, এ ভুল ব্যাপক বিস্তৃতি পায়। আর মানুষ সেটাকে ভুল বলে মানতে চায় না। ইসলামের ইতিহাসে পেশাদার বক্তাদের ‘কাসসাস’ (Story Teller) বলা হত। ইবনুল জাওযির মতে, এরাই ইলমে হাদিসের সবচেয়ে বড়ো ক্ষতি করেছে। ইবনে উমার (রা.) মসজিদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বলতেন, এই বক্তাদের জন্যই আমি মসজিদ থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হই, এদের ছাড়া আর কিছুই আমাকে মসজিদ থেকে দূরে রাখতে পারত না।’

শব্দচয়নে আজহারীকে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সাইদ আল হাসান শিমুল নামের এক সাংবাদিক লিখেন- ‘এটা ঠিক যে, কাউবয় বলতে ওয়েস্টার্ন দুর্ধর্ষ অস্ত্রবাজ অশ্বারোহী ভেসে উঠে কল্পনায়। যারা কথায় কথায় খুন-খারাপি করতো। তাই শব্দচয়নে মিজানুর রহমান আজহারীকে আরও সতর্ক হতে হবে। শাব্দিক অর্থেই সব হয় না।’

নাজমুল ইসলাম কাসেমি নামের এক তরুণ আলেম লিখেন- ‘ড. মিজানুর রহমান আজহারি ভাইয়ের সাথে আমার আজও সরাসরি মোলাকাত হয়নি। ইনশাআল্লাহ সামনে হয়তো হয়ে যাবে। যদি কখনো হয়, এইটা বলার ইচ্ছে ছিল- আল্লাহ আপনাকে অনেক পাণ্ডিত্য দিয়েছেন। আপনার মা'লুমাত অনেক। উপস্থাপনাও দারুণ!
আপনি অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠানে পড়েছেন। যদি সম্ভব হয়; সীমিত সময় হলেও কিছুদিন শায়েখ মাওলানা আব্দুল মালেক হাফি,.-এর সান্নিধ্য ও পরামর্শ নিয়ে দাওয়াতি কাজ কন্টিনিউ করুন; আপনার পরিবর্তনটা আর ব্যক্তিত্বটা আগামী অন্তত ১০০ বছরের জন্য মুত্তাবা হয়ে যাবে। পাশাপাশি, তাসাউফকেও ঠিক এভাবে কোনো দুনিয়া বিমুখ ওলির সান্নিধ্যে শাণিত করিয়ে নিন। এর পর থেকে আপনার ইলমের রুসুখতা দারুণভাবে মজবুত হবে। এবং আপনার মুখ থেকে তখন মেপে মেপে শুধু হীরে বের হবে। তাসামুহও আপনাকে কম স্পর্শ করবে। ইনশাআল্লাহ।’

ইসলামি লেখক-গবেষক মাওলানা লুৎফর ফারাজি লিখেন- ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাউবয় বলা চরম দৃষ্টতা ও বে-আদবি। তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা আবশ্যক।’

এর আগে মিজানুর রহমান আজহারি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শারীরিক গঠনের বর্ণনা করতে গিয়ে ‘সিক্সপ্যাক’ ও হযরত খাদিজা রা.-এর বিবাহিত জীবন বুঝাতে গিয়ে ‘ভার্জিন নন’ এমন সব শব্দ ব্যবহার করে আলেম-সমাজের বেশ তোপের মুখে পড়েন। এরপর দীর্ঘদিন মালয়েশিয়াতে পড়াশোনার কাজে থাকায় অনেকেই মনে করেছিলেন- এবার হয়তো শব্দচয়নে আজহারি সতর্ক হবেন। কিন্তু না হওয়ায় হতাশ হয়েছেন তারা।

মিজানুর রহমান ১৯৯০ সালের ২৬ জানুয়ারি ঢাকার ডেমরায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস কুমিল্লার মুরাদনগরের পরমতলা গ্রামে। তার বাবা একজন মাদ্রাসার শিক্ষক। তার পরিবারে মা-বাবা ও এক ভাই রয়েছে।

মিজানুর রহমান ঢাকার ডেমরায় অবস্থিত দারুন্নাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসা থেকে ২০০৪ সালে দাখিল, ২০০৬ সালে আলিম পরীক্ষায় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ২০০৭ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত মিসর সরকারের শিক্ষাবৃত্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্রাজুয়েট করার জন্য মিসরে যান। সেখান থেকে ডিপার্টমেন্ট অব তাফসির অ্যান্ড কুরআনিক সায়েন্স থেকে ২০১২ সালে শতকরা ৮০ ভাগ সিজিপিএ নিয়ে অনার্স উত্তীর্ণ হন।

মিসরে পাঁচ বছর শিক্ষাজীবন অতিবাহিত করার পর ২০১৩ সালে মালয়েশিয়া যান। সেখানে গার্ডেন অব নলেজ খ্যাত ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট-গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব কোরআন অ্যান্ড সুন্নাহ স্টাডিজ থেকে ২০১৬ সালে পোস্ট-গ্রাজুয়েশন শেষ করেন।

২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে আজহারি তাঁর ওয়াজে ‘সিক্সপ্যাক’-‘ভার্জিন’ এসব শব্দ ব্যবহারের পর তোপের মুখে পড়ে দেশ ছাড়েন। প্রায় সাড়ে ৪ বছর মালয়েশিয়ায় কাটিয়ে চলতি বছরের ২ অক্টোবর দেশে ফিরেন তিনি। পরে ৯ দিনের মাথায় আবারও মালয়েশিয়ায় গিয়ে ১১ অক্টোবর দেশে আসেন।