- সাক্ষাৎকারে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী
কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটেছে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সিলেট বিএনপির অবস্থান ও নানা বিষয় নিয়ে প্রথম আলো পত্রিকাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী।
সাক্ষাৎকারটি ‘কওমি কণ্ঠ’র পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
প্রশ্ন: সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ২৬টি পদের বিপরীতে আওয়ামী লীগপন্থী ১২ জন আইনজীবী জয় পেয়েছেন। অন্যদিকে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা জয় পেয়েছেন মাত্র ছয়টি পদে। এ বিপর্যয়ের কারণে আপনিসহ জেলা ও মহানগরের চার শীর্ষ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। কীভাবে দেখছেন বিষয়টি?
আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী: প্রথম কথা হচ্ছে, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে হয় না। এরপরও অনেক দলীয় নেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে থাকেন। এবারও তা–ই হয়েছে। তবে নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন কিংবা আইনজীবী ফোরামের কমিটি গঠন আমাদের দলের সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম দেখভাল করে। এখানে স্থানীয় বিএনপির প্রত্যক্ষ জড়িত হওয়ার সুযোগ নেই। তবে আইন পেশায় নিয়োজিত না হয়েও দলের দায়িত্বশীল পদে থেকে আমি সহকর্মীদের নিয়ে ভালো ফলের জন্য চেষ্টা করেছি। সফল হতে পারিনি, এ জন্য আমরা মর্মাহত। আর শোকজের (দর্শানোর নোটিশ) বিষয়ে বলব, দল যে কাউকে প্রয়োজনবোধে শোকজ করতে পারে। আমরা শোকজ পেয়েছি এবং এর জবাব যথাসময়ে দিয়েছি।
প্রশ্ন: বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের অন্তঃকোন্দলের কারণেই কি তাহলে বিপর্যয় ঘটেছে?
আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী: এ বিষয়ে আপাতত আমি কোনো মন্তব্য করব না। এরই মধ্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটি এক বিজ্ঞপ্তিতে সিলেটের কমিটি বিলুপ্ত করেছে। এ ছাড়া কারণ অনুসন্ধানে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে। নিশ্চয়ই ওই কমিটি সরেজমিন অনুসন্ধান করে বিপর্যয়ের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করবে। তখনই বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
প্রশ্ন: এর আগে গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপর বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী চিনি চোরাচালান, ক্ষমতার আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, জায়গা দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন। আপনারা এসব থামাতে কী উদ্যোগ নিয়েছেন?
আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী: দলীয় শৃঙ্খলা ও ভাবমূর্তি রক্ষায় আমরা জিরো টলারেন্সে বিশ্বাসী। আমাদের নেতা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা হলো চোরাচালানি, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কেউ জড়িত হলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর সংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া। একই সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বিষয়টি জানানো, যাতে তাঁদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়। ইতিমধ্যে এ ধরনের অপরাধে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের অন্তত ১০ জন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া জেলা বিএনপির একজন যুগ্ম সম্পাদকের পদ স্থগিত করা হয়েছে।
প্রশ্ন: দল থেকে বহিষ্কারের পাশাপাশি অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের নোটিশ দেওয়ার পরও অপকর্ম থামছে না। অথচ গত ৫ আগস্টের আগেও আপনার নেতৃত্বে সুসংগঠিতভাবে সিলেটে আন্দোলন-সংগ্রাম পরিচালিত হয়েছে। এমনকি ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপকভাবে ত্রাণ বিতরণ করে বিএনপি ইতিবাচকভাবে আলোচনায় আসে। তাহলে এখন কি স্থানীয়ভাবে দলের ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙে পড়েছে?
আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী: দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার প্রশ্নই ওঠে না। দলের চেইন অব কমান্ড অবশ্যই সুদৃঢ়। ৫ আগস্ট আমাদের আন্দোলনে সফলতা এবং ২০২২ সালের বন্যা–দুর্যোগে মানুষের কল্যাণে কাজ করার বিষয় মানুষ ইতিবাচকভাবে নিয়েছে বলে আপনারা নিজেরাই বলছেন। আমরাও বলতে চাই, আন্দোলনে আমরা সবাইকে নিয়ে কঠিন শৃঙ্খলা মেনে চলে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারকে বিতাড়িত করতে পেরেছি। দুর্যোগ-দুর্বিপাকেও জেলার নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করে সফল হয়েছি এবং মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে পেরেছি।
এ পর্যায়ে যদি এসে দেখি, দলের মধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলাকারী দলের সুনাম নষ্ট করার কোনো কাজ করে, তাহলে তাঁকে যদি চিহ্নিত করতে পারি, তবে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। আমাদের দলের সবাইকে মনে রাখতে হবে, অতীতেও আমরা বিরোধী দলে ছিলাম, এখনো বিরোধী দলেই আছি।
প্রশ্ন: সর্বশেষ ১৯ জানুয়ারি দক্ষিণ সুরমা উপজেলায় রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটেছে। এতে স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতার সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী: রিজেন্ট পার্ক রিসোর্ট ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও চাঁদা দাবির ঘটনার সঙ্গে বিএনপি কিংবা ছাত্রদল জড়িত নয়। আমরা যতটুকু শুনেছি, এটা রিজেন্ট পার্ক কর্তৃপক্ষ ও গ্রামবাসীর সমস্যা। এরপরও আমরা স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি এ ঘটনার আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে। এ ক্ষেত্রে পুলিশি তদন্তে যদি স্থানীয় বিএনপি কিংবা ছাত্রদলের কোনো নেতার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।