- সমালোচনায় খোদ সনাতন ধর্মালম্বীরা
- পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
সিলেটে মারাত্মক শব্দদূষণ ও বিদেশি সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে সরস্বতী পূজা উদযাপন করেছেন সনাতন ধর্মালম্বী কতিপয় যুবক-যুবতী। শব্দদূষণের কারণে সিলেট মহানগরে বাসাবাড়িতে চরম ভোগান্তিতে ছিলেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। বিশেষ করে রোগীরা। পথচারীদেরও পোহাতে হয় অনেক দুর্ভোগ। গভীর রাত পর্যন্ত সড়কে যানজট সৃষ্টি করে উচ্চশব্দে গান-বাজনা করতে দেখা যায় এসব যুবক-যুবতীকে।
তবে সিলেট পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দসহ সচেতন হিন্দু-সমাজ এর ঘোর বিরোধীতা করেছেন।
সিলেটের সচেতন মহল এ ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করছে। বিভিন্ন জন বলছেন- পুলিশ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে পেরেছেন উচ্ছৃঙ্খল যুবক-যুবতী।
জানা যায়, সারা দেশের মতো সিলেটেও সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সনাতন ধর্মালম্বীদের সরস্বতী পূজা। মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে প্রতিমা শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। রাত ৯ টায় সিলেট সিটি পয়েন্টে থেকে সরস্বতী প্রতিমা শোভাযাত্রা বের করা হয়। বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জায় ট্রাকে করে প্রতিমা নিয়ে মহানগর প্রদক্ষিণ করা হয়।
পূজা শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার খান মোহাম্মদ রেজাউন নবী। শোভাযাত্রা পরিচালনা কমিটির আহবায়ক সুদীপ রঞ্জন সেন বাপ্পু সভাপতিতে এবং চন্দন দাশের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পুজা উদযান পরিষদ মহানগর শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রদীপ কুমার দেব। বক্তব্য রাখেন সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এবং সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
এদিকে, রাত ৯টার পর থেকে বিভিন্ন মন্ডপ থেকে প্রতীমা নিয়ে শোভাযাত্রা বের হয় মহানগরের বিভিন্ন রাস্তায়। এর মধ্যে অনেক শোভাযাত্রায় চলছিলো উশৃঙ্খল উন্মাদনা। অবৈধভাবে উচ্চশব্দে বাজানো হচ্ছিলো বাজনা, চর্চা করা হচ্ছিলো ভারতীয়সহ ভিনদেশি সংস্কৃতি।
এ অবস্থা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। এ সময়ে সিলেট মহানগরবাসী চরম দুর্ভোগে পড়েন। বিশেষ করে রাস্তায় জরুরি প্রয়োজনে বেরনো ও বাসাবাড়িতে থাকা বৃদ্ধ, শিশু ও রোগীরা। গানের বিট সহ্য করতে না পেরে অনেককে রাস্তায় কান বন্ধ করে বুকে হাত দিয়ে হাঁটতে দেখা গেছে।
এসব দৃশ্য দেখার পর ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম ফেসবুকে সনাতন ধর্মলম্বী অনেকেও বিষয়টি তীব্র সমালোচনা করেন এবং নিন্দা জানান।
তবে এমন উশৃঙ্খল কাণ্ড না করার জন্য সিলেট পূজা উদযাপন কমিটির পক্ষ থেকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা ছিলো। এ বিষয়ে তারা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে সহযোগিতাও করেন। কিন্তু মঙ্গলবার রাতের এমন উশৃঙ্খল কাণ্ড থামাতে পুলিশের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি বলে সিলেটবাসীর অভিযোগ।
সিলেট মহানগর পূজা উদযান কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাস বলেন- ‘সরস্বতী পূজার শোভাযাত্রা আমাদের ঐতিহ্য। কিন্তু আমরা নেতৃবৃন্দ কখনোই অবৈধ কাণ্ডের সঙ্গে একমত নই। পূজার আগে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছি এবং আমাদেরকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছি। আমাদের ধর্মালম্বীদেরও আমরা বার বার এমন কাণ্ড না ঘটাতে নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু কাল (মঙ্গলবার) অনেকেই সেটি মানেনি। আমরা আগামীতে এসব কাণ্ড প্রতিরোধে কঠিন পদক্ষেপ নিবো ভাবছি।’
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ও মহানগর উত্তরে উপ-পুলিশ কমিশনার পদে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) মো. শাহরিয়ার আলম বলেন- আমরা পূজা আগে বৈঠক করে উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দকে বিষয়টি বলে দিয়েছি। তাদেরও তো দায়িত্ব ছিলো এসব বন্ধ করার। আমরা যেসব জায়গা থেকে অভিযোগ করেছি সেসব জায়গায় গিয়ে উচ্চশব্দে গান-বাজনা বন্ধ করেছি। তবে কিছু জায়গায় হয়েছে এটা ঠিক। ধর্মীয় উৎসব থাকায় আমরা হার্ড লাইনে যেতে পারিনি।’