কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
‘ডেভিল’ যতদিন শেষ না হবে ততদিন পর্যন্ত অপারেশন ডেভিল হান্ট চলবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) ফার্মগেটের মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের নতুন মৃত্তিকা ভবন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করবে তাদের টার্গেট করে ডেভিল হান্ট অপারেশন চলবে। গাজীপুরে যারা ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেছে তাদের অনেককেই আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তাড়াতাড়ি বাকিদেরও আনা হবে।
সারা দেশে সন্ত্রাসবাদ দমন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় নিতে সারাদেশে শুরু করা হয় ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ (Operation Devil Hunt) নামক কঠোর অভিযান। গাজীপুরে ছাত্র-জনতার উপর সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনার প্রেক্ষাপটে শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে যৌথ বাহিনীর বিশেষ এ অভিযান শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) গাজীপুরের একটি এলাকায় ছাত্র ও সাধারণ জনগণের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলার ফলে বেশ কয়েকজন হতাহত হন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। ঘটনার পরপরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় 'অপারেশন ডেভিল হান্ট' নামক বিশেষ অভিযান শুরু হয়।
অভিযানটির মূল লক্ষ্য হলো- সন্ত্রাসীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল করা। জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও দমন করা। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ।
বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যৌথভাবে পরিচালনা করছে, যার মধ্যে রয়েছে,বাংলাদেশ পুলিশ। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চ (ডিবি)। এই বাহিনীগুলো একযোগে অভিযান পরিচালনা করছে এবং সন্ত্রাসীদের ধরতে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করছে।
অপারেশন ডেভিল হান্টের শুরুতেই সারা দেশে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার হয়েছে এবং বেশ কিছু অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে যে, এই অভিযান দীর্ঘমেয়াদী হবে এবং সন্ত্রাসবাদের মূল উৎপত্তিস্থল চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’র মধ্যদিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ঠিক ছয় মাসের মাথায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বড় ধরনের অপারেশন শুরু হলো।
সরকারের এ অপারেশনকে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তারা বলেছেন, আগেই এ ধরনের অপারেশন দরকার ছিল। এটা হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগেই উন্নত হতো।
এই অপারেশনের বিষয়ে আইজিপি শেখ বাহারুল আলম সংবাদমাধ্যমকে জানান, আজ রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিস্তারিত ব্রিফিংয়ে জানাবে।
একাধিক সূত্র বলছে, সেনাবাহিনী অলরেডি গ্রাউন্ডে রয়েছে। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না থাকলেও বিভিন্ন সময়ে অভিযানের সুবিধার্থে সেনাবিহিনীর সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। এখন যেহেতু নির্দিষ্ট ফরম্যাটে অভিযান শুরু হয়েছে, তাই প্রতিটি মেট্রোপলিটন এলাকায় ও জেলায় সমন্বিত নিয়ন্ত্রণকক্ষ রাখা হচ্ছে। আগে দরকার হলে এক বাহিনী আরেক বাহিনীর সহযোগিতা নিত। এখন সব অভিযান চালানো হবে সমন্বিতভাবে।
যৌথ বাহিনীর অপারেশন বিষয়ে জানতে চাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড. ওমর ফারুক বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের অপারেশন দরকার ছিল। তবে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’-এর মাধ্যমে কেউ যেন অ্যাবিউজের (অপব্যবহারের) শিকার না হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
সামরিক বিশ্লেষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষ্যে এই অপারেশন খুবই সঠিক সিদ্ধান্ত। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় এই কার্যক্রম সফল হবে বলে মনে করেন তিনি।
অপরাধ বিশ্লেষক ও সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা খান সাঈদ হাসান মনে করেন, অপারেশন জরুরি ছিল। সশস্ত্র বাহিনী মাঠে আছে, এখন সমন্বয় করে কাজ করবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সফল হবে বলে আশাবাদী তিনি।