‘১৫ বছরে তিস্তার পানি আনতে পারেনি আ. লীগ’

কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন- গত ১৫ বছরে তিস্তার একফোঁটা পানি আনতে পারেনি আওয়ামী লীগ সরকার। শুধু তিস্তা না যে কয়টা নদী আছে সেখান থেকেও পানি আনতে পারেনি। আমরা গত ১৫ বছর লড়াই করছি ফ্যাসিবাদি হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে। ছেলেরা লড়াই করছে। ভারত পানি দেয় না আর আমাদের দেশের শত্রু শেখ হাসিনা দিল্লিতে রাজার হালে বসায় রাখছে। ঐখান থেকে বিভিন্ন ধরনের হুকুমদারি করছে।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তিস্তা পানি ন্যায্য হিস্যা আদায় ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ ও রংপুরের গঙ্গাচড়া সড়ক সেতুর পয়েন্টে জনতার সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, পানির যখন প্রয়োজন নেই ভারত যখন পানি ছেড়ে দেয়, তখন নদী পারের মানুষের কষ্ট বেড়ে যায়। আর যখন খড়া মৌসুম তখন আর পানি দেয় না ভারত। তিস্তা পারের মানুষের দুঃখ কখনো শেষ হয় না। এই সরকারে পরিষ্কার করে বলতে চাই, অন্তর্বর্তী সরকার কথায় তো বলেন, আপনারা নিরপেক্ষ, নিরপেক্ষ কিন্তু এই জায়গায় থাকলে চলবে না। এই জায়গায় আপনাকে মুখ খুলতে হবে। ভাররতে বলতে হবে পানি হিস্যা আমি চাই।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্থান সেনাবাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেছিলাম, সেই যুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। আমরা আমাদের ভোট দিয়ে আমাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চাই। যারা আমাদের কথা সংসদে বলবে, সব জায়গায় বলবে। ওরা অনেক সময় বলে যে আমরা ভোট ভোট করছি, কারণ একটাই যে ভোট না হলে আমরা নেতা নিবাচিত হবে কোথা থেকে, আমার কথাটা বলবে কে? সে জন্যই আমরা নির্বাচনের কথা বলছি, নির্বাচন দিলে দেশটাতে যে অশান্তি সৃষ্টি হয়েছে সে অশান্তি হবে না, শান্তি আসবে, একটি স্থিতিশিল অবস্থা আসবে।

তিনি আরো বলেন, গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যার জন্য লংমার্চ করেছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি। আর আজ আসাদুল হাবিব দুলূ উত্তরাঞ্চলের ৫ জেলার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ডাক দিয়েছেন ‘জাগো বাহে তিস্তা’ বাঁচাই। এটা শুধূ শ্লোগান নয়, তিস্তা পাড়ের মানুষের বাঁচার জন্য যে আহাজারি তারই আওয়াজ আজকে বেড়িয়ে আসছে ।

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, তিস্তার দুই তীরে ২৪২ কিলোমিটার ও ৩৬০ কিলোমিটার অববাহিকায় এখন হাহাকার অবস্থা প্রতিবছর তিস্তা অববাহিকার দুই পাড়ে বিশ হাজার মানুষ উদ্বাস্ত হয়। প্রতিবছর ক্ষতি হয় ১ লাখ কোটি টাকারও বেশি। এ কারণে উত্তরের অর্থনীতি পঙ্গু। তিস্তা চুক্তি বাস্তবায়নের পাশাপাশি মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তিস্তা নদীকে ঘিরে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ফিরে আসবে এই অঞ্চলে। পাশাপাশি এই অঞ্চলের দুই কোটি মানুষের জীবন জীবিকা জীববৈচিত্র্য এবং পরিবেশ রক্ষা হবে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু। এ সময় তিনি বলেন, তিস্তার কড়াল গ্রাসে ছিন্নমূল মানুষেরা কে কোথায় চলে গেছে আমরা জানি না। এখন স্বাধীন বাংলাদেশ মুক্ত বাংলাদেশ জুলাই বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে কথা বলার অধিকার সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারন সম্পাদক সাইফুল হক,সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, বিএনপির চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা কণ্ঠশিল্পি বেবি নাজনীন, রংপুর বিভাগ বিএনপির সহ-সাংগঠনিক আব্দুল খালেক প্রমুখ।

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক ও বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সাবেক মন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলুর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক (রংপুর বিভাগ) আব্দুল খালেক, বেবি নাজনিন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পাটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার।

লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ ও রংপুরের গঙ্গাচড়া সড়ক সেতুর পয়েন্টে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে কুড়িগ্রামের রাজারহাটের সরিষাবাড়ি ঘড়িয়াল ডাঙ্গা পয়েন্টে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেস্টা মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, উলিপুর পাকারমাথা থেতরাই পয়েন্টে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর সেতু পয়েন্টে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।

দুইদিনের এই কর্মসূচি সফল করতে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয় সমাবেশস্থল। সকাল থেকে লাখো মানুষ বিভিন্ন যানবাহন যোগে ও পায়ে হেঁটে তিস্তা নদীর তীরে এসে একত্রিত হতে থাকে। এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীদের রাত্রিযাপনের জন্য নদী তীরের বিভিন্ন স্থানে তাবু টানানো হয়েছে।

এছাড়াও আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের জন্য রাখা হয়েছে খাদ্য ভান্ডার।

প্রায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে মাইকিং, লিফলেট, ব্যানার, পোস্টার, সভা সেমিনারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যেভাবে প্রচার প্রচারণা চালানো হয়েছে তাতে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, শুধু বাংলাদেশ সরকার নয় গোটা বিশ্ব দেখবে এই তিস্তা নদীর জন্য কত পিছিয়ে রয়েছে এ জনপদ।