- রয়েছেন গোয়েন্দা নজরদারিতে
কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। ছিলেন সিলেট জেলা পুলিশ সুপার। এ জেলায় থাকতেই পদোন্নতি পান। সিলেট জেলায় ৩ বছর ২মাস ৭দিন কর্মকাল ছিলো ফরিদের। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১০ এর অধিনায়ক করে সিলেট থেকে পদায়ন করা হয় তাকে।
৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বেরিয়ে আসে তার নানা অপকর্মের কথা। এছাড়া অভ্যুত্থান চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী হটস্পটে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে পরিচালিত ক্র্যাকডাউনে নেতৃত্ব দেন ফরিদ। সব মিলিয়ে এবার ফেঁসে যাচ্ছেন তিনি।
এদিকে পুলিশ সূত্র জানায়, ফরিদ উদ্দিন পলাতক রয়েছেন। তবে তাকে ধরতে গোয়েন্দাদের একটি টিম কাজ করছে। যদিও সংবাদমাধ্যমের কাছে পুলিশের এ কর্মকর্তা দাবি করেন- তিনি অসুস্থতাজনিত ছুটিতে আছেন।
বহুল আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বর্তমানে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসাবে এপিবিএনের পার্বত্য চট্টগ্রামে কর্মরত। তিনি পুলিশে এএসপি হিসাবে নিয়োগ পান ২০০৫ সালে। পতিত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে বিসিএস (পুলিশ) ২৪তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা একাধিক প্রাইজ পোস্টিংয়ে কর্মরত ছিলেন। র্যাব ১০-এর অধিনায়ক হিসাবে ২০২২ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ২০১৯ সাল থেকে টানা ৩ বছর ছিলেন সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি)।
এর আগের ৩ বছর ছিলেন ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি)। ওয়ারীতে ডিসি হিসাবে যোগদানের আগে ছিলেন মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি)। ডিএমপিতে পদায়নের আগে ছিলেন চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত এসপি।
জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় দেওয়া তার একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাকে বদলি করা হয় এপিবিএন পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায়। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি হত্যা মামলা হয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, চলতি মাসের শুরু থেকেই কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। যাত্রাবাড়ী এলাকায় আন্দোলন দমনে তার ভূমিকা ছিল খুবই অপেশাদার ও গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর স্বৈরাচারের এই ‘দোসর’ পান বাংলাদেশ পুলিশ (বিপিএম) পদক। ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে তার অবদান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। খিলগাঁও, রামপুরা এবং যাত্রাবাড়ী থানায় তার বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলা করা হয়েছে (যদিও খিলগাঁও ও রামপুরা র্যাব-৩ এর অধিভুক্ত এলাকা)।
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে তার গভীর ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি পুলিশের সবাই জানতেন। সিলেটে থাকা অবস্থায় চোরাকারবারিদের সঙ্গেও গড়ে তুলেছিলেন বিশেষ সখ্য।
দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা বলেন- বহুবিধ গুরুতর অপরাধের কারণে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতেই হবে। যদিও ফরিদ উদ্দিন সংবাদমাধ্যমের কাছে সবই মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ বলে দাবি করেন।
মঙ্গলবার তিনি বলেন, অসুস্থতাজনিত কারণে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এক মাসের ছুটিতে আছেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকারদলীয় ক্যাডারের মতো ভূমিকা রাখার বিষয়ে ফরিদ উদ্দিন বলেন, এসব আন্দোলনে ডিএমপি সব সময় মূল ভূমিকা পালন করে। র্যাব ছিল একটি সাপোর্টিং ফোর্স। আন্দোলনের শুরুতে আমরা যাত্রাবাড়ী থানার সামনেই ছিলাম। সেখানে র্যাবের পক্ষ থেকে কোনো গুলি কিংবা মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ‘আমার যে বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে, সেখানেও আমি বলেছি, ‘আমরা কোনো প্রাণহানি চাই না। প্রাণহানি চাইলে এটা ক্লিয়ার করতে ১০ মিনিট সময় লাগবে। কিন্তু আমরা কোনো প্রাণহানি করব না। প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করব না। আমরা চাই প্রাণহানি ছাড়াই সবাই ঘরে ফিরে যাক। রাস্তা ক্লিয়ার হয়ে যাক।’
তবে যাত্রবাড়ীতে এত হতাহত কেন হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আন্দোলনের সময় আমরা কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল ব্যবহার করেছি। ভিডিও ফুটেজে সব অ্যাকশন দেখা গেছে পুলিশের। র্যাবের কোনো অ্যাকশন ছিল না। শেষদিকে আমাদের কোনো ফোর্স মোতায়েনও ছিল না। ১ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত র্যাবের কোনো ডেপ্লয়মেন্ট বাইরে ছিল না।’
যাত্রাবাড়ীতে রিয়াজ মোর্শেদ অপু নামের এক যুবককে হত্যার অভিযোগে সম্প্রতি মামলা করেছেন যাত্রাবাড়ী দক্ষিণ কুতুবখালির জনৈকা রুমা বেগম। ভিকটিম অপু তার ভাগিনা বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। মামলায় ফরিদ উদ্দিন ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ২৮৫ জনকে আসামি করা হয়। মামলার অভিযোগে ফরিদ উদ্দিনসহ ৪৫ জনের বিষয়ে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থলের চারদিক পাহারায় ছিলেন তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা যেন ভিকটিমকে রক্ষা করতে এগিয়ে না আসতে পারে সেজন্য এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকেন এবং অস্ত্র উঁচু করে ভীতি প্রদর্শন করেন।
এদিকে অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদ উদ্দিনকে এপিবিএনে পদায়নের পর ছাত্র আন্দোলনের সময় তার ব্যাপক নেতিবাচক ভূমিকা সামনে আসতে থাকে। আন্দোলনের সময় ধারণ করা একটি ভিডিওতে ওই কর্মকর্তার বক্তব্য ছিল, ‘এখানে সাধারণ শিক্ষার্থী নেই, সরকারবিরোধী লোকজন জড়ো হয়েছে।’ ওই সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যদি প্রাণহানি ঘটাই তাহলে এখানে ক্লিয়ার করতে ১০ মিনিটের মতো সময় লাগবে।’
জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত নেতাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তাকে ডিআইজি পদে পদোন্নতি দিয়ে এপিবিএনের সিইও বদলি করা হয়েছে।
তবে সূত্র জানায়, তিনি সবশেষ পদোন্নতি পান ২০২২ সালে। ওই সময় এসপি থেকে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি দিয়ে তাকে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক হিসাবে পদায়ন করা হয়।
পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি আবু নাসের মোহাম্মদ খালেদ বলেন, ‘অতিরিক্ত ডিআইজি ফরিদ উদ্দিন ২ ফেব্রুয়ারি থেকে পলাতক আছেন। আমরা তাকে খুঁজছি।’
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন্স) রেজাউল করিম বলেন, ‘বেশ কয়েকটি হত্যা মামলার আসামি ফরিদ উদ্দিনকে গ্রেফতারে চেষ্টা চালাচ্ছি।’
মূল রিপোর্ট : যুগান্তর