- কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযুক্ত
এস আর অনি চৌধুরী, মৌলবীবাজার :
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনিয়ম এবং দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় একাধিক ভুক্তভোগী সম্প্রতি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর অনুলিপি দিয়েছেন দুদকসহ স্থানীয় ও ঊর্ধ্বতন বিভিন্ন দপ্তরে। ওই অভিযোগপত্রে কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারী কীভাবে এলাকার বিদ্যুৎ খাতকে নিয়ন্ত্রণ করতেন তার চিত্র ফুটে উঠেছে। তাদের এমন অপকর্মের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে তাদের নানাভাবে হয়রানির শিকারও হতে হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী রাসেল আহমদের সহযোগিতায় সহকারী প্রকৌশলী পিয়াস দাস এবং কর্মচারী নেপাল আচার্যের সাহায্যে ঘুস, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী তার অফিসের এক কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে প্রতি মাসে সিস্টেম লস দেখানোর টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
জানা গেছে, কুলাউড়ার নার্সারি ফিডারের ভূয়াই এলাকা পর্যন্ত আগে ১১ কেভি লাইন ছিল। সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী রাসেল আহমদ নার্সারি ফিডার পরিবর্তন করে জুড়ী ফিডারে ওই লাইন সংযোগ দেন। একটি অটো রাইস মিলে ৭৫ কিলোওয়াট লোড দিয়ে সেখান থেকে ৬ লাখ টাকা ঘুস নেন। ওই সিন্ডিকেট ভূয়াই এলাকার একটি ব্রিক ফিল্ডে ৫০ কিলোওয়াটের সংযোগ এবং ভালো মিটার থাকা সত্ত্বেও ওই মিটার চলবে না জানিয়ে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা ঘুস নেয়। তারপর তাদের নতুন আরেকটি মিটার লাগাতে বাধ্য করে। ওই ব্রিক ফিল্ডের মালিক নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদত হোসেনের কাছে গেলে তিনি প্রতি কিলোওয়াট ৩ হাজার টাকা করে দাবি করেন। এ ছাড়া উপজেলার গাজীপুরের আরেকটি ব্রিক ফিল্ডে মিটার থাকা সত্ত্বেও ২ লাখ টাকা নিয়ে নতুন আরেকটি বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়, যা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আইনবহির্ভূত বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
অন্যদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লাইন মেরামত ও গাছ কাটা এবং রক্ষণাবেক্ষণ খাতে কোনো কাজ না করে ৫৫ লাখ টাকার বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়। নির্বাহী প্রকৌশলী ও তার সহযোগীরা গ্রাহককে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া, সরকারি প্রি-পেইড মিটার বাবদ ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগপত্রে জানানো হয়।
এ ছাড়া দুর্নীতি ও প্রতারণার আরেক ফাঁদ হলো মিটারে রানিং ইউনিট বেশি থাকলে গ্রাহক ভয়ভীতি দেখিয়ে কম ইউনিটের বিল তৈরি করে নগদ টাকা আদায় করা হয়। মিটার পরিবর্তনের নামে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে ঘুস-বাণিজ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন, সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী রাসেল আহমদ, সহকারী প্রকৌশলী পিয়াস দাস এবং নেপাল আচার্য জড়িত বলে অভিযোগপত্রে জানা গেছে। এদিকে গ্রাহককে কম ইউনিটের বিল তৈরি করে নগদ টাকা ঘুস আদায় করা হয় বলে উপজেলার গাজীপুর, হেলাপুর ও মধ্য হিংগাজিয়া এলাকার বেশ কয়েকজন গ্রাহক অভিযোগ করেছেন।
কুলাউড়া শহরের মাগুরা এলাকার হেলাল উদ্দিন জানান, তার রাইস মিলে ব্যবহৃত মিটারে এক ফেইজে বিদ্যুৎ কম আসত। তিনি বিদ্যুৎ অফিসে কম্পিউটার অপারেটরের দায়িত্বে থাকা শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথমে ১০ হাজার টাকা চান। সেই টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে পরে ৩২ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করা হয়। ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের উত্তর হিংগাজিয়া গ্রামের মখলিছ মিয়া বলেন, মিটার সংযোগের জন্য বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন টাকা নিয়েছিল, তবে তার কিছু টাকা ফেরত দিয়েছেন।
এ বিষয়ে লাইনম্যান নেপাল আচার্য বলেন, বৈদ্যুতিক মিটার ও কেবল না থাকায় সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক সময় বিলম্ব হয়। এ ছাড়া অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে জরিমানা ও মামলা দেওয়া হয়। এতে হয়তো স্বার্থান্বেষী কোনো মহল এমন মিথ্যা অভিযোগ করতে পারে।
সহকারী প্রকৌশলী পিয়াস দাস তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অবৈধভাবে বিদ্যুৎ চুরি করে ব্যবহার করার কারণে অনেকের বিরুদ্ধে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। হয়তো তারাই মিথ্যা অভিযোগ করেছে।
অভিযোগগুলো ভুয়া বলে দাবি করেছেন কুলাউড়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন ও সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী রাসেল আহমদ।