সাবেক আইজিপি সুনামগঞ্জের মামুন ফের রিমান্ডে

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার পৃথক দুই হত্যা মামলায় পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসানের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। 

বুধবার (১৯ মার্চ) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাহীন রেজার আদালত রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে এ দেন।

এদিন যাত্রাবাড়ী থানার সায়েম হত্যা মামলায় পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর আগে তার সাতদিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এছাড়াও এদিন যাত্রাবাড়ী থানার চার হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

অন্যদিকে রাসেল বাকাউল (২২) হত্যা মামলায় যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসানের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। এর আগে এ মামলায় তার তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে রিমান্ডে নেওয়া মামলার সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ী থানার মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজার সামনে আন্দোলনে অংশ নেন ভুক্তভোগী মো. সায়েম হোসেন। এসময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সায়েম। এ ঘটনায় তার মা শিউলি আক্তার গত ২৭ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

আবুল হোসেনকে রিমান্ডে নেওয়া মামলার সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানার সামনের সড়কে আন্দোলনে অংশ নেন ভুক্তভোগী রাসেল বাকাউল (২২)। এসময় পুলিশের হামলায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। পরে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাসেলকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত ২৮ আগস্ট নিহতের বড়ভাই হাসনাত বাকাউল বাদী হয়ে যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন-অর-রশীদ ও সাবেক অতিরিক্ত যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমারকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়।

উল্লেখ্য, সাবকে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে গত ৩ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) গ্রেফতার করে। এর আগে তিনি সেনা হেফাজতে ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় তিনি সেনা হেফাজতে থাকা অবস্থায় আত্মসমর্পণের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে তাঁকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। তিনি একাধিক থানার অন্তত ২০টি মামলায় অভিযুক্ত। মামুনকে কয়েক দফায় ৭০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
 
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এই সরকারে আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল–মামুন। সরকার পতনের পরদিন তাঁর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়।
 
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার শ্রীহাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের ১৯৮৬ তথা অষ্টম ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে ১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট (এএসপি) হিসেবে যোগ দেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। আবদুল্লাহ আল-মামুন পুলিশ সদর দপ্তর, মেট্রোপলিটন পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের দায়িত্ব পালন করেছেন।

আবদুল্লাহ আল-মামুন ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আইজিপি হিসেবে নিয়োগ পান। এর আগে ২০২১ সালের ১৮ অক্টোবর গ্রেড-১ পদোন্নতি পান। চাকরির মেয়াদ পূর্ণ করে গত বছরের ১১ জানুয়ারি তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আরও দেড় বছর পুলিশের সর্বোচ্চ পদে থাকেন। ফলে বিতর্কিত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় তিনিই ছিলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক।