কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
নারী সংস্কার কমিশন বাতিল, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক করিডরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসাসহ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে ১২ দফা ঘোষণাপত্র দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
শনিবার (৩ মে) দুপুরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশে ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন সংগঠনটির নায়েবে আমীর মাওলানা মাহফুজুল হক।
ঘোষণাপত্রের প্রথম দফাতে নারী সংস্কার কমিশন ও প্রতিবেদন বাতিলের পাশাপাশি আলেম ও নারী প্রতিনিধি নিয়ে নতুন কমিশন গঠনের দাবি করা হয়।
বাকি দফাগুলো হলো- সংবিধানে আল্লার উপর পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন ও বহুত্ববাদ বাদ দিতে হবে। শাপলা ও জুলাই গণহত্যার বিচারে ট্রাইব্যুনালের গতি আনতে হবে, নির্বাচনের আগে বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগের বিচার ও তৎপরতা নিষিদ্ধ করতে হবে। চট্টগ্রামে উগ্র হিন্দুত্ববাদের হাতে নিহত সাইফুলের হত্যাকারীদের বিচার করতে হবে। শেখ হাসিনার আমলে দায়ের করা সব রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার ও যারা গুম-খুন করেছে তাদের বিচার করতে হবে। গাজায় হামলা নিয়ে সরকারের অবস্থান ও ভূমিকা রাখতে হবে। প্রাইমারি থেকে সর্বোচ্চ পর্যন্ত ইসলাম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। মানবিক করিডরের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলে ভিনদেশিদের কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে এবং কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।
এছাড়াও নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আগামী ৩ মাসের মধ্যে বিভাগীয় সম্মেলন ও ২৩ মে চার দফা দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা সাজিদুর রহমান।
রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার (৩ মে) সকাল ৯টায় শুরু হয় হেফাজতের মহাসমাবেশ। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতারা।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেন- শেখ হাসিনার মতো ভুল করবেন না। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে কোরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো নীতি বাস্তবায়ন করার সাহস করবেন না। অবিলম্বে প্রতিবেদনসহ নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল ঘোষণা করুন। শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করুন।
আমির আল্লামা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ্ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া মহাসমাবেশের বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতারা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন- হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবন দিতে প্রস্তুত। কিন্তু কোরআন সুন্নাহ বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করবে না।
বক্তারা আরও বলেন- আপনারা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য কমিশন করেছেন, জুলাই আন্দোলনের গণহত্যার জন্য কমিশন করেছেন, ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছেন, কিন্তু মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংঘটিত গণহত্যার বিচারের জন্য কেন তদন্ত কমিশন গঠন করলেন না?
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করা হলেও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। এসব মামলা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন সম্পর্কে সমালোচনা করে হেফাজতে ইসলাম নেতারা বলেন- সরকার নারী বিষয়ক যে সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন এর সদস্যরা নারী না পুরুষ তা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু তারা যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা কোরআন সুন্নাহ বিরোধী। তাদের সংস্কার প্রতিবেদন যদি পাস করা হয় তাহলে জীবন দিয়ে রুখে দেওয়া হবে। মার্চ টু ঢাকার কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে হেফাজতে ইসলাম।
এদিকে, সকাল ৯টায় পবিত্র কুরআন তিলাওয়ার মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া মহাসমাবেশে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন ২০২৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে শহিদ হওয়া মাওলানা ইউনুছ মোল্লা রহ.-এর পিতা।
সকাল ৯টা থেকে সমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও ভোর থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মিছিল নিয়ে জড়ো হতে থাকেন। বেলা ১১টার দিকে দেখা যায়- বিভিন্ন স্থান থেকে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে মহাসমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। মিছিল থেকে নেতাকর্মীরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের বিরুদ্ধে এবং শেখ হাসিনার বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।
সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকেও নেওয়া হয় বিশেষ প্রস্তুতি। ফলে ঘটেনি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা।