রাজনীতিতে কবে নামবেন সিলেটের মেয়ে ডা. জোবাইদা?

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার : 

দীর্ঘ ১৭ বছর পর শাশুড়ির সঙ্গে ৬ মে দেশে এসেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী- সিলেটের কৃতী নারী ডা. জোবাইদা রহমান। ওইদিন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাশাপাশি জোবাইদা রহমানকেও স্বাগত জানিয়ে ব্যানার-পোস্টারও প্রদর্শন করা হয়। জোবাইদাকে ঘিরে সারা দেশের- বিশেষ করে জন্মভূমি সিলেট বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা।

সম্প্রতি ডা. জোবাইদাকে সিলেট-১ আসনে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে চেয়ে মহানগরজুড়ে ব্যানার-পোস্টার সাঁটানো হয়। তারপর থেকে তার রাজনীতিতে আসা নিয়ে চলছে নানামুখী আলোচনা। 

তবে দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে- এখনই রাজনীতিতে আসবেন না সিলেটের এই কৃতী নারী। 

বিএনপি নেতারা বলছেন, সারা দেশের বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ডা. জোবাইদা রহমান রাজনীতিতে আসুন। তাদের সেই প্রত্যাশা থেকে ঢাকা-সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যানার-ফেস্টুন এবং পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনিও রাজনীতিতে আসার কোনো ইচ্ছা প্রকাশ করেননি। এছাড়া দলের মধ্যেও তাকে রাজনীতিতে নিয়ে আসার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক কোনো আলোচনা হয়নি। তাই এটা বলা যায় যে, দীর্ঘ সময় রাজনৈতিক পরিবারের মধ্যে বসবাস করলেও সহসাই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন না তিনি।

দলটির নেতারা আরও বলছেন, খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক ও মানসিক অবস্থা ভালো থাকলেও তিনি পুরোপুরি রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আর তারেক রহমানও চায় না এই মুহূর্তে জোবাইদা রহমান রাজনীতিতে আসুক।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমাদের নেতা কর্মীদের প্রত্যাশা- ডা. জোবাইদা রহমান রাজনীতিতে নামুক। তারই প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিভিন্ন জায়গায় তার নামে এবং তাকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চেয়ে ব্যানার-পোস্টার করা হয়েছে। কিন্তু এটা তার রাজনীতিতে আসার কোনো ঘোষণা নয়। ডা. জোবাইদা রহমান নিজেও রাজনীতিতে আসার কোনো ঘোষণা দেননি এখন পর্যন্ত।’

তিনি আরও বলেন, “আমরাও আনুষ্ঠানিকভাবে তার রাজনীতিতে আসার ইচ্ছার বিষয়টি জানি না। এটা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে কোনো আলোচনা হয়নি।”

তবে বিএনপির অনেকেই মনে করেন- বিশিষ্ট চিকিৎসক হিসেবে ডা. জোবাইদা রহমান বাংলাদেশের স্বাস্থ্য সেক্টরের দায়িত্ব নিলে এটা দেশের জন্য এবং সরকার হিসেবে বিএনপির জন্য খুব ভালো হবে। 

বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, চলতি মাসের (মে) শেষের দিকে লন্ডন ফিরে যেতে পারেন ডা. জোবাইদা রহমান।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন সিলেটের মেয়ে ডা. জুবাইদা রহমান। এরপর একে একে ১৭টি বছর কেটে গেলেও দেশে ফিরতে পারেননি ডা. জোবাইদা রহমান। স্বামী তারেক রহমান ও একমাত্র সন্তান জায়মা রহমানকে নিয়ে লন্ডনে বসবাস করছিলেন।

স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পলায়নে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হওয়ায় সুযোগ হয়েছে দেশে আসার। অবশেষে ৫ মে বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বহনকারী কাতারের রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার উদ্দেশে উড়াল দেন তিনি। পরদিন মঙ্গলবার (৬ মে) বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টা ৪০ মিনিটে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি তাদের নিয়ে ঢাকার হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

প্রথমে জোবাইদা খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় যান। পরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত তাঁর পৈত্রিক বাসা ‘মাহবুব ভবনে’ উঠেন। বাড়িটি তার প্রয়াত বাবা সাবেক নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের বাসভবন ছিলো। তিনি যতদিন দেশে থাকবেন ততদিন দেশে  নিজের অসুস্থ মায়ের সঙ্গেই থাকবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

জুবাইদা রহমানের জন্ম সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়। তিনি মরহুম রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলীর মেয়ে। মাহবুব আলী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের সময়েও তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী জুবাইদা রহমানের চাচা।

জুবাইদা রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে এমএসসি করেন। তিনি চিকিৎসকদের সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ১৯৯৫ সালে চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালে শিক্ষা-ছুটি নিয়ে লন্ডনে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

জুবাইদা রহমান এখনো সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত না হলেও স্বামী তারেক রহমানের পেছনে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। এর বাইরে বিভিন্ন সময় বাবা মাহবুব আলীর মৃত্যুবার্ষিকী এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রামসহ অনেক সামাজিক প্রোগ্রামে তাকে দেখা যায়। তিনি জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ওভারসিজ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান এবং শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা করে হাসিনার শাসনাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০২৩ সালের এক রায়ে ঢাকার একটি আদালত জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আদালতের দেওয়া ওই সাজা স্থগিত হয়।

সর্বশেষ জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে হাইকোর্টে করা ডা. জোবাইদার আপিলের শুনানি ছিলো বৃহস্পতিবার (২২ মে)। তবে বৃহস্পতিবার বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আপিলের প্রথম দিনের শুনানি শেষে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। 

ডা. জোবাইদা রহমানের আপিলের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন- সিনিয়র আইনজীবী এস এম শাহজাহান, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন ভূইয়া।

আর দুদকের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী আসিফ হাসান।

এর আগে বুধবার (২১ মে) সকালে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বৃহস্পতিবারের তারিখ নির্ধারণ করেন।

তার আগে ১৩ মে দুর্নীতি মামলায় ৩ বছর সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন ডা. জোবাইদা রহমান। আপিলের জন্য জোবাইদা রহমানকে ৫৮৭ দিনের বিলম্ব মার্জনা করেন হাইকোর্ট।