কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দিল্লিতে ঈদ করেছেন ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। গত শুক্রবার ৬ জুন ভারতে আসেন জয়। তার পরদিনই ছিল কোরবানির ঈদ। ভারতের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলোর একাধিক সূত্র এবং ভারতে পালিয়ে আসা আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বিবিসিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়, সজীব ওয়াজেদ জয় এখন দিল্লিতে মায়ের কাছেই রয়েছেন। সফরটি পারিবারিক বলেও সূত্রগুলো বিবিসিকে জানায়।
এদিকে কলকাতায় পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অলীক স্বপ্নে বিভোর। তাদের ধারণা- বিএনপির সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করতে পারেন। আর তিনি পদত্যাগ করলে আইনি জটিলতা কী হতে পারে, তা নিয়েই আওয়ামী পলাতকদের মধ্যে চলছে বিভিন্ন আলোচনা। এ খবরে বেশি উদ্দীপনা জেগেছে কলকাতার নিউ টাউনে অবস্থান করা আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে। নড়েচড়ে বসেছেন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর কর্তারাও। সক্রিয় হয়েছে বেশকিছু ‘স্লিপার সেল’।
হাসিনাপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে এক-এগারো স্টাইলে বাংলাদেশের ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করছে নয়াদিল্লি- এমনটাই বিশ্বস্ত সূত্রের খবর। ‘চিকেন নেক’-সহ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় আর্মির নজরদারি বৃদ্ধির পেছনেও এই ফ্যাক্টর কাজ করছে বলে ওয়াকিবহাল মহলের মত। জয় এখন আমেরিকার নাগরিক। তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট বাতিল হয়ে গেছে। তবে তিনি আবেদন করে ভারতে এসেছেন। লুটিয়েন দিল্লি, যেখানে তার মা শেখ হাসিনাকে আন্ডারগ্রাউন্ড করে রেখেছেন অজিত দোভাল, সেখানে মায়ের সঙ্গে ঈদ করেছেন জয়। সেজন্য কলকাতা থেকে বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট আওয়ামী লীগ নেতা ইতোমধ্যে দিল্লি পৌঁছেন।
তবে জানা গেছে, শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) অজিত দোভালের সঙ্গে বৈঠকের পর কলকাতায় আসতে পারেন জয়। এখানে আশ্রিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করার কথা তার। ড. ইউনূস সরকারের টালমাটাল পরিস্থিতিতে দারুণ এক গেম প্ল্যান তৈরি করছেন তিনি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- শেখ হাসিনা কেন কলকাতায় আসবেন না।
এক্ষেত্রে জানা গেছে, তিনি এখন শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। দিল্লির এ সূত্রের খবর বলছে, তার বাকশক্তিজনিত সমস্যা হচ্ছে। তাই আপাতত দিল্লির গোপন ডেরায় বসেই ছেলেকে সামনে এগিয়ে দিচ্ছেন হাসিনা।
নিউ টাউনে এসে হোটেল ওয়েস্টিনে উঠবেন জয়-এমন কানাঘুষা শোনা গিয়েছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছ থেকে। তবে তিনি মায়ের কাছেই রয়েছেন বলে জানা গেছে। তার গোপন মিটিংগুলো হবে একাধিক জায়গায়। সেক্ষেত্রে বিলাসবহুল নভোটেল, প্রাইড প্লাজা হোটেল ও হায়াত রিজেন্সির মতো পাঁচতারকা হোটেলকেই তারা বেছে নেবেন বলে জানা যাচ্ছে। এগুলোয় হাই-সিকিউরিটি থাকে। আর আওয়ামী লীগ নেতারা জয়ের জন্য কলকাতায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাইছেন।
ইউনূস সরকার যদি বিএনপির সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে টালমাটাল পরিস্থিতিতে চলতে থাকে, তবে আগামী এক মাস জয় কলকাতায় ঘাঁটি গাড়তে পারেন। এখান থেকেই কিছু বিশ্বস্ত নেতাকর্মীকে বাংলাদেশে ঢোকানোর ছকও রয়েছে তার। ভাড়া করা হচ্ছে স্থানীয় গুন্ডা, বাউন্সারকেও। ইতোমধ্যেই বিএনপি ও এনসিপিকর্মীর ছদ্মবেশে বহু আওয়ামী লীগার ঢাকায় রয়েছেন। তারা স্যাবোটাজ করবেন এ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে-এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। এখন যদি বাংলাদেশের বিএনপি, এনসিপি, জামায়াতে ইসলামী, আর্মি চিফ ওয়াকার-উজ-জামান একজোট হয়ে ইউনূস সরকারকে সমর্থন না দেয়, তবে শিগগিরই বড় কিছু করার নীলনকশা প্রস্তুত রেখেছে কলকাতা নিউ টাউনের আওয়ামী লীগ। এর নেতৃত্বে রয়েছেন হাসিনা ও জয়।
জানা গেছে, বিপুল অর্থবিত্ত নিয়ে কলকাতায় পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা এখন ভালো অবস্থায় রয়েছেন। তারা স্থানীয় প্রশাসনের সুবিধা পাচ্ছেন, ব্যবসায়ও উপার্জন করছেন ইনভেস্টের মাধ্যমে। স্থানীয় পত্রিকায় তাদের সাক্ষাৎকার ছাপা হচ্ছে। সম্প্রতি পালিয়ে আসা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার ছেপেছে আনন্দবাজার পত্রিকা। ফলে আওয়ামী নেতাদের সাহস বেশ বাড়ছে। ওবায়দুল কাদের তো বলেছেনই, এখনো তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার দল আওয়ামী লীগকে তিনি কলকাতা থেকেই পরিচালনা করবেন।
কলকাতার অভিজ্ঞ রাজনৈতিক মহলের মতে, তাদের হালকাভাবে নেওয়া ঠিক হবে না বাংলাদেশের। তারা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসে প্রায় এক বছর এখানে ঘাঁটি গেড়েছেন। শত শত পলাতক আওয়ামী লীগারের মধ্যে বাহাউদ্দিন নাছিমের মতো নেতারাও এখানে রয়েছেন। নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন এলাকারই বিলাসবহুল আবাসন ‘পূর্তি ভেদা’ ও ‘ওয়ান টেন’ আবাসনে প্রচুর বাংলাদেশি আশ্রয় নিয়েছেন গত ১০ থেকে ১১ মাসে। তাদের মধ্যে হাইপ্রোফাইল লোকও আছেন, যারা কালো কাচের গাড়িতে চলাফেরা করেন। মাঝেমধ্যে তাদের দেখা যায় নিকটবর্তী অ্যাকোয়াটিকা পার্কেও। সেখানে দারুণ জলকেলির ব্যবস্থা রয়েছে।
অ্যাকোয়াটিকা পার্কের এক কর্মী জানিয়েছেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন প্রচুর আসছে এবং তারা ল্যাপটপে দফায় দফায় দীর্ঘ মিটিং করেন। প্রকৃতপক্ষে জুম ভিডিওতে মিটিং হয় জয় ও হাসিনার সঙ্গে। কলকাতা-নিউ টাউনের ‘অভয়ারণ্যে’ আশ্রয়ে আছেন অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র শীল (বরিশালের বানারীপাড়া পৌরসভার মেয়র), এরশাদ আলম (ওয়ার্ড সভাপতি, ঢাকা-শাহবাগ এলাকা), পারুল আক্তার (ঢাকা), অসীম কুমার উকিল, অপু উকিল, আসাদুজ্জামান খান কামাল, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ (ইনান), আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী প্রমুখ।
এ ছাড়া মাদারীপুরের সাবেক সংসদ সদস্য নূরে আলম চৌধুরী লিটন, সিলেট স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবসার আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠুও কলকাতায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন জেলার ইউনিয়ন পরিষদের অনেক চেয়ারম্যানও কলকাতায় রয়েছেন। ওবায়দুল কাদেরও এখানে ছিলেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে জয় দিল্লি থেকে কলকাতায় এলে ফের সবাই এখানে জড়ো হবেন।
কলকাতার বিশেষজ্ঞদের মতে, জয়-হাসিনার পরিকল্পনা ফলপ্রসূ হলে রাষ্ট্রপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে দিতে পারেন, যে সরকার শুধু নির্বাচন করবে। আর সে সুযোগই কাজে লাগাতে চাইছেন জয়-হাসিনা। অর্থ বিলিয়ে ও কলকাতা থেকে লোক নিয়ে জোরপূর্বক ভোট করে ফের ক্ষমতার স্বাদ নিতে চায় আওয়ামী লীগ। আর এবার ক্ষমতার স্বাদ চেখে দেখার জন্য প্রস্তুত সজীব ওয়াজেদ জয়ও।
(মূল রিপোর্ট : আমার দেশ)