কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
গত বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সিলেটে এক প্রবাসীর বাড়ির দখলদারও বদলে যায়। আগে ছাত্রলীগ নেতারা বাড়িটির দখলে থাকলেও গত ৫ আগস্টের পর এক ছাত্রদল নেতার কাছে বাড়ির দখল হস্তান্তর করেন তারা। ওই প্রবাসী দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করেও বাড়ি উদ্ধার করতে পারছিলেন না। তবে শনিবার পুলিশ ও এলাকাবাসীর সহায়তায় নিজ বাড়িতে উঠেন তিনি।
ভুক্তভোগী প্রবাসীর নাম সুহেল বেগ। তিনি সিলেট নগরীর শামীমাবাদ এলাকার বাসিন্দা।
সুহেল বেগ পুলিশি সহায়তায় বাড়ি উদ্ধার করতে পারলেও আতঙ্ক তাড়া করছে তাঁকে। তিনি দখলদারদের কবল থেকে বাড়ি উদ্ধারের পর সেখানে তালা মারেন। এর পর দখলদাররাও সেখানে পাল্টা তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই প্রবাসী।
জানা গেছে, সিলেট নগরীর শামীমাবাদ এলাকার ৫ নম্বর রোডের ২০৫ নম্বর বাড়িটি সুহেল বেগসহ যুক্তরাজ্য প্রবাসী চার ভাইয়ের। ২০১৮ সাল থেকে বাড়িটি দখল করে রাখেন মহানগর ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম তুষারসহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। তারা প্রবাসীকে বের করে দিয়ে চারতলা বিশিষ্ট বাড়িটি দখলে নিয়ে ভাড়াটিয়া ঢুকিয়ে দেন। গত বছর আওয়ামী লীগের পতনের পর বাড়িটির দখল নেয় মহানগর ছাত্রদলের স্কুলবিষয়ক সম্পাদক এস এম ফাহিম ও তাঁর সহযোগীরা। গত নভেম্বর থেকে তারা ওই বাড়ির ভাড়াটিয়াদের থেকে ভাড়া তুলতে শুরু করেন।
কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১৯৯৯ সালে নগরীর বাগাবড়ি মৌজায় ৯.৮ শতক জায়গা কেনেন সুহেল বেগ এবং তাঁর তিন ভাই সালেহ বেগ, সুয়েব বেগ ও এহিয়া বেগ। ২০০৪ সালে তারা সেখানে চারতলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণ করেন। জাল নথিপত্র তৈরির মাধ্যমে ২০১৮ সালে ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল আলিম তুষার ও যুবলীগ নেতা শামীম খানসহ কয়েকজন বাড়িটি দখল করে নেন। এক পর্যায়ের বাড়িটির নাম মাতৃমহল পরিবর্তন করে হোয়াইট হাউস রাখে দখলদাররা।
সুহেল বেগ জানান, তাঁর বাসায় গত কয়েক মাস ধরে ছাত্রদল নেতা এস এম ফাহিম ও তাঁর লোকজন বসবাস করছিলেন। তিনি সম্প্রতি দেশে ফেরার পর বাসাটি উদ্ধারের চেষ্টা করেন। গত ২ জুন তিনি সাতজনের নাম উল্লেখ করে ভূমি প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইনে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। থানা থেকে উভয়পক্ষকে বাড়ির কাগজপত্র নিয়ে থানায় হাজির হতে বলা হলেও তাঁর প্রতিপক্ষ আসেনি। পরে পুলিশের সহায়তায় তিনি বাড়িতে গিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে বসবাসকারীদের সরে যেতে বলেন। সর্বশেষ পুলিশ শনিবার এলাকাবাসীর সহায়তায় তাঁকে বাড়ির দখল বুঝিয়ে দেয়।
ঘটনা নিশ্চিত করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও থানার সেকেন্ড অফিসার উপপরিদর্শক আব্দুল আলীম জানান, পুলিশ ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বর্তমানে ওই প্রবাসী তাঁর বাসায় অবস্থান করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ছাত্রদল নেতা ফাহিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যক্তিগত নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হলে ফোন বন্ধ পাওযা যায়।
স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আব্দুল হেকিম বলেন, আগে ছাত্রলীগের নেতাদের দখলে বাসাটি ছিল। পরে কারা সেখানে অবস্থান করছিল সেটা তিনি জানেন না। এখন বাড়ির মালিক সেখানে অবস্থান করছেন বলে তিনি শুনেছেন। প্রয়োজনের বাড়ির মালিককে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
(মূল রিপোর্ট : সমকাল)