কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
‘পেহেলগাম’। কাশ্মীরের চোখজুড়ানো একটি স্থান। এক নামে সবই চিনে। সেই ‘পেহেলগাম’ যেন নেমে এসছে এবার সিলেটে!
সবুজে মোড়া বিস্তৃত মাঠ, মাঝখানে ক্রিকেট পিচ ঘিরে কিছু তরুণ খেলছে, পেছনে উঁচু পাহাড় থেকে নেমে এসেছে ঝরনাধারা। ভাইরাল হওয়া এমন ভিডিওর কল্যাণে জায়গাটাকে এখন কেউ বলছেন ‘বাংলার কাশ্মীর’, কারও কাছে ‘সিলেটের পেহেলগাম’। জায়গাটি সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ছোট্ট জনপদ নলজুড়ি গ্রামে।
পাহাড়, ঝরনা আর সবুজ প্রান্তর নিয়ে গোয়াইনঘাটের ছোট্ট এক জনপদ নলজুড়ি। কিছুদিন আগেও অল্প পরিচিত এলাকাটি এখন ভাইরাল। স্থানীয় লোকজন একে বলেন ‘খাসি হাওর’। কেউ বলেন খাসিয়া হাওর। মেঘালয় পাহাড়ে খাসিয়াদের আদি নিবাস। এ জন্যই এই নাম।
শ্রীপুরের রাংপানি এখন সবার চেনাজানা। এই শ্রীপুর, মোকামপুঞ্জি আর আলুবাগান পার হয়েই নলজুড়ি। তামাবিল সড়কের এখানেই শুরু গোয়াইনঘাট উপজেলা। প্রায় ৫১ কিলোমিটার পেরিয়ে, দুই ঘণ্টারও কিছু বেশি সময় পর আমরা পৌঁছাই নলজুড়ি বাজার। তখন বিকেলের আলো নরম হয়ে এসেছে। বাজারের বাঁ দিকে জেলা পরিষদ ডাকবাংলো। আর ডান দিকের এক কিলোমিটার মেঠো পথ ধরে এগোতেই সবুজে মোড়া খেলার মাঠ। মাঠ ঘেঁষা মেঘালয়ের জৈন্তা-খাসিয়া সবুজ পাহাড়।
পাহাড়ের পাদদেশে খেলার মাঠ। পাহাড়ের বুক ছুঁয়ে মাঠের দিকে নেমে এসেছে দুটি ঝরনা। মাঠ লাগোয়া খাসি খালে গড়িয়ে পড়ছে স্বচ্ছ পানি। কেউ কেউ এটাকে নলজুড়ি খালও বলেন। জৈন্তাপুর উপজেলা ও গোয়াইনঘাট উপজেলাকে আলাদা করেছে এই খাল। পূর্বে জৈন্তাপুর, পশ্চিমে গোয়াইনঘাট।
এক বিকেলের দৃশ্য- মাঠে ক্রিকেট খেলা চলছে। কেউ ঘুরে ঘুরে মাঠ দেখছেন, কেউ আবার বসে বসে উপভোগ করছেন ঝরনাধারার দৃশ্য, খালের পানিতে নেমে কেউ কেউ গোসলও করছেন।
দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ও সিলেট-তামাবিল সড়ক হয়ে ব্যক্তিগত মোটরবাইক এবং সিএনজিতে করে সরাসরি যাওয়া যাবে মাঠের কাছে। সিলেট থেকে জাফলংগামী লোকাল বাসের ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা। আর বিরতিহীন বাসে ১৫০ টাকায় পৌঁছানো যাবে নলজুড়ি বাজার পর্যন্ত। এখান থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় যেতে পারেন নলজুড়ি মাঠ।
পর্যটনস্থানটি ভারত সীমান্তবর্তী। তাই ঘুরে বেড়ানোর সময় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ও স্থানীয়দের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি হয়, এমন কাজ থেকে থাকতে হবে বিরত।
স্থানীয় লোকজন জানালেন, বর্ষাকালে ঝরনাটি আরও প্রমত্তা হয়ে ওঠে। মাঠ পর্যন্ত চলে আসে পানির ধারা। মাঠের পশ্চিমে চোখ রাখলেই দেখা যায় সারি সারি সুপারিগাছ। পাহাড়ের ঢালজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলো বাতাসে দুলছে। গাছের পাতায় রোদের আলো পড়ছে, এই আলোছায়ার খেলা শুধু চোখে দেখলেই বোঝা যায়।
বারো মাসই সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে বসে থাকে নলজুড়ি। যাঁরা প্রকৃতিকে নিজের মতো রেখে তার সান্নিধ্যে নিতে চান, ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে নির্জন জায়গায় সময় কাটাতে যাঁদের ভালো লাগে, তাঁদের জন্য নলজুড়ি হতে পারে এক আদর্শ গন্তব্য।
(মূল রিপোর্ট : প্রথম আলো)