আলেম-সমাজের অগ্রণী ভূমিকায় শান্তি ফিরছে নবীগঞ্জে

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

৭ জুলাই থেকে পরবর্তী কয়েকদিন হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ পৌরশহর ও আশপাশ কয়েকটি গ্রাম ছিলো রণক্ষেত্র- উত্তপ্ত। দফায় দফায় সংঘর্ষে মারা যান দুজন, আহত হন প্রায় ২০০ জন। তবে আলেম-সমাজের অগ্রণী ভূমিকায় এবার শান্তি ফিরছে অশান্ত নবীগঞ্জে।

বিবাদমান দুপক্ষকে নিয়ে সমঝোতা-বৈঠকে বসার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ২৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। এই কমিটিতে রয়েছেন আলেম-সমাজের প্রতিনিধিরা। 

সংঘর্ষের পর ওই এলাকায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন প্রখ্যাত ইসলামিক বক্তা মাওলানা নুরুল হক নবীগঞ্জী এবং দরগাহ মসজিদের ইমাম ও খতিব- দরগাহ কাসিমুল উলুমের নায়েবে মুহতামিম মাওলানা হাফেজ আসজাদ আহমদসহ আরও কয়েকজন আলেম।

জানা গেছে, আলেম-সমাজ ও স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের প্রস্তাবে ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নবীগঞ্জের সংকট উত্তরণে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় উপজেলা প্রশাসক কার্যালয়ের হল রুমে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমি। 

সভায় ২৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে দিয়ে সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়- সংঘর্ষে নিহতদের বাড়ি গিয়ে পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন, গঠিত কমিটি বিবাদমান উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ৫ দিনের মধ্যে পরবর্তী সালিশ-বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ এবং দফায় দফায় সংঘর্ষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ প্রণয়ন ও ব্যবসায়িক পরিবেশ দ্রুত ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা গ্রহণের।

সভায় গঠিত উপদেষ্টা কমিটির সদস্যরা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সুজাত মিয়া, জামায়াত নেতা মো. শাহজাহান আলী, ডা. আবুল ফতেহ ফাত্তাহ, ছাবির আহমদ চৌধুরী, হাফিজ মাওলানা আসজাদ আহমদ, মজিবুর রহমান চৌধুরী শেফু ও সৈয়দ মতিউর রহমান।

সালিশ কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন-  মনসুর আলী খান, অ্যাডভোকেট মো. আবুল ফজল, মো. ফখরুল ইসলাম কালাম, মো. খালেদ আহমদ পাঠান, মাওলানা আশরাফ আলী, সরফরাজ আহমদ চৌধুরী, সৈয়দ খালেদুর রহমান, মাওলানা নুরুল হক, মো. আবুল হোসেন জীবন, মো. বজলুর রশিদ, শেখ ছাদিকুর রহমান শিশু, মো. শিহাব আহমদ চৌধুরী, মাওলানা শোয়াইবুর রহমান, অ্যাডভোকেট মুদ্দত আলী, মো. সাইদুল হক চৌধুরী সাদিক, মাস্টার সোহেল আহমদ, অধ্যক্ষ সোহেল আহমদ, মো. এহসান হাদী রুম্মান, মো. আব্দুল বারিক রনি, ডা. শাহ আবুল খায়ের, শফিকুর রহমান ও এস.আর. চৌধুরী সেলিম।

এ বিষয়ে উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য- দরগাহ মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফিজ মাওলানা আসজাদ আহমদ কওমি কণ্ঠকে বলেন- নবীগঞ্জ অশান্ত হওয়ার পর আমরা আলেম-সমাজ এগিয়ে যাই এবং এই সংকটসহ আগামী দিনের কথা চিন্তা করে উপজেলার প্রায় ৩ শ আলেম নিয়ে কয়েক দিন আগে একটি সভা করি। সেই সভায় ‘নবীগঞ্জ উলামা ঐক্য পরিষদ’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন গঠন করা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন এবং আমাদের এই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করে বর্তমান বিবাদের বিষয়ে আলোচনা করে সমঝোতার প্রস্তাব দেই। আমাদের প্রস্তাবের আলোকে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আজকের (বৃহস্পতিবার) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- বিবাদমান উভয়পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ৫ দিনের মধ্যে পরবর্তী সালিশ-বৈঠকের প্রক্রিয়া ইতোমধ্য আমরা শুরু করেছি ইনশা আল্লাহ।এছাড়া ‘নবীগঞ্জ উলামা ঐক্য পরিষদ’র নেতৃবৃন্দ নিহতদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জ্ঞাপন করি এবং নিহতদের কবর জিয়ারত করি। সকলের সহযাগিতায় ইনশা আল্লাহ এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। আশা করছি, বিষয়টির একটি সুন্দর সমাধান আসবে।

তিনি আরও বলেন- আজকের বসার পরিবেশ তৈরির পেছন আলেম-সমাজের পাশাপাশি সিলেটস্থ নবীগঞ্জ সমিতি এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের ভূমিকাও ছিলো উল্লেখযোগ্য।

উল্লেখ্য, স্থানীয় দুই সাংবাদিকের পরস্পরের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কটূক্তি নিয়ে প্রথম বিরোধ দেখা দেয় নবীগঞ্জে। পরে এ বিরোধ গড়ায় গোষ্ঠীগত। একপর্যায়ে জড়িয়ে পড়েন কয়েকটি গ্রাম। ৭ আগস্ট দিনভর সংঘর্ষে পূর্ব তিমিরপুর গ্রামের বাসিন্দা অ্যাম্বুলেন্স চালক ফারুক মিয়া মারা যান। ঘটনার চারদিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিমন মিয়া নামে আরেকজন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে।