কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায় আওয়ামী লীগের এক নেতাকে গ্রেফতার করে দলীয় পরিচয় গোপন করে অন্য মামলায় আদালতে চালান দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ওসি মো. এনামুল হকের বিরুদ্ধে।
ওই মামলায় শাহজামান মিয়া (৩৫) নামের ওই আওয়ামী লীগ নেতা জামিন পেলে তাকে আর কারাগারে যেতে হয়নি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের পলাতক সাবেক এমপি এডভোকেট রঞ্জিত সরকারের সহযোগী ছিলেন শাহজামান। বিগত সরকারের আমলে জলমহাল লুটপাট, স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি, প্রভাব খাটিয়ে সরকারি বাধ কর্তন করে কৃষকদের ফসল নষ্ট করাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে শাহজামানের বিরুদ্ধে।
সূত্র জানায়, ধর্মপাশা উপজেলার সরিষাকান্দা ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা মৃত জসিম উদ্দিনের পুত্র শাহজামান মিয়া স্থানীয় আওয়ামী লীগের পদবীধারী নেতা। তিনি উপজেলার সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। এই পদবী ব্যবহার করে শাহজামান এলাকায় বিগত দিনে বেপরোয়া হয়ে উঠেন। রঞ্জিত সরকার জুলাই আন্দোলনে সরাসরি অংশ নিয়ে বিরোধী পক্ষের উপর হামলা চালায় শাহজামান। ৫ আগস্টের পর কতিপয় বিএনপি নেতার সেল্টারে তিনি বেপারোয়া হয়ে উঠেন। পুনরায় এলাকায় জলমহাল দখল, সুখাইড় রাজাপুর উত্তর ইউনিয়নের চুনাই নদীর বাধ কেটে দিয়ে ফিসারী মালিক ও কৃষি ক্ষেতের ব্যপক ক্ষতি সাধন করে।
সূত্র দাবি করেছে, উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সেন্টারে সে প্রকাশ্যে রাহাজানি করে আসছিলো। এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ধর্মপাশা থানার এসআই নিরঞ্জন পাল ফোর্স নিয়ে গত শনিবার রাতে সরিষাকান্দা ইসলামপুর বাজারে অভিযান চালিয়ে শাহজামানকে গ্রেফতার করে। তাকে গ্রেফতারের পরপরই স্থানীয় এলাকাবাসী শাহজামান যে, আওয়ামী লীগ নেতা ও তার প্রভাবের বিষয়ে কাগজপত্র ওসির কাছে জমা দেন। কিন্তু ওসি আওয়ামী লীগের পরিচয় গোপন করে ধর্মপাশা থানার এফআইআর নং-২ (০২/০৭/২০২৫) মামলায় আদালতে চালান দেয়। অভিযোগ রয়েছে, কতিপয় বিএনপি নেতা ও ওসির যোগসাজসে আওয়ামী লীগ নেতা পরিচয় গোপন করে আদালতে চালান দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এর সুবিধা নেয় আসামী শাহজামান। রোববার দুপুরে আদালতে চালান দিলে তার আইনজীবী জামিন প্রার্থনা করলে আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মুরাদ জানান, ‘বাঁধ কাটার অভিযোগে তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গিয়েছিলেন। একই সাথে সে যে আওয়ামী লীগ নেতা ও রঞ্জিত সরকারের সহযোগী তা আমরা থানার ওসিকে জানাই। কিন্তু ওসি বিষয়টি আমলে নেননি।’ এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী বলেন, শাহজামান আওয়ামী লীগ নেতা ও রঞ্জিত সরকারের সহযোগী হিসেবে জানি। সে গ্রেফতার হলে ওসি কেন আওয়ামী লীগ নেতা জানার পরও পরিচয় গোপন করলেন সে বিষয়ে উপরমহলকে অবহিত করবো। তিনি বলেন, শাহজামানের মামলায় গ্রেফতার দেখানো, বা জামিনের বিষয়ে তার কিছু জানা নেই। তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তিনি অস্বীকার করেন।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা শাহজামান বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ করি ঠিকই, ওয়ার্ড সভাপতি ঠিক আছে; কিন্তু এর প্রভাব আমি দেখাইনি। বাধ কাটা মামলায় আমাকে চালান দিয়েছে, আদালত আমাকে জামিন দিলে আর কারাগারে যাইনি।
তিনি আরো বলেন, রঞ্জিত বাবুর সাথে নির্বাচনের সময় মিছিল মিটিংয়ে গিয়েছি। সাধারণ মানুষকে দলের প্রভাব দেখিয়ে হয়রানি করিনি। ওসি সাহেব আমার আচরণে খুশি হয়ে অন্য মামলা দেননি, বাধের মামলায় চালান দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে ধর্মপাশা থানার ওসি মো: এনামুল হক দাবি করেন, তিনি আদালতে চালান দেয়ার পর আওয়ামী লীগের পরিচয় জানতে পেরেছেন। এর আগে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মামলায় আদালতে চালান দেয়া হয়। আঁতাত করে আওয়ামী লীগ পরিচয় গোপন করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
(মূল রিপোর্ট : সিলেটের ডাক)