ইসলাম ও সমাজ : হজযাত্রীর পূর্ব-করণীয়

মো. আবুবকর সিদ্দীক

ইসলামী শরিয়তের বিধান অনুসারে হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয় মিনা, আরাফাহ, মুজদালিফা, হারামাইন শরিফ ও তৎসংলগ্ন সাফা-মারওয়া পাহাড়ে। এ কারণে হজ পালনের জন্য সৌদি আরবের বাইরের দেশগুলোর হাজিদের সৌদিতে যেতে হয়। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম হলো হজ। হজ আবশ্যিক বা ফরজ ইবাদত। যেসব মুসলিম নর-নারীর শারীরিক সক্ষমতার পাশাপাশি আর্থিক সামর্থ্য রয়েছে, কেবল তাদের জন্যই জীবনে একবার হজ পালন ফরজ।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৫ সালের জুনের প্রথম সপ্তাহে পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজব্রত পালনের সুযোগ পাবেন। ইতোমধ্যে হজযাত্রী নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং তা ৩০ নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত চলবে। হজ একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় ও সময়াবদ্ধ কার্যক্রম। সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ অনুসরণ করে বাংলাদেশ ও সৌদি সরকারের যৌথ ব্যবস্থাপনায় হজের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পাদিত হয়ে থাকে। এ রোডম্যাপ অনুসরণে বিচ্যুতি ঘটলে সার্বিক হজ ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন ঘটে।


হজ ও ওমরাহ বিধিমালা-২০২২ অনুসারে হজ এজেন্সিগুলো হজযাত্রীদের সঙ্গে আবশ্যিকভাবে চুক্তি করবে। এ চুক্তিতে মক্কা ও মদিনার বাড়ি বা হোটেলের মান, দূরত্ব এবং মিনার তাঁবুর জোন ও সার্ভিস কোম্পানির ব্যয়সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার বিবরণ আবশ্যিকভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। এজেন্সির প্রস্তুতকৃত হজ প্যাকেজ এজেন্সির নিজস্ব ওয়েবসাইট এবং ই-হজ সিস্টেমে আপলোড করতে হবে। হজযাত্রীরা বেসরকারি মাধ্যমে হজ পালনে ইচ্ছুক হলে প্যাকেজ মূল্য ও প্রদেয় সেবা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে এজেন্সির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হবেন।
ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হজ কার্যক্রমের জন্য ‘নির্ধারিত ব্যাংক হিসাব’ ব্যতীত অন্য কোনো মাধ্যমে হজের টাকা এজেন্সিকে দেওয়া যাবে না। সব বিষয়ে এজেন্সি মালিক বা তার নিয়োগকৃত প্রতিনিধি ছাড়া অন্য কোনো মধ্যস্বত্বভোগী বা দালালের  কোনোরূপ চুক্তি বা আর্থিক লেনদেন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
শিশুদের নিবন্ধন অভিভাবকের সঙ্গে একত্রে করতে হবে। হজ শেষে শিশু বা নবজাতকের বিমান ভাড়ার ফেরতযোগ্য অংশ প্রাপ্তির জন্য সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতার কারণে হজে যেতে সক্ষম না হলে জমাকৃত অর্থের অব্যয়িত অংশ হজযাত্রীকে ফেরত প্রদান করা হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস, হৃদরোগের মতো অসুস্থতার জন্য প্রেসক্রিপশনসহ নিয়মিত সেবন করতে হয় এরূপ ওষুধ, স্ট্রিপ ইত্যাদি অবশ্যই সঙ্গে নিতে হবে।

সৌদি আরবে হজযাত্রীকে নুসুক কার্ড, পরিচয়পত্র, মোয়াল্লেম কার্ড ও হোটেলের কার্ড সার্বক্ষণিক সঙ্গে রাখতে হবে।
সৌদি আরবে অবস্থানকালে রাজনীতি, বিক্ষোভ প্রদর্শন, মানববন্ধন, ভিক্ষাবৃত্তি, চুরিসহ সব রকম অনৈতিক ও অপরাধমূলক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় সে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। রাজকীয় সৌদি সরকারের পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বা হজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তির কাজে বাধা প্রদান বা তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা যাবে না।

হজ সফরে মৃত্যুবরণকারী হজযাত্রীকে সৌদি আরবে দাফন করা হয়ে থাকে। হজ শেষে মৃত্যু সনদ হজ অফিস, ঢাকার মাধ্যমে মৃতের ওয়ারিশ বা বৈধ প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করা হয়। লাগেজ হারিয়ে গেলে বাংলাদেশ হজ অফিস, জেদ্দা, মক্কা বা মদিনায় সরাসরি বা এজেন্সির মোনাজ্জেম বা গাইডের মাধ্যমে অবহিত করতে হবে। দেশে ফেরার পথে লাগেজ হারানো গেলে এ-সংক্রান্ত তথ্য এয়ারপোর্টের ‘লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড’ সেকশনে জানাতে হবে। জেদ্দা, মক্কা ও মদিনায় স্থাপিত মেডিকেল সেন্টার থেকে হজযাত্রীরা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারবেন। হজব্রত পালনের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক। পরিকল্পিত পদক্ষেপের মাধ্যমে অগ্রসর হলে হজের ন্যায় গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটি সহজ ও সাবলীলভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব। 

লেখক: ধর্ম মন্ত্রণালয়ে কর্মরত