কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর আগামী অক্টোবরের প্রথম দিকে পূর্ণাঙ্গরূপে যাত্রা শুরু করবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন- এটি হবে পর্যটনবান্ধব স্থলবন্দর। পর্যটকদের জন্য থাকছে পার্কিং, চিকিৎসা, আহার ও থাকার ব্যবস্থা।
দেখা গেছে, পাশাপাশি বিশাল ক্যাফেটেরিয়া, মসজিদ, কাচঘেরা দোতলা পোর্ট ভবন ও তিনতলা মাল্টি এজেন্সি ভবন, একটি গেস্ট হাউস, দুটি ডরমিটরি ও একটি ক্লিনিক। প্রতিটি স্থাপনার পথ আলাদা। এক প্রাচীরের ভেতর হলেও একটা থেকে আরেকটা দূরে রাখা হয়েছে। শেষ মুহূর্তের ঘষামাজা ও রঙের কাজ চলছে। আঙিনায় খালি জায়গায় গাছ লাগানোর প্রস্তুতি চলছে।
দুই মাস হাতে সময় থাকতে শেষ করা হয়েছে নির্মাণকাজ। উদ্বোধনের আগে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর অর্থদাতা প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল সরেজমিন পরিদর্শন করবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জিরো পয়েন্ট পার হয়ে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক প্রধান ফটক দিয়ে সোজা চলে যাবে ওয়েট স্কেলে। কাস্টমস শেষে যে রাস্তা দিয়ে বের হবে ঠিক ফেরার পথে আরেক রাস্তায় একইভাবে প্রধান ফটক পার হবে।
কথা হয় ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের প্রকল্প পরিচালক সারোয়ার আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এটি পর্যটনবান্ধব স্থলবন্দর। সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্র মাথায় রেখে অনেক কিছু এখানে করা হয়েছে। বন্দর চালু হলে শুধু রাজস্ব বাড়বে না, এলাকার পরিবেশও বদলে যাবে। ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বন্দরের ভেতর রেস্তোরাঁ, গেস্ট হাউস ও মসজিদ ব্যবহার করতে পারবেন ভ্রমণকারীরা। একটি মেডিকেল সেন্টার করা হয়েছে, যা শুধু বন্দরের লোক নয়, পর্যটক এবং স্থানীয়রা সেবা নিতে পারবেন।
সারোয়ার আলম বলেন, বর্তমানে চুনাপাথর আসছে। ভবিষ্যতে আমদানি-রপ্তানির বিষয়টি মাথায় রেখে বন্দর নির্মাণ করা হয়েছে।
বন্দর সূত্র জানায়, ২০০৫ সাল থেকে এই শুল্ক স্টেশন দিয়ে চুনাপাথর আমদানি শুরু হয়। ভোলাগঞ্জের ওপারে ভারতের খাসি হিলস জেলার মাজাই এলাকার ব্যবসায়ীরা পাথর রপ্তানি করছেন। তারা ১৬০ কিলোমিটার পথ ঘুরে তামাবিল ব্যবহার না করে ভোলাগঞ্জ দিয়ে পণ্য পাঠাতে পারছেন। ২০১৯ সালে শুল্ক স্টেশনটি দেশের ২৪তম ‘ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর’ হিসেবে ঘোষণা করে সরকার। বেদখল থাকা ১১২ একর জায়গা উদ্ধার করে ৫২ একরের মধ্যে বন্দর নির্মাণে এগিয়ে আসে বিশ্বব্যাংক। ১৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনিক ট্রেডিং করপোরেশন এবং মজিদ সন্স অ্যান্ড মাসুদ স্টিল। চার বছর চলে জমি অধিগ্রহণ ও মাটি ভরাট নিয়ে টানাপোড়েন। সব ঝামেলা চুকিয়ে গত বছরের জানুয়ারিতে নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু ৫ আগস্ট দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণসামগ্রী ও মেশিনারি লুট করা হয়। এতে ব্যাহত হয় নির্মাণ প্রক্রিয়া। মাস দুয়েকের মধ্যে আবার তারা কাজ শুরু করে। শুরুতে জায়গার মালিকানা দাবি ও পরে একমুখী স্থলবন্দর নির্মাণে বেঁকে বসেন স্থানীয় আমদানিকারক ও বাসিন্দারা। কর্তৃপক্ষের দৃঢ় অবস্থানের কারণে নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকেনি।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বন্দর চালুর পর সামনের রাস্তায় ট্রাক চলতে পারবে না। বন্দরের ভেতর দিয়ে আসা-যাওয়া করবে। ফলে পর্যটকদের যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটবে না। সহজে বন্দর এলাকা ছেড়ে তারা পর্যটন ঘাটে যেতে পারবেন।
অনিক ট্রেডিং করপোরেশনের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, বন্দর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ৫ আগস্ট তাঁর ৬-৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মাসুদ স্টিলের রাশেদ আহমদ জানান, তারা সময়ের আগেই কাজ শেষ করতে পেরেছেন।
শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, এখন ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে কাজ চলছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টায় ২৮০ থেকে ৩০০ ট্রাক চুনাপাথর আসে। বন্দর চালু হলে দ্রুত কাস্টম প্রক্রিয়া শেষ করা যাবে। তখন আড়াই থেকে তিন ঘণ্টায় ৩০০ ট্রাক আনা যাবে।
ভোলাগঞ্জ স্টোন ক্রাশার মিল মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল জলিল বলেন, বন্দর চালু হলে সেখানকার পরিবেশ বদলে যাবে। পর্যটকরা থাকা-খাওয়ার সুবিধা পাবেন। কর্মসংস্থান বাড়বে। বন্দরটি আরেক পর্যটন কেন্দ্র হবে।
(মূল রিপোর্ট : সমকাল)
.png) 
                     
                     
                     
                         
                                                 
                                                 
                                                 
                                                 
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    