কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
পেশাগত জীবনের অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং পুলিশি তদন্ত, আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি ও প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বই লেখেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। এসব বই কপি বিক্রিও হয় অনেক। বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তাও পায় কোনো কোনো বই।
জানা গেছে, রাইটার পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার হিসেবে সদ্য পদায়ন হওয়া আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী (পিপিএম- সেবা)।
এছাড়াও ভালো মানের বই লেখেন বর্তমান রাজশাহী রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মোহাম্মদ শাহজাহান এবং রেলওয়ে পুলিশের ডিআইজি (ক্রাইম) গোলাম রউফ।
এসএমপি কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী ‘আগ্নেয়াস্ত্র প্রশিক্ষণ- নবীশ থেকে পেশাদার’ নামের একটি বই লিখেছেন। ২০১৯ সালের বইমেলায় তৎকালীন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়াসহ ঊর্ধ্বতনরা বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন। সেসময় তিনি পুলিশ সুপার পদমর্যাদায় ছিলেন।
বইটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জন্য খুবই উপকারী বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মন্তব্য- বই যেমন একজন প্রকৃত মানুষ গড়ার কারিগর, তেমনি বই প্রশিক্ষক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরীর ‘আগ্নেয়াস্ত্র প্রশিক্ষণ- নবীশ থেকে পেশাদার’ বইটিও পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের জন্যও তেমন।
বইটির মোড়ক উন্মোচনের সময় ডিএমপি’র তৎক্ষালীন কর্মকর্তারা বলেছিলেন- আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী চমৎকার একটি বই লিখেছেন। এই বই পুলিশের পেশাদারি জ্ঞান ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি না হলে জনগণের নিরাপত্তা বিধান করা সম্ভব না। এই বইটি সম্পূর্ণ আইন-শৃংখলা বাহিনীর জন্য প্রযোজ্য। আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করছি- ভবিষতে তিনি আরো সুন্দর বই পুলিশ বাহিনীকে উপহার দিবেন।
সেসময় বই প্রকাশের লক্ষ্য সম্পর্কে জানা যায়- সন্ত্রাসবাদের বহুমাত্রিকতার কারণে নিজের ও অন্যের জানমালের নিরাপত্তা রক্ষার কাজে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যুগোপযোগী আগ্নেয়াস্ত্র পরিচালনায় দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নাই। অস্ত্র পরিচালনার পূর্বশর্ত হলো- অস্ত্রের উপর ভীতি দূর করা এবং অস্ত্র পরিচালনায় মৌলিক নিরাপত্তা নীতি রপ্ত করাসহ বাস্তব ক্ষেত্রে সফলতার সাথে প্রয়োগ করা। অস্ত্র পরিচালনায় মৌলিক নিরাপত্তা নীতির চর্চা যেমন নিজেকে ও অন্যকে নিরাপদ রাখবে- তেমনি প্রশিক্ষণার্থীগণ সফলতার সাথে অস্ত্র চালনায় পারদর্শী হবে।
‘আগ্নেয়াস্ত্র প্রশিক্ষণ-নবীশ থেকে পেশাদার’ বইয়ে অস্ত্রভীতি, আগ্নেয়াস্ত্রের বিভিন্ন অংশের পরিচিতি, আগ্নেয়াস্ত্র প্রশিক্ষণের আনুষাঙ্গিক উপকরণ, আগ্নেয়াস্ত্র গ্রহণ, সমর্পণ ও নিরাপদকরণ এবং প্রস্তুতের অবস্থাসমূহ ও আগ্নেয়াস্ত্র পরিচালনার মৌলিক নিরাপত্তার মূলনীতির চর্চা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হয়েছে।
এ বই বাংলাদেশ পুলিশে নতুন যোগদান করা ও কর্মরত সকল স্তরের সদস্যের উদ্দেশ্যে প্রণীত। বইয়ের ভাষা সহজ-সরল ও প্রাঞ্জল রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। Technical শব্দসমূহ বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতেও লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বইটিতে।
নিজের লেখা বই সম্পর্কে এসএমপি কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরী (পিপিএম- সেবা) রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে কওমি কণ্ঠকে বলেন- এই ধারার বই বাংলাদেশে এটি-ই প্রথম। আমার বিশ্বাস- আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব বাহিনীর সদস্যদের খুবই উপকারে আসবে বইটি।
তিনি বলেন- বইটা এখনো বহুল পঠিত, ৩৫ হাজারের বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। তবে বইটির পুন:প্রকাশ এখন বন্ধ আছে।
ডিআইজি পদমর্যাদার এই পুলিশ কর্মকর্তা কওমি কণ্ঠকে বলেন- ২/১টি পত্রিকা দেখেছি বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করেছে। জানি না তাদের উদ্দেশ্য কী, তবে বই মানুষের প্রকৃত বন্ধু। তাদের সংবাদে বলা হয়েছে- পুলিশ কর্মকর্তাদের লিখিত বই অধীনস্থদের নাকি পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। পেশাগত জীবনে কাজে আসে এমন বই পড়তে তাগিদ দেওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয়? সুতরাং বই নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ খুবই হতাশাজনক।
উল্লেখ্য, বর্তমান এসএমপি কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ চৌধুরীর জন্ম ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার পশ্চিম ছাগলনাইয়া গ্রামে। তিনি ১৯৯৯ সালে ১৮তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। ২০০৬ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোতে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পার্সোনেল ও সিকিউরিটি অফিসার হিসেবে এক বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রম (UN DPKO) কর্তৃক ২০১১ সালে UN Certified Firearms Instructor সনদ অর্জন করেন।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকালে সিলেট এসে পৌঁছান আব্দুল কুদ্দুস চৌধুরী। এ রাতেই সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এখানে বদলির আগে তিনি খুলনা পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার (পিটিসি)-এর কমান্ড্যান্ট ডিআইজি ছিলেন।