বিএনপিকেই ‘পছন্দ’ ইসলামি দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। বিএনপি চায় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান, কিন্তু জামায়াত ও কয়েকটি ইসলামি রাজনৈতিক দল ইতোমধ্যে ডাক দিয়েছে ‘যুগপৎ আন্দোলন’। এরই প্রেক্ষিতে আজ শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা ও সিলেটসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে আন্দোলনকালী দলগুলো। 

দেখা গেছে- নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবিতে কওমি মাদরাসা ধারার কয়েকটি রাজনৈতিক দল যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াতের সঙ্গে রয়েছে। তবে  কওমি মাদরাসাভিত্তিক বৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম রয়েছে বিএনপির সঙ্গে। 

জামায়াতের সঙ্গে আসা ইসলামি দলগুলোর নেতারা হেফাজতের নেতৃত্বেও আছেন। কিন্তু হেফাজতের শীর্ষ নেতৃত্ব জামায়াতের সমালোচনায় মুখর, বিএনপির সঙ্গে তাদের দৃশ্যমান সুসম্পর্ক রয়েছে। নিবন্ধিত এবং হেফাজত-সংশ্লিষ্ট দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম  প্রায় ঘোষণা দিয়েই রয়েছে বিএনপির সঙ্গে। 

যুগপৎ আন্দোলনে আসা দলগুলোর নেতারা সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা সাইয়্যেদ আবুল আলা মওদুদী আদর্শের বিরোধিতার কারণে হেফাজতের ‘মুরব্বিরা’ জামায়াত-বিরোধী। এ কারণে তারা বিএনপির সঙ্গে থাকার পরামর্শ দেন। কিন্তু নতুন প্রজন্মের নেতাকর্মীর চিন্তা-ভাবনা ভিন্ন।  

জামায়াতের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যোগ দিয়েছে কওমি মাদরাসাভিত্তিক বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস বাংলাদেশ, খেলাফত আন্দোলন এবং নেজামে ইসলাম পার্টি। রয়েছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনও।

সম্প্রতি হেফাজতের আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী এক বক্তব্যে বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী একটি ভণ্ড ইসলামী দল, সহিহ ইসলামী দল নয়। তারা মদিনার ইসলাম নয় বরং মওদুদীর ইসলাম কায়েম করতে চায়। মওদুদীর মতাদর্শ অনুসরণ করলে ইমান থাকবে না।’

সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘জামায়াত ক্ষমতায় এলে কওমি মাদরাসা থাকবে না।’

এছাড়া হেফাজতের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিএনপির সঙ্গে সুসম্পর্কও রয়েছে। গত আগস্টে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য নজরুল ইসলাম খান এবং সালাহউদ্দিন আহমেদ চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে হেফাজতের সদরদপ্তর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদরাসায় যান। 

গত ৬ এপ্রিল হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব সাজিদুর রহমানসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বৈঠক করেন। তিন দিন পর এনসিপির কার্যালয়েও বৈঠক করেন। একই মাসে আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে বৈঠক করলেও জামায়াতের সঙ্গে বসেননি হেফাজতের শীর্ষ নেতারা।

জামায়াতের সঙ্গে ইসলামি আদর্শগত বিরোধ রয়েছে কওমি আলেমদের। হ্ক্কানি আলেমদের ভাষ্য, মওদুদীর মতবাদ ভ্রান্ত। এ অবস্থানের কারণে অতীতে বার বার চেষ্টা করেও জামায়াত অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে জোট করতে পারেনি। বার বার আহ্বানের পরও তারা মওদুদীবাদের ভ্রান্ত বিভিন্ন আক্বিদা বা মতামত ছাড়তে পারেনি।

বাংলাদেশ খেলাফতের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন (হেফাজতেরও নেতা) সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে কিন্তু জোট হচ্ছে না। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন করা হচ্ছে মাত্র। যেসব দল নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন চায়, তারা একসঙ্গে হয়েছে। বিএনপি যদি জুলাই সনদের অধীনে নির্বাচনের দাবি করত, তাহলে তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যেত বাংলাদেশ খেলাফত। জামায়াতসহ যুগপৎ আন্দোলনে যারা রয়েছে, তাদের মধ্যে ভবিষ্যতে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে, নাও হতে পারে। 

হেফাজত-সংশ্লিষ্ট একটি দলের মহাসচিব বলেন, হেফাজত সরাসরি রাজনীতি না করায় তারা মাদরাসা শিক্ষার স্বার্থে সরকারের সঙ্গে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এ কারণে ২০১৩ সালের মতিঝিল হত্যাযজ্ঞ এবং ২০২১ সালে নরেন্দ্র মোদির আগমনবিরোধী আন্দোলনে ২৬ জন নিহত হওয়ার পরও হেফাজতের অরাজনৈতিক জ্যেষ্ঠ মুরুব্বিরা নানা দাবি নিয়ে গণভবনে যেতেন। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁনের সঙ্গে  বৈঠকও করছেন। কিন্তু যারা রাজনীতি করেন, তাদের জন্য এমনটি অসম্ভব ছিল। মুরব্বিরা মনে করেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, তাই সেদিকে থাকতে চান, আবার জামায়াত বিরোধিতাও রয়েছে। 

হেফাজত-সংশ্লিষ্ট দল জমিয়ত ইতোমধ্যে বিএনপির সঙ্গে জোট করেছে। দলটি ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির জোট থেকে চারটি আসনে ছাড় পেয়েছিল। ২০২১ সালে মোদিবিরোধী আন্দোলনে জমিয়তের জ্যেষ্ঠ নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর, দলটি ঘোষণা দিয়ে জোট ছাড়ে। এরপর তাদের জামিন হয়। 

হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মাওলানা মহিউদ্দিন রাব্বানী সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন- হেফাজত অরাজনৈতিক চরিত্র বজায় রাখবে আগামী নির্বাচনেও। সংগঠন-সংশ্লিষ্ট যারা রাজনীতি করেন, তারা কোনদিকে যাবেন সে সিদ্ধান্ত তাদের।