ওসমান হাদীর হত্যাচেষ্টাকারীকে ধরতে সিলেট সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার

কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর জড়িতরা যাতে গোপনে দেশত্যাগ করতে না পারে সেজন্য সিলেটের সবকটি সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে বিজিবি।

গতকাল শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকায় বিজিবি সদস্যরা চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি করতে দেখা গেছে। তবে শনিবার রাত পর্যন্ত কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে আটক করার খবর পাওয়া যায়নি।

এর আগে শুক্রবার রাত থেকে সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয় ।

বিজিবি সূত্র জানায়, কিছু কিছু এলাকায় শুক্রবার রাত থেকে অবৈধ পারাপার রোধে সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সিলেট বিভাগের সব সীমান্ত এলাকায় এ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বহাল থাকবে। সীমান্ত নিরাপত্তার পাশাপাশি দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিজিবি সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

সিলেট ও সুনামগঞ্জের অধিকাংশ এলাকার দায়িত্বে থাকা সিলেট ব্যাটালিয়ন (৪৮ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. নাজমুল হক বলেন, দুপুর থেকে সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকায় ৪/৫ টি মোবাইল চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এর বাইরেও প্রতিটি বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় অতিরিক্ত টহল মোতায়েন করা হয়েছে এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তি আটক হয়নি।

তিনি আরও বলেন- এ রকম তৎপরতা কতদিন থাকবে তা সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি মূল্যায়ণ করে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে সুনামগঞ্জ ব্যাটালিয়ন ও সিলেট ৪৮ ব্যাটালিয়ন সুনামগঞ্জ অংশে ১২০ কিলোমিটার এলাকায় সীমান্তে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি বিশেষ টহল জোরদার করা হয়েছে। সন্দেহভাজন বিওপিতে বাড়ানো হয়েছে বিশেষ লোকবল। একই সঙ্গে সীমান্তজুড়ে কঠোর নজরদারি ও গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী অধিক গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে অস্থায়ী চেকপোস্ট স্থাপন করে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও যানবাহনে তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদ কার্যক্রমও চালানো হচ্ছে। এছাড়া, স্থানীয় জনগণকে সীমান্ত এলাকায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে বিজিবির সঙ্গে যোগাযোগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. এন্ড কর্নেল মো. একেএম জাকারিয়া কাদির বলেন, সীমান্তে অধিক সতর্কতা জারির জন্য বিজিবি সদর দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা পাওয়ার পর পর সীমান্ত জুড়ে নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে কড়াকড়ি থাকলেও হাদী'র ঘটনার পর সতর্কতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। কোনো অপরাধীকে সীমান্ত পার হতে দেয়া হবে না। বিজিবি ভবিষ্যতেও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান, তল্লাশি ও নজরদারি কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে এবং একটি নিরাপদ ও সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে দায়িত্ব পালনে দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি ।

বিজিবি হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (৫৫ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তানজিলুর রহমান জানান, ওই ঘটনার পর থেকে ৫৫ বিজিবি অধীন ১৬টি বিওপি নিয়মিত টহলের পাশাপাশি অতিরিক্ত বিশেষ টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সম্ভাব্য পলায়ন ও অবৈধ পারাপারের স্থানগুলো চিহ্নিত করে সেখানে প্রয়োজনীয় বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকায় যানবাহন ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, ৫৫ বিজিবি হবিগঞ্জ জেলার প্রায় ১০৩ কিলোমিটার সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করছে। সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের পাশের দেশে পলায়ন ও সব ধরনের অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি।

বিজিবি শ্রীমঙ্গল ব্যাটালিয়নের (৪৬ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়া বলেন, সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের পলায়ন ও সব ধরনের অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে।

অপরদিে, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে শ্রীমঙ্গল ব্যাটালিয়ন (৪৬ বিজিবি)। শুক্রবার ইনকিলাব মঞ্চের আহবায়ক শরীফ ওসমান হাদীর ওপর গুলির ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীরা যেনো সীমান্ত কিংবা সীমান্তবর্তী এলাকা ব্যবহার করে পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যেতে না পারে সে লক্ষ্যে বিজিবি সতর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন ৪৬ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ এস এম জাকারিয়া ।

তিনি জানান, ওই ঘটনার পর থেকে ৪৬ বিজিবি অধীনস্থ বিওপি সমূহ হতে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি অতিরিক্ত বিশেষ টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সম্ভাব্য পলায়ন ও অবৈধ পারাপারের স্থানগুলো চিহ্নিত করে সেখানে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিশেষ চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এসব চেকপোস্টে যানবাহন ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তল্লাশি অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ৪৬ বিজিবি মৌলভীবাজার জেলার প্রায় ১১৫ কিলোমিটার সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করছে। সীমান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের পার্শ্ববর্তী দেশে পলায়ন ও সব ধরনের অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বিজিবি।


(মূল রিপোর্ট : সিলেটের ডাক)