কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল (প্রতিকৃতি) অপসারণের পর এবার সেনানিবাসের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্যও ভেঙে ফেলার দাবি উঠেছে। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টায় এ বিষয়ে সিলেটের শাহপরাণ গেটে স্থানীয় আলেম-তাওহিদি জনতার এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সেই সভা থেকে সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ২টায় সেনানিবাস গেটে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। এটি ‘অসামাজিক ও অনৈসলামিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটি, সিলেট’র উদ্যোগে ও ব্যানারে আয়োজিত হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে, এই সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) শাহপরাণ থানাধীন সুরমা গেট বাইপাস পয়েন্টে বাদ আছর মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হবে। এতে দল-মত নির্বিশেষ সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন ‘অসামাজিক ও অনৈসলামিক কার্যকলাপ প্রতিরোধ কমিটি, সিলেট’র নেতৃবৃন্দ।
উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর আগে দেশে শেখ মুজিবুর রহমানের ১০ হাজারের বেশি ম্যুরাল, ভাস্কর্য ও প্রতিকৃতি স্থাপন করে আওয়ামী লীগ সরকার। টানা ১৫ বছর ধরেই ভাস্কর্য, ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি তৈরির মহোৎসবে মেতে উঠেছিল দলটি। এই কর্মে উদ্যোগী ভূমিকা ছিল স্থানীয় প্রশাসনের। অনেক সংস্থা নিজ উদ্যোগেও এগুলো তৈরি ও স্থাপন করে। এসব অকাজে রাষ্ট্রের ব্যয় হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। এই বিপুল ব্যয় অপ্রয়োজনীয় ও অপচয় বলেই মন্তব্য সচেতন সমাজের। এরকমই একটি ম্যুরাল ছিলো সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে।
২০২০ সালের ১৯ আগস্ট সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি উন্মোচন করেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি ড. এ কে আব্দুল মোমেন। এরপর থেকে মুজিবুর রহমানের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে এখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতেন সিলেট আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরই সিলেটের বিভিন্ন স্থানে শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়। এ সময় এ ম্যুরাল সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে সিলেটের সচেতন মহল, আলেম ও তাওহিদি জনতা ম্যুরালটি ভেঙে ফেলার দাবি তুলেন। কিন্তু জেলা প্রশাসন এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ না নিলে গত ৩১ ডিসেম্বর বাদ জুমআ সেটি মিছিলসহকারে ভেঙে ফেলার হুশিয়ারি দেওয়া হয়। তবে এর আগের রাতেই ম্যুরালটি কে বা কারা অর্ধেক ভেঙে দেয়।
এদিকে, গত বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক ভার্চ্যুয়াল বক্তব্যের কারণে ওইদিন রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে এসে বুলডোজার দিয়ে ম্যুরালটি একেবারে গুঁড়িয়ে দেন।
এর আগে বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বন্দরবাজার এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। পরে তারা বিক্ষোভ মিছিল বের করে বুলডোজার নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে যান। এসময় প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় প্রথমে তারা ভেতরে ঢুকতে বাধাপ্রাপ্ত হন। পরে তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থাকা শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেন।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘মুজিববাদের আস্তানা, গুঁড়িয়ে দাও- গুঁড়িয়ে দাও’, আবু সাঈদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’-সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন।