কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
সিলেটে ‘সম্মিলিত কওমি ফোরাম’র সদস্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আকাবির ও আসলাফের কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে কওমি মাদরাসার স্বকীয়তা, ঐতিহ্য ও চেতনা রক্ষার লক্ষ্যে গঠিত এ সংগঠনের উদ্যোগে সিলেট মহানগরের বন্দরবাজার এলাকার একটি অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়।
ফোরামের সদস্য হাফিজ জুবায়ের বিন আমীনের কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২ টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়।
ফোরামের আহ্বায়ক মাওলানা আহমদ কবীর খলীলের সভাপতিত্ব এবং সদস্যসচিব মাওলানা মিনহাজুর রাহমান ওলি ও যুগ্মসচিব মাওলানা আখতার আহমদের পরিচালনায় সম্মেলনে সম্মানিত অতিথির বক্তব্য রাখেন জামিয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া গহরপুর’র মুহতামিম মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন আহমদ রাজু, জামেয়া মাদানিয়র কাজিরবাজার’র সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ, অ্যাডভোকেট মাওলানা মাহমুদুল হাসান, মাওলানা নুমানুল হক চৌধুরী, মাওলানা ইয়াহিয়া খান, মুফতি জিয়াউর রহমান, মাওলানা আহমদ সগীর, মাওলানা জামালুদ্দিন, মুফতি আব্দুল জলিল ফরিদী, মুফতি ইলিয়াস আহমদ ও মাওলানা আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী।
এছাড়া সম্মেলনে সিলেটের নবীন-প্রবীণ আলেম ও শিক্ষার্থী এবং দেশের বিভিন্ন স্থানের কওমি ফোরামের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলনে বক্তারা কওমি মাদরাসার ঐতিহ্য, লক্ষ্য ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। তারা বলেন- কওমি মাদরাসা হলো ঈমান, ইসলাম এবং দেশ ও জাতি রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী তৈরির কারখানা। দারুল উলুম দেওবন্দ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে উপমহাদেশে এই চিন্তা-চেতনার পথ সৃষ্টি হয়েছিলো। কওমি বলতে মূলতঃ দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং তার চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাসী ব্যক্তি ও সমাজকে বোঝানো হয়। এ চিন্তা-চেতনার মূল কথা হলো- খালিস তাওহিদ, ইত্তেবায়ে সুন্নাত, তাআল্লুক মাআল্লাহ এবং এ’লায়ে কালিমাতিল্লাহ।
বক্তারা আরও বলেন- কওমিয়ানরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দ্বিনের সঠিক চর্চা, সংরক্ষণ ও প্রচারের দায়িত্ব পালন করে আসছে। এই শিক্ষাব্যবস্থা কেবল ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়- বরং নৈতিকতা, আদর্শ ও সমাজ গঠনের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কওমি শিক্ষাব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখা এবং এর বিকাশ নিশ্চিত করতে এ অঙ্গনের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আর এই কাজ বেগবান করতেই ‘সম্মিলিত কওমি ফোরাম’র সৃষ্টি।
কওমি শিক্ষার গুণগত মান বাড়াতে এবং যুগের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন বক্তারা। তারা বলেন- এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আদর্শবান ও কর্মক্ষম মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে তারা সমাজ ও জাতির কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
বক্তারা বর্তমান সময়ে কওমি শিক্ষার উপর যেসব সংকট নেমে আসছে, সেসব নিয়েও আলোচনা করেন। তারা বলেন- একটি মহল কওমি শিক্ষার ভিত্তি দুর্বল করার জন্য এবং কওমি-মুরুব্বি ও আকাবিরের প্রভাব এবং অভিভাবকত্ব নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করছে। এসব ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে এবং কওমি অঙ্গনের ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা বজায় রাখতে হবে। এজন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
সম্মেলনে কওমি শিক্ষার প্রসার, স্বকীয়তা রক্ষা, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং সামাজিক ও ধর্মীয় দিকনির্দেশনা নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সম্মেলন শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি-সমৃদ্ধি এবং কওমি শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতি কামনায় মুনাজাত করা হয়।