অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে প্রশাসন

  • সিলেট বিভাগীয় কমিশনারকে তলব করেছেন হাইকোর্ট
  • সিলেট বিভাগে অবৈধ ইটভাটা একটিও থাকবে না
  • অনিয়ম করা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

সারা দেশে অবৈধ ইটভাটা বন্ধে উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। প্রতি বিভাগীয় কমিশনার ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালককে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট বিভাগীয় কমিশনারকে আগামী ১৭ মার্চ তলব করেছেন হাইকোর্ট। অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব কেন হচ্ছে- সশরীরে হাজির থেকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ প্রদান করেছেন উচ্চ আদালত। 

কৃষি জমিতে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইনত নিষিদ্ধ। আইন বলছে- আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে এবং বনাঞ্চলের দুই কিলোমিটার ও ইউনিয়ন বা গ্রামীণ সড়কের অন্তত আধা কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। আইন অমান্য করলে অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড, অন্যূন ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু এসব কঠিন আইন অমান্য করেই সিলেট বিভাগজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ ইটভাটা। 

তবে আইন লঙ্ঘনের দায়ে বেশির ভাগেরই কোনো ধরনের দণ্ডের মুখোমুখি হতে হয় না। আবার কেউ যদি দণ্ডিত হনও, পরে কৌশলে আবারও নতুন করে একই স্থানে গড়ে তোলেন ইটভাটা।

সম্প্রতি পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে সারা দেশের অবৈধ ইটভাটার তথ্য চায় মন্ত্রণালয়। সেই তথ্য অনুযায়ী- সিলেট বিভাগে ২৩টি অবৈধ ইটভাটা রয়েছে। তবে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয় বাংলাদেশের খবরকে জানিয়েছে- তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। 

ইটভাটার পাশের ঘরবাড়িতে বসবাসকারীদের অভিযোগ- বছরের পর বছর এসব অবৈধ ইটভাটা পরিচালিত হলেও বন্ধ করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। উল্টো প্রশাসনকে ম্যানেজ করে মালিকরা এসব ভাটা পরিচালনা করছেন।

পরিবেশসম্মতভাবে ইটভাটা পরিচালনা করার জন্য দেশে রয়েছে ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩। তবে তার প্রয়োগ নেই বললেই চলে। তাছাড়া প্রচলিত পরিবেশ সংরক্ষণ আইনেরও স্বাভাবিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা হলে পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া দেশে একটি ইটভাটাও চালু করা সম্ভব ছিল না।
মাটি পুড়িয়ে তৈরি করা হয় ইট। কৃষিজমির উপরিভাগের উর্বর মাটি ইট তৈরিতে ব্যবহার করায় প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করায় বনজ সম্পদ ধংস হচ্ছে। তাছাড়া ইট পোড়ানোর ধোঁয়া থেকে ইটভাটার পার্শ্ববর্তী এলাকার পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। যে কারণে ইটখোলার আশপাশে বসবাসরত মানুষ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। 

পরিবেশবিদরা বলছেন- অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পাশাপাশি ইটের বিকল্প ব্লক ব্যবহারে সকলকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
এ অবস্থায় বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেশের সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধের পদক্ষেপ নেওয়া হয় গত বছরের শেষের দিকে। পরে এ বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশের অবৈধ সব ইটভাটা চার সপ্তাহের মধ্যে গুঁড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। পরিবেশে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সকল বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে (ডিসি) এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করে আগামী ১৭ মার্চ প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। 

এদিকে, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বিলম্ব হওয়ায় পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং পাঁচজন বিভাগীয় কমিশনারকে আগামী ১৭ মার্চ সশরীরে হাজির থেকে ব্যাখ্যা দিতেও নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এর মধ্যে একজন সিলেট বিভাগীয় কমিশনার।

সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয়ের পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার কওমি কণ্ঠকে বলেন- ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমরা অবৈধ ইটভাটা নিয়ে কাজ করছি। জেলা প্রশাসক কার্যালয়গুলো থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। অবৈধ ইটভাটাগুলো চিহ্নিত করা হচ্ছে। শীঘ্রই আমরা এগুলো বন্ধে অ্যাকশনে যাবো। ইতোমধ্যে আমরা ৭-৮টি অবৈধ ভাটা চিহ্নিত করেছি। 

এক প্রশ্নের জবাবে মো. ফেরদৌস আনোয়ার কওমি কণ্ঠকে বলেন- সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যারা আগে অবৈধ ফায়দা নিয়ে অবৈধ ভাটাগুলো চলতে দিয়েছেন; তদন্তসাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কিছু বিষয় আছে যেমন- আগে একটি ইটভাটার আশপাশে জনবসতি ছিলো না, কিন্তু এখন হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে আসলে সংশ্লিষ্ট কোনা কর্মকর্তার হাত নেই। এসব বিষয়ও খতিয়ে দেখা হবে।

সিলেট বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী (অতিরিক্ত সচিব) কওমি কণ্ঠকে বলেন- পুরো বিভাগের সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর নিয়ে আমরা কাজ করছি। আগামী সপ্তাহেই্ এসব ভাটা বন্ধে আমরা অভিযানে নামবো। সিলেট বিভাগে একটিও অবৈধ ইটভাটা থাকবে না ইনশা আল্লাহ। 

১৭ মার্চ হাইকোর্টে হাজিরা দেওয়ার তথ্য নিশ্চিত করে বিভাগীয় কমিশনার কওমি কণ্ঠকে বলেন- ইটভাটা-সংক্রান্ত পুরো বিভাগের তথ্য জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। এ দিন (১৭ মার্চ) আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করবো।