ইয়াহইয়া ফজল :
কারুশিল্পের নৈপুণ্য, পরিশ্রম ও একাগ্রতার প্রতীক বাবুই পাখির বাসা। শক্ত, সরু ছোট খড়কুটো দিয়ে বাবুই তার নান্দনিক বাসা বোনে। নগরায়ণের প্রভাবে সিলেটে এখন তেমন চোখে পড়ে না বাবু্ই পাখির বাসা। সম্প্রতি নগর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে রুস্তোমপুর গ্রামে দেখা মিলেছে বাবুই পাখির নান্দনিক বাসার।
তাও এক-দুটি নয়, ৩৪টি বাসা। সুপারিগাছে বানানো নান্দনিক এসব ঘর দেখতে ভিড় জমাচ্ছে অনেকে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রুস্তোমপুর গ্রামের বাসিন্দা নূহ ইবনে ইলিয়াস শাহরিয়ারের বাড়ির একেকটি সুপারিগাছের পাতাগুলোতে ঝুলছে একাধিক বাসা। কোনোটি সবুজ, কোনোটি মেহেদি রঙের। তবে বেশির ভাগ খয়েরি রঙের বাসা।
জানা যায়, বাবুই পাখিকে ‘তাঁতি পাখি’ ডাকা হয়। বাংলাদেশে দেশি বাবুই, দাগি বাবুই ও বাংলা বাবুই—এই তিন প্রজাতি দেখা যায়। যদিও দেশি বাবুই ছাড়া বাকি দুটি প্রজাতি এখন বিলুপ্তপ্রায়।
দেশি বাবুইয়ের বাসাও আগের মতো গ্রামের আঁকাবাঁকা পথে আর তেমন দেখা যায় না। বাবুই পাখির প্রজনন ঋতু গ্রীষ্ম। তার আগেই আপন নীড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে পুরুষ বাবুই। তখন আশপাশ থেকে বাবুই তার শক্ত সরু ঠোঁট দিয়ে খড়কুটো সংগ্রহ করে বাসা বুনতে থাকে। সুচালো ঠোঁটের সাহায্যে পাতা ফুটো করে সেলাইয়ের মতো ফোঁড়ে ফোঁড়ে বুনতে থাকে নান্দনিক বাসা।
বাবুইয়ের বাসায় পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা ও সুন্দর প্রবেশপথ থাকে। একাধিক কুঠুরি, ডিমের ঝুড়িসহ সব সুবিধা থাকে। তেমনি থাকে দুর্যোগ বা শত্রুর হাত থেকে রক্ষার সব ব্যবস্থা। ঝড়-বাতাসে যাতে ওলটপালট না হয়ে যায় সে জন্য বাসার নিচের কুঠুরিতে খানিক কাদামাটি বা গোবর রাখা হয়। বাসা বুনতে সাত থেকে ১০ দিন লাগে।
পেশায় ব্যবসায়ী নূহ ইবনে ইলিয়াস শাহরিয়ার সিলেট নগরে থাকলেও প্রতি সপ্তাহে সময় করে বাড়ি যান। তিনি বলেন, ‘আমাদের বাড়ির সুপারিগাছে পাঁচ-ছয় বছর ধরে বাবুই পাখি নিয়মিত বাসা তৈরি করছে। একটি-দুটি নয়, সেটা কখনো অর্ধশতও হয়।’
(মূল রিপোর্ট : কালের কণ্ঠ)