কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
মাসজুড়ে সিয়াম সাধনার পর রমজানের দ্বিতীয় প্রধান আমল তারাবি। রমজান একই সঙ্গে সিয়াম ও কিয়াম সাধনার মাস। রোজা ও রাতের নামাজের মাস। রমজান এলেই বিশ্বজুড়ে মসজিদে মসজিদে ধ্বনিত হয় পবিত্র কোরআনের সুমধুর সুর।
তারাবির জামাতে মুসল্লিতে টইটম্বুর হয় আল্লাহর ঘরগুলো। হাফেজ সাহেবরা নিজেদের নিবেদিত করেন কোরআনের সেবায়। দিনে বারবার পড়ে মুখস্থকে শানিয়ে নেন। তারপর একজন আরেকজনকে শুনিয়ে ভুলমুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন।
বাদ মাগরিব নফল নামাজে ওই অংশটুকু তেলাওয়াত করে আবার ঝালিয়ে নেন। অবশেষে এশার পর তারাবিতে হৃদয় উজাড় করে আবৃত্তি করেন আল্লাহর কালাম। আয়াতের পর আয়াত পড়ে চলেন আসমানি বাণী।
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের আশায় রাত জেগে (তারাবি) নামাজ আদায় করবে, তার পূর্বের সব (সগিরা) গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ (বোখারি : ৩৭; মুসলিম : ৭৫৯)। মাত্র ৩০টি রাত কষ্ট করে তারাবিতে শরিক হলে জীবনের গোনাহগুলো মাফের এ সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হাতছাড়া করা উচিত নয়। আমাদের প্রত্যেকের উচিত এ সুযোগ লুফে নেওয়া।
নবী (সা.) নিজে দীর্ঘ কেরাতে তারাবি পড়েছেন। তবে উম্মতের ওপর ফরজ হওয়ার আশঙ্কায় তিনি নিয়মিত পড়েননি। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো এক রাতে মসজিদে নামাজ আদায় করলেন, লোকজনও তাঁর সঙ্গে নামাজ আদায় করল। পরবর্তী রাতেও তিনি নামাজ আদায় করলেন, তাতে লোকজন আরো বৃদ্ধি পেল। তৃতীয় কিংবা চতুর্থ রাতে অনেক লোকের সমাগম হলো। কিন্তু সে রাতে রাসূলুল্লাহ (সা.) উপস্থিত হলেন না।
সকালে তিনি বললেন, তোমরা যা করেছ, তা আমি দেখেছি। কিন্তু তোমাদের ওপর এ নামাজ ফরজ হয়ে যাওয়ার ভয়ে আমি উপস্থিত হইনি। বর্ণনাকারী বলেন, ঘটনাটি রমজান মাসে ঘটেছিল। (বোখারি : ১১২৯; মুসলিম : ৭৬১)। মহানবী (সা.)-এর মৃত্যুর পর তাঁর হাতে গড়া সোনার মানুষের কাফেলা সাহাবায়ে কেরাম তারাবি পড়েছেন।
রমজান কোরআন নাজিলের মাস। কোরআন সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয় আমিই এ কোরআন নাজিল করেছি এবং আমিই তা সংরক্ষণ করব।’ (হিজর : ৯)। কোরআনকে আল্লাহ সংরক্ষণ করছেন হাফেজদের মাধ্যমে। পৃথিবীর সব কোরআন উধাও করে দেয়া হলেও কোরআনকে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়।
কোটি কোটি নারী-পুরুষের বুকে সংরক্ষিত আছে পবিত্র কোরআন। পৃথিবীতে কোরআন ছাড়া আর কোনো ধর্মীয় গ্রন্থ এত মানুষের বুকে সংরক্ষিত নেই। সারা বিশ্বে প্রতি বছর লাখ লাখ ছেলেমেয়ে কোরআনের নতুন হাফেজ হচ্ছে।
মাদরাসা বোর্ডের সম্মিলিত তথ্য মোতাবেক, বাংলাদেশে প্রতি বছর অর্ধলক্ষ ছেলেমেয়ে হাফেজ হচ্ছে। বাংলাদেশের হাফেজরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনছে। বিশ্বের বড় বড় শহরের খ্যাতনামা সব মসজিদে প্রতি বছরই বাংলাদেশের হাফেজরা তারাবিতে ইমামতি করছেন।
৩০ পারা কোরআন হৃদয়ে জাগরুক রাখা সহজ ব্যাপার নয়। হাফেজ সাহেবদের পক্ষে এটা সম্ভব হচ্ছে প্রতি বছর তারাবির মতো নামাজে চর্চার মাধ্যমেই। তারাবির নামাজ না থাকলে বহু হাফেজ মুখস্থ করা কোরআন ভুলে যেতেন।
মুসল্লিদের ক্ষেত্রেও তারাবির ভূমিকা অনেক বড়। তারাবি কোরআনের আরো কাছে নিয়ে যায় মমিনদের। সারা মাসে এক খতম কোরআন শোনার সুযোগ হয় তারাবিতে। কোরআন পড়ার মতো শোনাও একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। প্রতিটি আয়াতে অন্তত ১০টি করে নেকি অর্জন হয়। মহানবী (সা.) নিজে রমজানে জিবরাঈল (আ.)-এর মুখে প্রতি রাতে কোরআন শুনতেন এবং তাকে শোনাতেন।
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরাঈল (আ.) মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে একবার সাক্ষাৎ করতেন। মহানবী (সা.) তাকে কোরআন শোনাতেন, তিনিও তাঁকে শোনাতেন।’ (মুসলিম : ২৩০৮)।