কী ঘটছে সিলেটের জৈন্তায়?

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

সিলেটের জৈন্তাপুর আলেম-উলামা অধ্যুষিত হলেও এ উপজেলার অনেক এলাকার মানুষ চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে হরিপুর। তবে ৩ দিন থেকে দৌঁড়ের উপর আছেন এ এলাকার চোরাকারবারিরা। তারা সেনাবাহিনীকে কঠোর হতে বাধ্য করেছে। বুধবার দিবাগত (২৭ মার্চ) রাতের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে।

ঘটনার পর থেকে সেনা সদস্যরা অভিযানে রয়েছেন হরিপুরে। বাজার নিকটবর্তী গ্রামগুলোর ঘরে ঘরে চলছে তল্লাশি। এই অবস্থায় হরিপুর বাজারও নীরব হয়ে পড়েছে। বলতে গেলো বাজার ও আশপাশের কয়েকটি গ্রাম পুরুষশূন্য। বৃহস্পতি ও শুক্রবারবাজারে কেবলমাত্র নিত্যপণ্যের ক্রেতা-বিক্রেতা ছাড়া আর কাউকে দেখা দেখা যায়নি। বাজারের বেশির ভাগ দোকানপাট ছিল বন্ধ।

জানা গেছে, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে চোরাই পথে পশু, বিভিন্ন রকম পণ্য ও মাদকদ্রব্য কেনাবেচার সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন হরিপুর এলাকার অনেক মানুষ। সীমান্ত দিয়ে এসব প্রথম আসে হরিপুরে। ওখান থেকে গাড়িযোগে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এ কারণে হরিপুরকে বলা হয় চোরাই সিন্ডিকেটের হেডকোয়ার্টার। 

জানা যায়, বুধবার দিবাগত রাতে কানাইঘাট উপজেলার গাছবাড়ি এলাকার জসিম নামের এক চোরাকারবারির মহিষের চালান ট্রাকযোগে হরিপুর বাজারে নিয়ে আসা হচ্ছিল। হরিপুর বাজারে পৌঁছামাত্র চোরাই পশু বহনকারী ওই ট্রাকচালক টহলে থাকা সেনাবাহিনীর একটি পিকআপকে চাপা দিয়ে চলে যেতে চাইছিল। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান- টহলে থাকা সেনাসদস্যরা গরুর বাজার এলাকায় গিয়ে ওই ট্রাক ও চালককে আটক করেন। কিন্তু এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন হরিপুরের চোরাকারবারিরা। তারা এসময় সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপর হামলা করে। 

ঘটনার পর সেনাবাহিনীর অতিরিক্ত টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে সেখানে থাকা সদস্যদের উদ্ধার করে। 

এরপর সেনাবাহিনীর কয়েকটি টিম হরিপুর যায়। তারা সিলেট-তামাবিল সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন। রাত ১২টা থেকে শুরু করা হয় সাঁড়াশি অভিযান। 

এদিকে, বুধবার রাতের ঘটনার পর থেকে সেনাবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সেনাবাহিনীকে সহায়তা করছে পুলিশ প্রশাসন। গত দুদিনে  পুলিশ হরিপুর বাজারের নিকটবর্তী হরিপুর, চানপুর, হেমু, হাউদপাড়া, বালিপাড়াসহ কয়েকটি গ্রামে ঘরে ঘরে তল্লাশি চালিয়েছে।

অপরদিকে, বৃহস্পতিবার সকালে সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে চোরাচালানের গডফাদার আব্দুর রশিদ চেয়ারম্যানের বাড়ি হানা দেয়। এ সময় তারা ঘর তল্লাশি করলেও রশিদ চেয়ারম্যানের খোঁজ পায়নি। অভিযানের সময় সেনাবাহিনী হরিপুর বাজার থেকে ব্যবসায়ী আশফাক সিকদার, তার ভাই হানিফ শিকদার, ড্রাইভার কামরুল সহ আরও কয়েকজন ব্যবসায়ীকে আটক করে। পরে তাদের নিয়ে অন্যান্য চোরাকারবারির বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানো হয়। 

জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাসার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন- ঘটনার খবর পেয়ে তিনি হরিপুরে গিয়েছিলেন। ওখানে  সেনাসদস্যরা ছিলেন। তবে এ ঘটনায় আটক হওয়া কাউকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়নি। কোনো মামলাও হয়নি এখন পর্যন্ত।

এদিকে, শুক্রবার পর্যন্ত সেনাবাহিনীর তরফ থেকে কোনো ব্রিফ করা হয়নি এ বিষয়ে।