রেল : সিলেট অঞ্চলে জনবল সংকট, নানা অনিয়ম

  • যাত্রীসেবা বিঘ্নিত

আব্দুল আহাদ :

বাংলাদেশ রেলওয়ে সিলেট অঞ্চলে জনবলের সংকটে ব্যাহত হচ্ছে যাত্রীসেবা। এছাড়া স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম অপরিষ্কার ও মলমূত্রের গন্ধ, ট্রেনের শিডিউল বিপয় নিয়েও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া যাত্রীদের।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, লোকবলের সংকটে সিলেট রেলস্টেশনের কিছু কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে ছয় মাস আগে তিন ধাপে সর্বশেষ ১৬০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যদিও এখনো শতাধিক পদ শূন্য। জনবলের এই সংকট নিরসনে শূন্য পদে নিয়োগের চাহিদা এরই মধ্যে পিএসসিতে পাঠানো হয়েছে। 

সম্প্রতি সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে গেলে নানা চিত্রের দেখা মেলে। সেদিন ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে যাত্রার অপেক্ষায় ছিল ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস। এই ট্রেনে উঠতে গিয়ে প্ল্যাটফর্মে মলমূত্রের গন্ধ পান যাত্রীরা। নগরীর উপশহরের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মাহফুজ আলম বলেন, 'জরুরি কাজে ঢাকায় যাব, কিন্তু ট্রেন ছাড়তে দেরি হচ্ছে। ৬টা ১৫ মিনিটে সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এখন বাজে এটা এদিকে মলমূত্রের গন্ধে ট্রেনের সিটেও বসে থাকা যাচ্ছে না।

জিজ্ঞেস করলে বলছে- কিছুক্ষণের মধ্যে ঢাকার উদ্দেশে ট্রেন ছেড়ে যাবে। প্রায় সময়ই তাদের নানা অজুহাতে দেরিতে ছাড়ে ট্রেন। তাদের কাছে যাত্রীদের কোনো মূল্যই নাই। অনেক সময় ভালোভাবে ট্রেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না, বগির ভেতরে ময়লা থেকে যায়। এতে দুর্গন্ধ ছড়ায়।' 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রেল কর্মচারী জানান, জনবলের সংকটের কারণে অনেক সময় ঠিকমতো রেলের বগি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা সম্ভব হয় না। প্ল্যাটফর্মে ভবঘুরেদের জন্য যাত্রীরা বিব্রত বোধ করেন। এরা অনেক সময় প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো রেলের বগিতে মলমূত্র ত্যাগ করে। নিরাপত্তা প্রহরীর সংকটের কারণে স্টেশনের চারদিকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না। এতে রেলওয়ে স্টেশনের খোলা অংশ দিয়ে এরা ঢুকে পড়ে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, সিলেট অঞ্চলের শূন্য পদের মধ্যে সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলীর পদ একটি, উপসহকারী প্রকৌশলীর পদ পাঁচটি, অফিস সহকারীর পদ একটি, টাইমকিপার পদ দুটি, স্টোর টেন্ডল পদ তিনটি, ওয়ার্কস সুপারভাইজার পদ একটি, কামার (ব্ল্যাক স্মিথ) পদ দুটি, কার্পেন্টার পদ একটি, ফিটার পদ একটি, পেইন্টার পদ একটি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী রাজমিস্ত্রির পদ একটি, মেইট পদ আটটি, হ্যামারম্যান পদ দুটি, কিম্যান পদ পাঁচটি, হেড ট্রলিম্যান পদ তিনটি, ট্রলিম্যান পদ ১৪টি, ওয়েম্যান পদ ৩০টি, খালাসি পদ ছয়টি, নিরাপত্তা প্রহরীর পদ আটটি, ভাল্পম্যান পদ দুটি, গেইটকিপার পদ সাতটি, রেস্টহাউস নিরাপত্তা ছবিতে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন প্রহরীর পদ দুটি, কুক-কাম-বেয়ারার পদ একটি, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পদ একটিসহ মোট ১০৭টি পদ শূন্য রয়েছে। শূন্য পদে নিয়োগের চাহিদা এরই মধ্যে পিএসসিতে পাঠানো হয়েছে। 

বাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থায় রেল একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হলেও বেশ কিছু ঘাটতির কারণে প্রত্যাশিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনসাধারণ। এসব সমস্যা নিরসনে প্রয়োজন আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন ও উন্নত ব্যবস্থাপনা । এতে যেমন যাত্রীসেবার মান বাড়বে, পাশাপাশি সরকারেরও রাজস্ব বাড়বে বলে মনে করছেন  বিশিষ্টজনেরা। এদিকে সিলেট রেলস্টেশনে যে খাবারের দোকানগুলো রয়েছে। সেগুলোতে খাবারের মান উন্নত করা প্রয়োজন বলে জানান যাত্রীরা। খাবারের দাম কমানোর পাশাপাশি এই রেস্তোরাঁর পরিবেশ আরও একটু উন্নত করার পরামর্শও দিয়েছেন কেউ কেউ। খাবারের মান নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে রেলযাত্রী আজিজ উদ্দিন মুন্না বলেন, বার্গার, স্যান্ডউইচ, পিঠাগুলো প্রায়ই বাসি-পচা থাকে। প্যাকেটজাত খাবারে মেয়াদ ফুরানোর তারিখ উল্লেখ থাকে না। এ নিয়ে অভিযোগ জানাতে গেলে দোকান কর্মচারীরা তেড়ে আসেন বলে অভিযোগ করেন। শ্রীমঙ্গলের বাসিন্দা মনিকা চক্রবর্তী বলেন, ‘স্টেশন চত্বরে ভবঘুরে, ভিক্ষুকের সংখ্যা কিছুটা কমে এলেও উৎপাত বন্ধ নেই তাদের। পাশাপাশি তৃতীয় লিঙ্গের কিছু চাঁদাবাজের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

আমি নিয়মিত ট্রেনেই যাতায়াত করি। সিলেট বা শ্রীমঙ্গল স্টেশনে এসে যখন ট্রেনের অপেক্ষায় থাকি, তখন হিজড়ার দল এসে উৎপাত করে। টাকা দিতে না চাইলে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করে। গায়ে হাত দেয়। এদের নিয়ন্ত্রণ করার কোনো পদক্ষেপ রেলের আছে কি না, তা জানি না।'

এ বিষয়ে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম বলেন, যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সমস্যা সমাধানে কেন্দ্রীয়ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করছি।

পরিষ্কার-পরিছন্নতা ইস্যুতে তিনি বলেন, 'আমরা এ ব্যাপারে আগের চেয়ে অনেক বেশি কাজ করছি। তার পরও অভিযোগ যখন করেছেন, তখন এ নিয়ে আরও বেশি কাজ করতে হবে। আমরা চাই, ঝকঝকে একটি প্ল্যাটফর্ম থাকুক। যাত্রীদের জন্য একটি দারুণ পরিবেশ আমরা তৈরি করতে চাই।'

সিলেট জিআরপি থানার অফির্সাস ইনর্চাজ মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, স্টেশনের পূর্ব দিকের অংশ খোলা। সেখানে নিরাপত্তাকর্মী নেই। ওদিক দিয়ে ছিঁচকে চোর, ভবঘুরেসহ হকাররা ঢুকে পড়ে। এদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। আমাদের বাহিনীতে এমনিতেই জনবল কম। সীমিতসংখ্যক লোক
নিয়ে কাজ করছি।

শূন্য পদগুলো দ্রুত পূরণ করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে সিলেট অঞ্চলের সিনিয়র সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ মো. আজমাঈন মাহতাব বলেন, শূন্য পদে নিয়োগের চাহিদা এরই মধ্যে পিএসসিতে পাঠানো হয়েছে। নিয়োগ নিয়ে কিছু জটিলতার কারণে নতুনভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিতে দেরি হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে। তবে জনবলের সংকটের কারণে ট্রেন চলাচলে যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয়, সেই দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা হচ্ছে।

মূল রিপোর্ট : রূপালী বাংলাদেশ