জান্নাতুন নাইম :
পয়লা বৈশাখে ‘হালখাতা উৎসব’ অনুষ্ঠান বাঙালির শত বছরের ঐতিহ্য। টালি খাতায় হিসাব রাখা হতো বকেয়ার। তবে প্রযুক্তির কল্যাণে টালি খাতার জায়গা নিয়েছে কম্পিউটার বা নোটপ্যাড। কমে গেছে হালখাতার কার্ড ছাপানোর রীতিও। এভাবে হারিয়ে যাচ্ছে শতবর্ষী এই উৎসব।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা ও তার পরবর্তী গত কয়েকবছর রোজা, ঈদ ও বাংলা নববর্ষ একইসঙ্গে হয়েছে। এর মধ্যেই প্রযুক্তির ব্যবহারও বেড়ে গেছে। ফলে নববর্ষ ও নববর্ষকেন্দ্রিক উৎসবগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে, কমেছে উৎসবমুখরতা। এর মধ্যে অন্যতম ‘হালখাতা উৎসব’। এ বছর হালখাতা করলেও নেই পূর্বের মতো আমেজ।
গত শনিবার (১২ এপ্রিল) সরেজমিনে পুরান ঢাকার বাংলাবাজারে কার্ড তৈরি, শাঁখারীবাজারে পূজার সামগ্রী ও তাঁতিবাজারে জুয়েলারি দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায় এমন চিত্র। আগের মতো নেই সেই উৎসবের আমেজ।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন সবাই নগদ টাকায় কেনাকাটা করেন। বাকি বেচাকেনা, বন্ধক রাখা, এসব কয়েকবছর ধরেই বিলুপ্তপ্রায়। বকেয়া লেখার লাল কাপড়ের টালি খাতার ব্যবহার নেই বললেই চলে। হিসাব রাখা হয় মোবাইলের নোটপ্যাড কিংবা কম্পিউটারের এক্সেল শিটে। তাই কমে গেছে ঘটা করে পালন করা হালখাতা উৎসবের আয়োজন।
বাংলাবাজারের ‘এম. এ মান্নান প্রোডাক্ট’ কার্ড ছাপানোর দোকান। দোকানি শ্যামল চন্দ্র বলেন, আগের মতো আর হালখাতার কার্ড ছাপানো হয় না। তবু এ বছর হালখাতা উপলক্ষে কার্ড ছাপিয়েছি। কার্ডের জন্য এবার তেমন কোনো অর্ডার পাইনি। বাংলার শতবর্ষী এই সংস্কৃতি এখন অনেকটাই বিলুপ্তপ্রায়।
বাংলাবাজারের ভাই ভাই পেপার অ্যান্ড স্টেশনারীর দোকানি বলেন, মানুষ এখন কম্পিউটারেই হিসাব লিখে রাখে। টালি খাতা তেমন ব্যবহার করে না। যারা একটু বড় ব্যবসায়ী তাদের মধ্যে দু-একজন লেখার জন্য খাতা ব্যবহার করে। তবে ধীরে ধীরে তাদের পরিমাণও কমে আসছে।
শাঁখারীবাজারের পূজার সামগ্রীর দোকান নাগ ভান্ডার। নববর্ষ উপলক্ষে দোকানের মালিক দোকান পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার নির্দেশ দিয়েছেন কর্মচারীদের। তিনি বলেন, বাংলা নববর্ষে হালখাতা করতে পারব কি না জানি না। এখনো এ ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়নি। তবে এর আগে আমরা দেখেছি, ঘটা করে পালন করা হতো নববর্ষ। সেই সঙ্গে থাকত ‘হালখতা উৎসব’। এটা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যারা পুরোনো মানুষ, ঐতিহ্য রক্ষার জন্য তারা কয়েকজন করে। তা ছাড়া এখন সবকিছু ডিজিটাল হয়েছে। সে কারণে এটার উৎসবমুখরতা কমছে।
তাঁতিবাজারের শরীফ জুয়েলার্সের দোকানি মাধব ধর। স্বল্প পরিসরে হালখাতা করছেন। তিনি বলেন, করোনার পরে গত কয়েক বছর রোজা, ঈদ ও নববর্ষ একইসঙ্গে হওয়ায় হালখাতা উৎসবের আমেজ তেমন বোঝা যায়নি। একদিকে ঈদের খরচ, অন্যদিকে রোজা, সবকিছু মিলিয়ে মানুষ টানাটানির জীবন পার করেছে। তবে আশা করি এবার হালখাতা তুলনামূলক ভালো হবে।
মূল রিপোর্ট : বাংলাদেশের খবর