সিলেটে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সমাবেশ

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

ছয় দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ঢাকার ডাকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আজ রোববার (২০ এপ্রিল) সমাবেশ করছেন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে তারা সেখানে জড়ো থাকেন। দুপুর ১২টায় শুরু হয় সমাবেশ।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকায় ‘রাইজ ইন রেড’ কর্মসূচি শেষে আজকের কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীদের জোট ‘কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ’। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, দেশের প্রতিটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে একযোগে আজকের মহাসমাবেশ। এর মাধ্যমে সরকারের উচ্চপর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণই তাদের মূল লক্ষ্য।

কারিগরির শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) তারা সিলেটে কাফনের কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ করেন। সেদিন বেলা ২ টা থেকে দক্ষিণ সুরমার লাউয়াইস্থ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীরা জড়ো হতে শুরু করেন। আড়াইটার দিকে শুরু করেন বিক্ষোভ মিছিল। এসময় নানা স্লোগানে মুখরিত হয় ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ। পরে সেখান থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি দক্ষিণ সুরমার খোজারখলা ও কাজিরবাজার ব্রিজ হয়ে উত্তর সুরমার জিতু মিয়ার পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে কিছু সময় অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুলে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক ২ ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট-এর শিক্ষার্থীরা। 

শিক্ষার্থীদের ৬টি দাবি হচ্ছে- ১) জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কতৃর্ক বাতিল করতে হবে। পাশাপাশি, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টর পদবি পরিবর্তন ও মামলার সাথে সংশ্লিষ্টদের স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।

২) ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল সহ উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম নিশ্চিত করে একাডেমিক কার্যক্রম পরবর্তী প্রবিধান থেকে পর্যায়ক্রমিক ভাবে সম্পূর্ণ ইংরেজি মাধ্যমে চালু করতে হবে।

৩) উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) এর পদ চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং ও মনোটেকনোলজি (সার্ভেয়িং) হতে পাশকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও, যেসব সরকারি, রাষ্ট্রায়ত্ত, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্নস্থ পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪) কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সকল পদে কারিগরি শিক্ষা বহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোতে অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ এবং সকল শুন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।

৫) কারিগরি শিক্ষায় বৈষম্য ও দুরাবস্থা দূর করার পাশাপাশি দক্ষ জনসম্পদ তৈরীতে 'কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়' নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করতে হবে।

৬) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইন্সটিটিউট হতে পাসকৃত শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নতমানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি, নির্মানাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (নড়াইল, নওগাঁ, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) এ পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক হতে পাশকৃত শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।