ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয় নিয়ে প্রতিবাদের ঝড়

  • নারীবিষয়ক সংস্কার

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

১৫টি বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। শনিবার (১৯ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেয় কমিশন। 

তবে এ ১৫টির মধ্যে কয়েকটি প্রস্তাব সরাসরি ইসলামি বিধি-বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে দেশব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। আলেমরা ফুঁসে উঠেছেন। ইতোমধ্যে হেফাজতে ইসলাম কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও ইসলাম বিদ্বেষের কারণে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনকে বাতিল করার দাবি তুলেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকার কাকরাইলে হেফাজতে ইসলামের কার্যনির্বাহী কমিটির বিশেষ সভা শেষে সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক এ দাবি জানান।

মামুনুল হক বলেন- নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন শনিবার যেসব সংস্কার প্রস্তাব জমা দিয়েছে, সেখানে সরাসরি ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সুপারিশ রয়েছে। আমরা দেখেছি- নারী অধিকার সংস্কার কমিশন কর্তৃক যেই প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে এবং সেটি ঐকমত্য কমিশনে উপস্থাপন করা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা বরাবর দাখিল করা হয়েছে, সেখানে অত্যন্ত আপত্তিকরভাবে ধর্মীয় বিধিবিধান, বিশেষ করে ইসলামি উত্তরাধিকার আইন এবং ইসলামিক পারিবারিক আইনকে বাংলাদেশে নারীর প্রতি বৈষম্যের কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এই প্রস্তাবনাকে চরম ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যাত করছে। শুধু এই প্রস্তাবনাই বাতিল নয়, বরং এই ধরনের বিতর্কিত জঘন্য ইসলামবিদ্বেষী, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে মারাত্মক আঘাতকারী সরাসরি ইসলাম বিরোধী কুরআন-সুন্নাহ'র সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং ন্যাক্কারজনক কটাক্ষপূর্ণ প্রস্তাবনা দেয়ার কারণে এই কমিশনকে বাতিল করার দাবি করছি। 

এছাড়া সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা থেকে 'বহুত্ববাদের প্রস্তাব' বাতিল করে 'আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও আস্থা' ফিরিয়ে আনার দাবিও করেছে হেফাজতে ইসলাম।

একই সঙ্গে- ২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দ্রুত বিচার এবং নেতাকর্মীদের নামে হওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারও চেয়েছে হেফাজত ইসলাম।

এসব দাবি আদায়ে আগামী ৩ মে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।

ইসলামিক স্কলার আহমাদুল্লাহ তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুকে লিখেছেন- নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এমন কিছু প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে, যা এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তো বটেই, অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস ও নৈতিকতার সঙ্গেও বৈসাদৃশ্যপূর্ণ।
প্রস্তাবনায় এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীদের বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা ও আকাঙ্ক্ষা সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়েছে। প্রতিবেদনের পরতে পরতে আঁকা হয়েছে পরিবার ব্যবস্থা ভেঙে ফেলার এক গভীর নীলনকশা।
অন্যান্য সরকার এবং এই সরকারের মাঝে একটি মৌলিক তফাত হলো—অন্যান্য সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় আর এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হাজারো শহীদের রক্তদানের ফলে। যাদের প্রাণোৎসর্গের ফলে এ সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কমিশন তাদের বিশ্বাস ও মূল্যবোধকে থোড়াই কেয়ার করেছে। বরং প্রতিবেদনে তাদের চিন্তা ও বিশ্বাসকে অপমানের চেষ্টা লক্ষণীয়।
মূলত নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে পশ্চিমাদের অন্ধ অনুসারী একটি বিশেষ শ্রেণির নারীদের নিয়ে—যারা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, সামাজিক মূল্যবোধ ও পরিবার ব্যবস্থা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই কমিশন এদেশে পশ্চিমা ধ‍্যান-ধারণা চাপিয়ে দিতে সচেষ্ট। তাদের সাথে দেশের সাধারণ মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই।
অবিলম্বে আমরা ধর্মীয় ও সামাজিক মূল‍্যবোধ বিবর্জিত এই প্রতিবেদন বাতিল এবং বিতর্কিত কমিশন বিলুপ্ত করে এদেশের মানুষের চিন্তা-চেতনা এবং সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল মানুষদের নিয়ে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি করছি।

এছাড়া নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে কিছু গর্হিত বিষয় রয়েছে বলে দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। রোববার (২০ এপ্রিল) রাতে সামাজিত যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ভেরিফায়েড পেজ থেকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে এমন দাবি করেন তিনি। 

ফেসবুকে দেয়া ওই স্ট্যাটাসে জামায়াত আমির লিখেছেন, ‘গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন। তাদের সুপারিশকৃত রিপোর্ট দেখে বিস্মিত।’

স্ট্যাটাসে ডা. শফিকুর রহমান আরও লিখেছেন- ‘দেশে যখন নৈতিকতার অভাবে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক এবং পারিবারিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেই প্রেক্ষাপটে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে সামাজিক শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে উক্ত সুপারিশমালায় এমন কিছু গর্হিত বিষয় নিয়ে আসা হয়েছে তা সমাজকে অনিশ্চয়তা ও চরম অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেবে। কতিপয় সুপারিশ কোরআন এবং হাদিসের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পাশাপাশি সকল ধর্মের মূল্যবোধকে তছনছ করে দেবে। বাংলাদেশের জনগণ এক বাক্যে তা প্রত্যাখ্যান করবে।’

অপরদিকে, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত কিছু দফা অত্যন্ত ভয়াবহ এবং নিঃসন্দেহে কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থি বলে দাবি করে এসব প্রস্তাবনা বাতিলের দাবি জানিয়েছে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা নায়েবে আমির আল্লামা মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী। 

রোববার এক বিবৃতিতে তিনি এই দাবি জানান। 

গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের অধিকাংশ দফাই কোরআন-সুন্নাহর পরিপন্থি এবং ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তাই অবিলম্বে এসব অন্যায় প্রস্তাব বাতিল করতে হবে। উত্তরাধিকার বিষয়ে ভাই ও বোনকে সমান অধিকার দেওয়ার প্রস্তাব এবং যৌন কর্মীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রমিকের মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাবসহ আরও কিছু বিষয় যেগুলো ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সেইসব প্রস্তাব দ্রুত বাতিল করতে হবে, অন্যথায় সামাজিক অবক্ষয় বৃদ্ধি পাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘১৯৬২ সালে আইয়ুব খানের কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থি মুসলিম পারিবারিক আইন অর্ডিন্যান্সের কারণে সমগ্র পাকিস্তানের সব ধর্মপ্রাণ ওলামা ও জনসাধারণ ঝাঁপিয়ে পড়ে আইয়ুব খানের পতন ঘটিয়েছিল। পরিণতি হিসেবে পাকিস্তান ধ্বংস হয়েছে। আমার আশঙ্কা হয়, বিভিন্ন সংস্কার কমিশনে ইহুদি, নাসারা, নাস্তিক ও ভারতের ভয়ানক কিছু এজেন্টের অনুপ্রবেশ ঘটেছে।’