শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি, ‘ক্রাইম অব অমিশন’ করেছে জামায়াত!

  • নিজামীপুত্র ও মীর কাশেমকন্যা বর্তমান নেতাদের উপর ক্ষুব্ধ

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

চব্বিশের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার জান বাজি রাখা বিপ্লব হটিয়েছে ১৫ বছরের জগদ্দল স্বৈরপাথরকে। এরপর বিএনপি-জামায়াত ইসলামিসহ সব দল নির্বিঘ্নে পালন করতে পারছে দলীয় সব কর্মসূচি। 

তবে বিপ্লব পরবর্তী সময়ে একের পর এক বিতর্কিত কাণ্ডের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে জামায়াত। ধর্মীয় কিংব রাজনৈতিক- উভয় ক্ষেত্রেই তারা বিতর্কের সৃষ্টি করছে। এছাড়া সাবেক শীর্ষ ৬ নেতার ফাঁসির জন্য তাদের সন্তানরা জামায়াতের বর্তমান নেতাদের দায়ী করছেন।

স্বৈরশাসক হাসিনা জামায়াতের শীর্ষ যে ৬ নেতাকে ফাঁসি দিয়েছে তারা হলেন- মতিউর রহমান নিযামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা, মো. কামারুজ্জামান ও মীর কাশেম আলী। 

এর মধ্যে নিজামীপুত্র ও মীর কাশেমকন্যা তাদের বাবার মৃত্যুর জন্য দলটির বর্তমান নেতাদের অভিযুক্ত করছেন। তাদের বক্তব্য- বর্তমান নেতারা যথাযথ পদক্ষেপ নিলে ফাঁসি ঠেকাতে পারতেন। 

এ বিষয়ে গত শনিবার মীর কাসেম আলীর কন্যা তাহিরা তাসনিন বিনতে কাসেম তাঁর নিজ ফেসবুক ওয়ালে একটি দীর্ঘ বক্তব্য প্রদান করেছেন। এতে তিনি বলেন- মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতাদের রক্ষায় দলটির নেতারা যথাযথ পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করেছেন। 

একই অভিযোগ করেছেন জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিযামীর ছেলে।

মীর কাসেম আলী জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ছিলেন। যুদ্ধাপরাধ মামলা শুরুর সময় তিনি আমেরিকায় ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের বিচার শুরুর পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার কয়েকদিন পর ২০১২ সালের জুন মাসে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাতে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

এছাড়া মীর কাশেমের ছেলে ব্যারিষ্টার মীর আহমদ বিন কাশেম আরমানকে দীর্ঘ ৮ বছর ঘুম করে ‘আয়নাঘরে’ রাখেন হাসিনা সরকার। পরিবারটি চরমভাবে নির্যাতনের শিকার হয় আওয়ামী লীগের আমলে।

শিল্পপতি হিসেবে পরিচিতি মীর কাসেমকন্যা তাহিরা তাসনিন বিনতে কাসেম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন- পারিবারিকভাবে তারা আমাদের অনেক কাছের, বিশেষ করে তাহের চাচা, মীর কাসেম আলীর। কিন্তু জামায়াত দল হিসেবে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করেছে তাদের নেতাদের (মতিউর রহমান নিযামী, আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা, মো. কামারুজ্জামান, মীর কাশেম আলীর) ফাঁসি আটকাতে। দিনের আলোর মতো যা আজ স্বচ্ছ। এটা তো সবাই একমত হবেন।

তিনি আক্ষেপ করে বলেন- শহিদি মর্যাদাই আমাদের একমাত্র সান্তনা এখন এবং আগামীতেও। এছাড়া আপনজনেরা তো শুধু ধোকা দিয়েছে।

তাহিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও লেখেন- জামায়াত আমাকে এমপি পদ অফার দিলেও আমি সারাজীবন এটা বলে যাব যে, নিজের হাতে হত্যা না করলেও আমাদের বাবাদের হত্যার পেছনে তারাও দায়ী। এটা আমার কাছে এক প্রকার ‘ক্রাইম অব অমিশন’।

এর আগে জামায়াতের সমালোচনা করে দলটির সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে মোহাম্মদ নাদিমুর রহমানও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। নিজামী ১৯৯১ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদের এমপি নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশ সরকারের কৃষি (২০০১-২০০৩) ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের (২০০৩-২০০৬) মন্ত্রী হিসেবে সফলতার সঙ্গে দ্বায়িত্ব পালন করেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদ-াদেশ পাওয়ার পর ২০১৬ সালের ১১ মে তার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে নিজামীপুত্র লেখেন- কথাগুলো শতভাগ সত্য এবং যৌক্তিক। আর জামায়াতের নীতি-আদর্শ থাকবেই বা কী করে? জামায়াতের যেই ছয় নেতার অন্যায়ভাবে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাদের এই ফাঁসি ঠেকাতে পারলেই না জামায়াতের নীতি-আদর্শ ঠিক থাকতো। উলটো ছোটজন বলেছিলেন- ‘তারা এখন জেলখানায় আরাম করুক আর আমরা এখন একটু খাই’। আর বড়টা তো পরে মুখ ফসকে বলেই ফেলেছিলেন- ‘তারা জেলখানায় পচে মরুক, আমরা আমাদের সংগঠন গোছাবো, না হলে আমাদের সন্ত্রাসী সংগঠন বানিয়ে দেবে’। পরবর্তীতে তো আবার আরেকটা সলিমুদ্দীন না কলিমুদ্দীন কি নাম, এক বক্তৃতায় তো বললেনই- ‘আমরা যদি আইন না মানতাম তাহলে আপনারা আমাদের একটা নেতাকেও ফাঁসি দিতে পারতেন না’। আরে, ছাত্ররাও যদি আইন মানতো, তাহলে এই জালেম হাসিনা সরকারের পতন জীবনেও ঘটাইতে পারতো না। নিয়ামী পুত্র আরো বলেন, বাংলাদেশ নতুনভাবে স্বাধীন হওয়ার পর আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করার কথা বলে কে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চায় এটা পুরো ক্রিস্টাল ক্লিয়ার (দলটির বর্তমান আমির ডা. শফিকুর রহমান আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দেয়ার ঘোষণা দেন)। এখন আবার শুরু করেছে সকালে এক কথা আর রাতে আরেক কথা বলা। আবার অন্যদিকে এক নেতার এক কথা আবার আরেক নেতার আরেক কথা। অর্থাৎ কোনোটার সঙ্গে কোনোটার মিল নেই।

স্ট্যাটাসে নিজামীপুত্র মানবতাবিরোধী মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের আরেক নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের জন্য নেক হায়াত ও সুস্থতা কামনা করেন। সেই সঙ্গে তিনি যেন দ্রুত মুক্তি পেয়ে জামায়াতের হাল ধরেন- এমন প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন নাদিমুর।

এদিকে, সম্প্রতি জামায়াতে ইসলামীর প্রীতি সমাবেশে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও কালবেলার সম্পাদক; ‘র’-এর এজেন্ট সন্তোষ শর্মার উপস্থিতি নিয়েও বির্তক তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নানা মহলে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে ফেসবুকে ক্ষমা চেয়ে পোস্ট করেন শিবিরের সাবেক সভাপতি, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম। তবে কিছু সময় পরই সেটি ডিলিট করে দেন তিনি।

এ ঘটনার পর প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন একটি ভিডিওতে বেশ কটাক্ষমূলক বক্তব্য দেন জামায়াতের প্রতি। জামায়াতের বর্তমান আমির শফিকুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন- নিশ্চয় আপনার কোনো আপত্তিকর ভিডিও আছে আওয়ামী লীগ বা ‘র’-এর কাছে। যে কারণে ভারত বা আওয়ামী লীগের প্রতি আপনার এত দরদ।


উল্লেখ্য, আইনি ভাষায় ‘ক্রাইম অব অমিশন’ অর্থ ‘অপরাধমূলক অবহেলা’। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আইনসম্মত কর্তব্য পালনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তা না করে অপরাধ সংঘটিত হতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করে তাকে ‘ক্রাইম অব অমিশন’ বা ‘অপরাধমূলক অবহেলা’ বলে। অর্থাৎ- আইনগতভাবে যদি কোনো ব্যক্তি সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও তার উপর অর্পিত আইনি কর্তব্য পালন না করে এবং তার ফলে অপরাধজনিত ক্ষতি ঘটে, তাহলে একে একটি পূর্ণাঙ্গ অপরাধের বিকল্প হিসেবে গণ্য করা হয়।