কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
আগামী বছরের ১৬ ডিসেম্বরের আগে জুলাই গণহত্যার বিচার শেষ করা হবে বলে জানিয়েছেন- আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
তিনি বলেন- বিচার সম্পন্ন করে বিজয় উদ্যাপন করা হবে।
শনিবার কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ‘ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন’ নিয়ে দুই দিনব্যাপী সংলাপের দ্বিতীয় দিনে ‘গুম-খুন থেকে জুলাই গণহত্যা: বিচারের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক অধিবেশনে তিনি এ মন্তব্য করেন। দুই দিনব্যাপী এই সংলাপের আয়োজন করেছে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ।
একই অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামও এক বছরের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করার কথা বলেছেন।
ড. আসিফ নজরুল বলেন, বিডিআর হত্যাকাণ্ড ও হেফাজতের হত্যাকাণ্ডসহ ধারাবাহিকভাবে গুম-খুনের সঙ্গে জড়িতদেরও বিচার করা হবে। এসব বিচার করবে আইন বিভাগ। কোনো গাফিলতি হবে না।
তিনি বলেন, সারা দেশে দায়ের হওয়া গায়েবি মামলার আনুমানিক সংখ্যা নির্ধারণের কাজ চলছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কতোগুলো ‘গায়েবি’ মামলা হয়েছে তার হিসাব বের করতে সব জেলার পাবলিক প্রসিকিউটরদের তদন্ত করতে বলা হয়েছে।
আসিফ আরও বলেন, আইন মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত ৫১টি জেলা থেকে গায়েবি মামলার আনুমানিক হিসাব পেয়েছে। আরও ১৩টি জেলা থেকে তথ্যের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর চার হাজারের বেশি পাবলিক প্রসিকিউটর নিয়োগ করা হয়েছে। এই কাজ তারা করছেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক ছিল না, তদন্ত কর্মকর্তা ছিল না জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে প্রসিকিউশন টিম করা হয়েছে। তড়িঘড়ি করে বিচার করে বিচারকে প্রশ্নের মুখে ফেলা যাবে না। বিচার নিয়ে কোনো গাফিলতি হবে না, নিশ্চিত করে বলতে চাই। বিচার প্রক্রিয়ায় কোনো দেরি হচ্ছে না।
এ সময় আসামিদের হাতকড়া পরানো নিয়ে উপদেষ্টা আরও বলেন, মামলার শুনানির সময় ও আসামিদের হাতকড়া না পরানো নিয়ে এখন সমালোচনা হচ্ছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সময় আসামিদের আইনজীবী যিনি ছিলেন, তিনি বলেছেন, শুনানির জন্য সে সময় তিন মাস দেয়া হয়েছিল। এখন শুধু এক মাস দেয়া হয়েছে। তখন আসামিদের কাউকে হাতকড়া পরানো হয়নি, এখনো আসামিদের হাতকড়া পরানো হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন ৮৫৮ জন, আহতের সংখ্যা ১১ হাজার ৫৩৬ জন। অভ্যুত্থানে হতাহতদের প্রথম ধাপের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে গণঅভ্যুত্থান বিষয়ক বিশেষ সেল। সম্প্রতি সেলের প্রধান, অতিরিক্ত সচিব খন্দকার জহিরুল ইসলামের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে হতাহতের এ তালিকা তৈরির উদ্যোগ নেয়। পরে জুলাই-আগস্টে নিহত এবং আহতদের তালিকা তৈরি করতে ১৫ই আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে।
এ কমিটি গত ২৯শে সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৭১৭ জনের নিহতের তালিকা প্রকাশ করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম-এমআইএস। তবে ২৮শে সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি আন্দোলনে নিহত ও আহতদের সংখ্যা আর বেশি বলে দাবি করে। সেদিন বলা হয়, আন্দোলনে ১৫৮১ জন নিহত হয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের অডিটোরিয়ামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটি, জাতীয় নাগরিক কমিটিসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেদিন বলা হয়, আন্দোলনকালে ৩১ হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। তবে এটি আরও যাচাই-বাছাই করা হবে।