প্রথম আলো’র সম্পাদকীয় >>
সিলেটের কোয়ারি, সংরক্ষিত অঞ্চল ও পর্যটনকেন্দ্র থেকে দেদার পাথর লুট বন্ধ করতে না পারা শুধু প্রশাসনের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তার প্রতিফলন নয়; সেখানকার প্রকৃতি ও পরিবেশের জন্যও অশনিসংকেত। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাপনায় যে শিথিলতা তৈরি হয়েছিল, সেটাকেই সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে একটি চক্র বেপরোয়াভাবে পাথর লুট শুরু করে।
ধারণা করা হচ্ছে- গত ৯ মাসে অবৈধভাবে যে পরিমাণ পাথর লুট হয়েছে, তার বাজারমূল্য ৬০০ কোটি টাকা। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যগুলোতে একাধিক প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু পাথর লুট ঠেকাতে সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো ও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। প্রশাসনের দিক থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে যে অভিযান চালানো হয়, সেটা এই লুট বন্ধে একেবারেই অকার্যকর অস্ত্র।
প্রকাশিত খবরগুলো জানাচ্ছে- পাথরখেকোরা এরই মধ্যে ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি ও শাহ আরেফিন টিলা এলাকা প্রায় পাথরশূন্য করে ফেলেছে। চক্রটি এতটাই বেপরোয়া যে রেলওয়ের সংরক্ষিত বাংকার এলাকায় দিন–রাত ২৪ ঘণ্টা পাথর লুট করে চলেছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লুট ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় পাথরখেকোদের এখন নজর পড়েছে সাদা পাথর এলাকায়। ২৪ এপ্রিল থেকে সুপরিচিত পর্যটনকেন্দ্রটি থেকে শাবল, বেলচা, কোদাল দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে এবং সেই পাথর নৌকায় করে নিয়ে যাচ্ছে। সাদা পাথর এলাকা পাথরশূন্য হয়ে গেলে পর্যটনকেন্দ্রটি পর্যটক হারাবে, সেখানকার প্রকৃতি ও প্রতিবেশ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সম্প্রতি প্রকৃতি ও পরিবেশের সুরক্ষায় দেশের ১৭টি কোয়ারির ইজারা স্থগিত রেখেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ভোলাগঞ্জ কোয়ারিও রয়েছে। বাংকার ও সাদা পাথর এলাকা কোয়ারির অন্তর্ভুক্ত নয়। কিন্তু এখান থেকে পাথর উত্তোলন হচ্ছে পুরাটাই অবৈধভাবে।
জেলা প্রশাসনের ভাষ্য হচ্ছে, তাঁরা নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। কারাদণ্ডও দিচ্ছেন। কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিবেদক সরেজমিনে সাদা পাথর ও বাংকার এলাকায় পাথরবোঝাই শতাধিক নৌকা দেখতে পেয়েছেন। শ্রমিকেরা প্রকাশ্যেই পাথর উত্তোলন করছেন। পাথরভর্তি নৌকা ধলাই নদ দিয়ে ভোলাগঞ্জ ১০ নম্বর সাইট এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেই পাথর ক্রাশার মেশিনে ভেঙে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হয়।
দেখা যাচ্ছে যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে। নৌকার মালিকের হয়ে পাথর উত্তোলন করা ছাড়া তাঁদের আর কোনো ভূমিকা নেই। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি সত্যি সত্যি পাথর লুট বন্ধ করতে চায়, তাহলে অবশ্যই পাথরখেকো চক্র, মানে নৌকার মালিক, ক্রাশার মেশিনের মালিক ও পেছনে থাকা প্রভাবশালীদের খুঁজে বের করে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ছাড়া আর যে পদক্ষেপই নেওয়া হোক, তার ফল হবে শূন্য।