চাকরি ফিরে পাচ্ছেন ডা. জোবাইদা

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

সরকারি চাকরি ফিরে পাচ্ছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী সিলেটের কৃতী মেয়ে ডা. জোবাইদা রহমান। সব প্রক্রিয়া শেষে দু-একদিনের মধ্যে তার চাকরি পুর্বহালের আদেশ জারি করা হবে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র।

পলাতক হাসিনা সরকারে থাকাকালে তার প্রতিহিংসার কবলে পড়ে দীর্ঘ ১৭ বছর দেশে আসতে পারেননি সিলেটের কৃতী নারী, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান। প্রায় দেড় যুগের মাথায় দলের চেয়ারপার্সন, নিজের শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গে মঙ্গলবার (৬ মে) দেশে এসেছেন। 

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর স্বামী তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনের উদ্দেশে বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন সিলেটের মেয়ে ডা. জুবাইদা রহমান। এরপর একে একে ১৭টি বছর কেটে গেলেও দেশে ফিরতে পারেননি ডা. জোবাইদা রহমান। স্বামী তারেক রহমান ও একমাত্র সন্তান জায়মা রহমানকে নিয়ে লন্ডনে বসবাস করছিলেন।

স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পলায়নে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হওয়ায় সুযোগ হয়েছে দেশে আসার। অবশেষে বাংলাদেশ সময় সোমবার (৫ মে) রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বহনকারী কাতারের রাজকীয় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার উদ্দেশে উড়াল দেন তিনি। পরদিন মঙ্গলবার (৬ মে) বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ১০টা ৪০ মিনিটে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি তাদের নিয়ে ঢাকার হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

প্রথমে জোবাইদা খালেদা জিয়ার বাসভবন ফিরোজায় যান। পরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত তাঁর পৈত্রিক বাসা ‘মাহবুব ভবনে’ উঠেন। বাড়িটি তার প্রয়াত বাবা সাবেক নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের বাসভবন ছিলো। তিনি যতদিন দেশে থাকবেন ততদিন দেশে  নিজের অসুস্থ মায়ের সঙ্গেই থাকবেন বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

জুবাইদা রহমানের জন্ম সিলেটের দক্ষিণ সুরমায়। তিনি মরহুম রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলীর মেয়ে। মাহবুব আলী সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান ছিলেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের সময়েও তিনি যোগাযোগ ও কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানী জুবাইদা রহমানের চাচা।

জুবাইদা রহমান ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। পরে লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজ থেকে মেডিসিনে এমএসসি করেন। তিনি চিকিৎসকদের সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় প্রথম হয়ে ১৯৯৫ সালে চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালে শিক্ষা ছুটি নিয়ে লন্ডনে যাওয়ার পর দ্বিতীয় মেয়াদে ছুটি বাড়ানোর পরেও ফেরত এসে চাকরিতে যোগ না দেওয়ায় তাকে বরখাস্ত করেছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

জুবাইদা রহমান রাজনীতি সচেতন থাকলেও এখনো সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তবে স্বামী তারেক রহমানের পেছনে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে গেছেন তিনি। এর বাইরে বিভিন্ন সময় বাবা মাহবুব আলীর মৃত্যুবার্ষিকী এবং জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রামসহ দু-একটি সামাজিক প্রোগ্রামে তাকে দেখা গেছে। তিনি জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ওভারসিজ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।

২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অভিযোগে তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান এবং শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা করে হাসিনার শাসনাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ২০২৩ সালের এক রায়ে ঢাকার একটি আদালত জোবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেন। তবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আদালতের দেওয়া ওই সাজা স্থগিত হয়।