কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
দেশের আলেম-উলামার সর্ববৃহৎ অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে শীঘ্রই কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে যত দ্রুত সম্ভব সিলেটে হেফাজতের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে সিলেট মহানগর কওমি মাদরাসা ঐক্য পরিষদের এক সমন্বয় সভা শনিবার (১০ মে) সকালে জামেয়া মাহমুদিয়া সোবহানিঘাট মাদরাসায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভাটিতে হেফাজতের সিলেট জেলা ও মহানগর কমিটি পুনর্গঠনের উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।
এছাড়া কেন্দ্রের ডাকে ২৩ মে সিলেটে অনুষ্ঠিতব্য হেফাজতের বিক্ষোভ কর্মসূচি সফলের জন্য নানা প্রস্তুতি এবং সিলেট মহানগর কওমি মাদরাসা ঐক্য পরিষদের কার্যক্রম সুদৃঢ় করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে- এমন সিদ্ধান্তও গ্রহণ করা হয়েছে শনিবারের সভায়।
সিলেট মহানগর কওমি মাদরাসা ঐক্য পরিষদের অন্যতম সমন্বয়ক ও দারুল হুদা মাদরাসার মুহতামিম মুফতি মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় গৃহীত বাকি সিদ্ধান্তগুলো হচ্ছে- পরিষদের কার্যক্রম সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে উপদেষ্টাদের সঙ্গে মতবিনিময়, ১৪ মে বাদ মাগরিব জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ মাদরাসায় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক ও ২১ মে সিলেট মহানগর এলাকার মাদরাসাগুলোর মুহতামিম-পরিচালকের নিয়ে বিশেষ সভা।
সিলেট মহানগর কওমি মাদরাসা ঐক্য পরিষদ সূত্র জানায়- কেন্দ্রীয় নির্দেশে আগামী ২৩ মে সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে। ওই দিন সিলেট কোর্ট পয়েন্টে অনুষ্ঠিত হবে সমাবেশ। এই কর্মসূচি সফলের লক্ষ্যে সিলেটের আলেম-সমাজ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
শনিবারের সভায় উপস্থিত ছিলেন- সিলেট মহানগরের নয়াসড়ক মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা সাইফুল্লাহ, শামীমাবাদ মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা সৈয়দ শামীম আহমদ, কাজিরবাজারস্থ জামেয়া মাদানিয়া সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা শাহ মমশাদ আহমদ, ফরিদাবাদ মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা ফখরুয জামান, ঝালোপাড়া মহিলা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা রফিকুল ইসলাম মুশতাক, জামেয়া কাসিমুল উলুম দরগাহ-এর শিক্ষক মুফতি রশিদ আহমদ ও জামেয়া দারুস সালাম-এর সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা নেয়ামাতুল্লাহ খাসদবিরি।
উল্লেখ্য, স্যাকুলার শিক্ষানীতির প্রতিবাদের মধ্যদিয়ে দেশের শীর্ষ আলেমদের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ ঘটেছিলো হেফাজতে ইসলামের। ঐতিহ্যবাহী হাটহাজারী মাদাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ আহমদ শফী রাহ.-কে আমির করা হয় সংগঠনটির। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে ইসলাম ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ১৩ দফা দাবি উত্থাপন করে মাঠের শক্ত আন্দোলনে নামে দেশের ধর্মীয় অরাজনৈতিক সর্ববৃহৎ এ সংগঠন। আর এতেই কেঁপে উঠে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার মসনদ। হেফাজত দমাতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে হাসিনা সরকার। ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের কর্মসূচিতে রাতের অন্ধকারে চালানো হয় ইতিহাসের নৃশংস গণহত্যা। এতে মারা যান কওমি অঙ্গনের ৩ শতাধিক আলেম ও ছাত্র। এরপর সরকারের উপর্যুপরি মামলাসহ নানা হয়রানিতে শিথিল হয়ে পড়ে সংগঠনটির কার্যক্রম।
হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফি রাহ.-এর মৃত্যুর পর ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর সংগঠনটির আমির নির্বাচিত হন আল্লামা হাফেজ জুনায়েদ বাবুনগরী। কিন্তু এর ৬ মাসের মাথায় সরকারের চাপে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ২০২৩ সালের আগস্টে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। ৫৩ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ ও ২১১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন দেন সংগঠনের বর্তমান আমির আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। তবে এ কমিটি নিয়ে ছিলো বিতর্ক। কমিটিতে ছিলেন না হেফাজতের শীর্ষ নেতা আল্লামা মামুনুল হকও। এসময় তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার কারাগারে বন্দী ছিলেন।
চব্বিশের জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে স্বৈরশাসক হাসিনার পলায়নের পর সক্রিয় হতে শুরু করে হেফাজতে ইসলাম। গত বছরের সেপ্টেম্বরে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি করা হয় মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিবকে ও সাধারণ সম্পাদক করা হয় আল্লামা মামুনুল হককে। এরপর থেকেই মাঠে ফের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে থাকে দেশের কোটি কোটি ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রিয় সংগঠন হেফাজত।
সর্বশেষ ৩ মে ঢাকায় হেফাজতের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিতর্কিত নারী সংস্কারবিষয়ক কমিশনের ইসলামবিদ্বেষী প্রস্তাবনাসংবলিত প্রতিবেদন বাতিলসহ চার দফা দাবি আদায়ে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
এদিকে, ২০১৩ সালের পর সিলেটের মাঠে হেফাজতকে আর তেমন সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি। বিলুপ্ত হওয়ার আগে হেফাজতে ইসলামের সিলেট জেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন আল্লামা আবদুল বাছিত বরকতপুরী রাহ. ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মাওলানা মুশতাক আহমদ খান এবং মহানগর কমিটির সভাপতি ছিলেন আল্লামা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী রাহ. ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শায়খ জিয়া উদ্দিন।
তবে এবার সিলেটে হেফাজতে ইসলামের কমিটি পুনর্গঠনের খবরে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে কওমি অঙ্গনে। এটি সফল হলে সিলেটে অনৈসলামিক ও অসামাজিক কার্যকলাপের প্রতিবাদে হেফাজতের ব্যানারে ধর্মপ্রাণ মানুষ মাঠে নামতে পারবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।