অভিযুক্ত এএসআই’র বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট পেশ

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

সিলেটে ‘জুলাই-যুদ্ধাকে’ মারধরকারী অভিযুক্ত (সাময়িক বরখাস্তকৃত) এ.এস.আই জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে রিপোর্ট পেশ করেছে তদন্ত কমিটি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কমিটি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার বরাবরে রিপোর্ট দাখিল করে। 

বরখাস্তকৃত এ.এস.আই জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের প্রাথিমক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে- কওমি কণ্ঠকে এমনটি জানিয়েছে এসএমপি’র একটি সূত্র। এখন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে নেওয়া হবে বিভাগীয় ব্যবস্থা।

এর আগে ২১ জুন ভোরে সিলেট মহানগরের জিতু মিয়ার পয়েন্টে ইসলাম উদ্দিন নামের গ্যাজেটভুক্ত এক জুলাই-যুদ্ধাকে মারধরের অভিযোগ উঠে লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এ.এস.আই জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে।

ইসলাম উদ্দিন তিনি মহানগরের শেখঘাট এলাকার নুর মিয়ার ছেলে। সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ছিলেন তিনি। চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে আহত হন। শারিরীক অসুস্থতার কারণে তিনি বর্তমানে অটোরিকশা চালাতে পারছেন না। তাই জিতু মিয়ার পয়েন্টে চায়ের দোকান দিয়ে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছিলেন ও পরিবার চালাচ্ছিলেন।

মাধরের ঘটনার পর ইসলাম উদ্দিনের পক্ষে এসএমপি কমিশনার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের সিলেট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল ইসলাম।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়- ইসলাম উদ্দিন জুলাই বিপ্লবের সসময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। চিকিৎসা শেষে শারীরিক অসুবিধার জন্য তিনি আর অটোরিকশাচালকের পেশায় ফিরতে পারেননি। তিনি বর্তমানে জিতু মিয়ার পয়েন্টে ভ্যান গাড়িতে করে চা বিক্রি করেন। প্রতিদিনের ন্যায় শনিবারও ভোর ৫টার দিকে তার দোকান খোলার পর লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত এ.এস.আই জসিম উদ্দিন তার টিম নিয়ে সেখানে যান এবং ইসলাম উদ্দিনকে জিজ্ঞাসা করেন এত সকালে দোকান খুলেছেন কেন? উত্তরে ইসমাইল উদ্দিন বলেন- তিনি প্রতিদিনই এই সময়ে দোকান খুলেন। পরবর্তীতে এএসআই জসিম বলেন- দোকান বন্ধ কর। যদি দোকান বন্ধ না করেন তাহলে ফাঁড়িতে নিয়ে যাবো।

তখন ইসলাম উদ্দিন বলেন- তিনি একজন জুলাই-যোদ্ধা। আগে অটোরিকশা চালাতেন। বিপ্লবের সময় মাথায় গুলি বিদ্ধ হয়েছে। এখনো তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ নন। সংসার চালানো প্রয়োজনে অগত্যা তিনি বর্তমানে চায়ের দোকানদারি করছেন।

কিন্তু ইসলাম উদ্দিন জুলাই-যোদ্ধার পরিচয় দেয়ার সাথে সাথে এএসআই জসিম আরও উত্তেজিত হয়ে তাকে মারধর করতে শুরু করেন। এসময় তিনি বলতে থাকেন- তোরা পুলিশ মেরে, অস্ত্র লুট করে ও থানা জালিয়ে জুলাই-যোদ্ধা হইছোস। কিল–ঘুষি, থাপ্পড় মারতে মারতে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করেন জসিম। একপর্যায়ে ইসলাম উদ্দিনকে রাস্তায় ফেলে চলে যান।’

অভিযোগটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এএসআই জসিম উদ্দিনকে প্রত্যাহার করে সাময়িকভাবে বরখাস্তের আদেশ দেন এসএমপি কমিশনার। পাশাপাশি এ ঘটনায় একজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনারকে (ক্রাইম) দিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যেই রিপোর্ট প্রদানের আদেশ দেওয়া হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কমিশনার বরাবরে রিপোর্ট দাখিল করে তদন্ত কমিটি।

রোববার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় এসএমপি কমিশনার (অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. রেজাউল করিম (পিপিএম-সেবা) কওমি কণ্ঠকে বলেন- ‘আমরা অভিযোগটি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পদক্ষেপ গ্রহণ করি। নির্দেশ অনুযায়ী কমিটি নির্ধারিত সময়েই তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করেছে। এখন অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যের বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। পাশাপাশি ঘটনার পর আমরা আন্তরিকভাবে ওই যুবকের (জুলাই-যোদ্ধা) খোঁজখবর নিয়েছি এবং আর্থিক চিকিৎসাসহায়তা উপহার দিয়েছি। এছাড়া তাঁর স্থায়ী একটি কর্মসংস্থান তৈরি করে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছি আমরা।’