- গণঅভ্যুত্থানে হত্যা-নাশকতা
- আসামি ২৫ হাজারের বেশি হলেও গ্রেফতার মাত্র ৩১৪
কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :
সিলেটে জুলাই আন্দোলনে হামলা ও হত্যা মামলার বেশিরভাগ আসামি ধরাছোঁয়ার বাইরে। পুলিশের খাতায় পলাতক, তবে তাদের অনেককে যুক্তরাজ্য, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে সরব দেখা যাচ্ছে।
পুলিশ বলছে- সিলেটে আসামির বড় অংশ কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। তাদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়রা বিদেশে চলে গেছেন। দেশে যারা আছেন, অবস্থান শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সিলেটের প্রথম সারির নেতারা প্রবাসে অবস্থান করায় গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। তবে দেশে থাকা আসামি ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। সিলেটে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ১৮ জন শহীদ ও হাজারের বেশি মানুষ আহত হন। এসব ঘটনায় ১৯ আগস্ট প্রথম মামলা হয়।
এর পর থেকে জেলা পুলিশ ৩৯ ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) ১০৩টি মামলা করে। এসব মামলার আসামি ২৫ হাজারের বেশি হলেও মাত্র ৩১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত জেলা পুলিশ ছয়টি মামলায় অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিলেও এসএমপি একটিরও পারেনি।
এসএমপি’র মিডিয়া অফিসার জানান, মামলাগুলো স্পর্শকাতর হওয়ায় তারা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছেন। একই কারণে অভিযোগপত্র দিতে দেরি হচ্ছে।
পুলিশ ও আদালতের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মামলাগুলোর মধ্যে ১৬টি হত্যার ঘটনায়। সবচেয়ে বেশি ৯টি হত্যা মামলা হয়েছে সিলেট-৬ আসনের সাবেক এমপি ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের বিরুদ্ধে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলামের নামে সর্বাধিক ৪৩টি বিস্ফোরক ও তিনটি হত্যা মামলা হয়েছে।
জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের বিরুদ্ধে আটটি হত্যাসহ ৪৪ মামলা হয়েছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লবের নামে সাতটি হত্যা, সিলেট সিটি করপোরেশনের বহিষ্কৃত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুটি হত্যাসহ ৪৩, সিলেট-৩ আসনের সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবের নামে ২৩, মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক এমপি শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের বিরুদ্ধে ২০, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরীর নামে ১৩, সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে ছয়, সাবেক কাউন্সিলর রুহেল আহমদের নামে দুটি হত্যাসহ ২৮, নগর ছাত্রলীগের সভাপতি কিশওয়ার জাহান সৌরভের বিরুদ্ধে ১৩, সম্পাদক নাঈম আহমদের নামে হত্যাসহ ২০ ও নগর যুবলীগের সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদারের বিরুদ্ধে ১৯টি মামলা হয়েছে।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান। পরে সেখান থেকে কেউ কেউ যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
সূত্র জানায়, সিলেটে হত্যা ও বিস্ফোরক মামলার শতাধিক আসামি এখন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। ইতোমধ্যে তাদের অনেকে দেশটিতে ‘রাজনৈতিক আশ্রয়ের’ (অ্যাসাইলাম) আবেদন করেছেন।
যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সরব দেখা গেছে শফিকুর রহমান চৌধুরী, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, হাবিবুর রহমান হাবিব, রণজিৎ সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, নগরের সাংগঠনিক সম্পাদক সালেহ আহমদ সেলিম, জেলা তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মোবাশ্বির আলী, আওয়ামী লীগ নেতা আফছর আহমদ, জাহিদ সারওয়ার সবুজ, নগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গীরদার, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ হান্নান, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিঠু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিরণ মাহমুদ নিপু, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু জাহিদ, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাব্বির আহমদ, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার বহিষ্কৃত মেয়র আমিনুল ইসলাম রাবেল, নগর যুবলীগ নেতা আজাদুর রহমান চঞ্চল, এমসি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব প্রমুখ।
(মূল রিপোর্ট : সমকাল)