বিড়ম্বনায় পড়তে যাচ্ছেন সিলেটবাসী!

কওমি কণ্ঠ ডেস্ক :

আবারো সিলেট জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে স্থাপিত ‘প্রেস’ ঢাকায় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। এ নিয়ে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর একটি চিঠিও দিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি প্রেস ঢাকায় স্থানান্তর হয়ে যায়; তাহলে সিলেটবাসীর দুর্ভোগ বাড়বে। অবশিষ্ট কাজের জন্য ঢাকায় ছুটতে হবে সিলেটবাসীকে। জরিপ কার্যক্রম শেষ হওয়ার আগেই ঢাকায় স্থানান্তরের চেষ্টাকে সিলেট বিদ্বেষী চক্রের কাজ বলে অভিহিত করেছেন বিশিষ্টজনেরা। এর আগে ২০২১ সালে একবার প্রেস স্থানান্তরের চেষ্টা করা হয়েছিলো। সিলেটবাসীর তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে থেমে যায় ।

সিলেট জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, সিলেট বিভাগের আওতাধীন ৩৬টি উপজেলায় ভূমি জরিপ কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৭-৮৮ সালে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত সিলেটে জরিপ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরই মধ্যে বিভাগের ৫ হাজার ৪শ ৫৭টি মৌজার মধ্যে ৩৮টি মৌজা ছাড়া বাকীসবগুলোর গেজেট প্রকাশিত হয়েছে অথবা প্রক্রিয়াধীন। এই ৩৮টি মৌজার মধ্যে মিউনিসিপালিটি, সদর ও জগন্নাথপুর, গোলাপগঞ্জসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় জরিপ অসম্পূর্ণ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রেস ঢাকায় স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সূত্র জানায়, প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে হয়রানি কমাতে ২০১২ সালে তৎকালীন জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার ইউসুফ আলীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সিলেটে এই মিনি প্রেস স্থাপিত হয়। এরপর থেকে সিলেটের জরিপের কাজ দ্রুততার সাথে এগুতে থাকে। এখন ফের প্রেস স্থানান্তরের চেষ্টা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ১২ আগস্ট ২০২৫ তারিখে সিলেটের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসে প্রেস স্থানান্তরের ব্যাপারে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যার স্মারক নম্বর- ৩১,০৩,০০০০,০০৫,৩৩.১০০ (খন্ড-১) ১৪- ৪৬৯। এতে বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ‘জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস, সিলেটে স্থাপিত মিনি প্রেসের কার্যক্রম বন্ধ করত: খতিয়ানের সফট ডাটাসমূহসহ সংশ্লিষ্ট সার্ভারসমূহ সেটেলমেন্ট প্রেস, ঢাকায় প্রেরণ।' ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক (ভূমি রেকর্ড) মো: মোমিনুর রশীদ স্বাক্ষরিত এই আদেশ হাতে পাওয়ার ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে প্রেস স্থানান্তরের নির্দেশনা দেয়া হয় ।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, সিলেটে প্রেস আসার আগে ঢাকা থেকে সবকিছু ছাপা হতো। এতে অনেক সময় লাগতো, ভূমি মালিকগণ পর্চা পেতেন অনেক বিলম্বে। সিলেটে প্রেস হওয়ায় দ্রুত উপজেলাগুলোর কাজ সম্পন্ন করা গেছে। আগে রেকর্ডগুলো সনাতন পদ্ধতিতে প্রিন্ট হতো। এখন প্রেস সিলেটে হওয়ায় জনগণ দ্রুত প্রিন্ট পরচা হাতে পেয়ে যাচ্ছেন। এখন শুধু ঢাকা থেকে নক্সা প্রিন্ট হয়, বাকি সব কাজ সিলেট প্রেস থেকে হয়। ঢাকা থেকে ছাপা হতে সময় লেগেছে বেশি। তখন দেখা যেত, একটা মৌজার প্রিন্ট পর্চা পেতে ২০/২২ বছর লেগে যেত। সিলেটের প্রেস থেকে প্রিন্ট হওয়ায় জরিপেও অগ্রগতি হয়। এখন যে কোন ভূমি মালিক দ্রুততার সাথে তার স্বত্ব লিপি পেয়ে যাচ্ছেন। সিলেটে প্রেস হওয়ায় কাজেও যেমন গতি ছিল, তেমন সিলেটবাসীর অনেক উপকারও হয়েছে। না হলে বছরের পর বছর ভূমি মালিকগণকে প্রিন্ট পর্চার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হতো। এতে ভূমির জটিলতা বেড়ে যেত। সিলেটে প্রেস হওয়ায় দ্রুততম সময়ে সেবা পেতে পারেন সিলেটবাসী।

অন্যদিকে, সিলেটে ১৯৮৭-৮৮ সালে জরিপ শুরু হওয়ার পরও প্রায় ৩৮ বছর হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত জরিপ কাজ সমাপ্ত হয়নি। ৫০ বছর পর পর পুনরায় জরিপ শুরু করার নিয়ম থাকলেও আরেক জরিপ শুরু হওয়ার সময় হয়ে আসছে- তারপরও সিলেটের জরিপ কাজ শেষ হচ্ছে না। এর সাথে যদি সিলেট থেকে প্রেস ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। তাহলে সিলেট বিভাগের কাজ দ্রুত শেষ হওয়া নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হবে। অসমাপ্ত মৌজাগুলোর জরিপ কার্যক্রম বিলম্বিত হবে।

নাম প্রকাশ না করায় শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, ‘সিলেট থেকে প্রেস ঢাকা নিয়ে যাওয়া হবে। এটা করা হলে সিলেটের যেসব উপজেলায় জরিপ রয়ে গেছে, তাদের প্রিন্ট পর্চা হাতে পেতে আগের মতো কয়েক বছর লেগে যাবে। ভূমি মালিকানার জটিলতা আরো বাড়বে। জমি কেনাবেচায়ও জনগণের ভোগান্তি চরমে উঠবে ।

জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস, সিলেট-এ সংযুক্ত সহকারী প্রেস অফিসার (আইটি), গোলাম মোস্তফা লিটন বলেন, সিলেট বিভাগে ৫ হাজার ৪শত ৫৭টি মৌজা রয়েছে। এর মধ্যে সিলেট মিউনিসিপালিটিসহ ৩৮টি মৌজার জরিপ এখনো রয়ে গেছে। এরমধ্যে কিছু মৌজার রীট রয়েছে। মৌজাগুলো গুরুত্বপূর্ণ। প্রেস স্থানান্তরের ব্যাপারে নির্দেশনা এসেছে। সেখানে আমাদের কিছু করার নেই।

সিলেট থেকে প্রেস ঢাকায় স্থানান্তর বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেটের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সোনিয়া সুলতানা জানান, ২০২১ সালেও একবার প্রেস স্থানান্তরের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছিলো, পরে আর হয়নি। এবার একটি চিঠি এসেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিবে। তবে প্রেস সিলেটে রয়ে গেলে সিলেটের মানুষের উপকার তো হবেই। ঢাকায় গেলে সাধারণ মানুষের কিছুটা তো ভোগান্তি পেতেই হবে।
এ ব্যাপারে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ সাইদুর রহমান জানান, সিলেটের প্রেসটি ঢাকায় স্থানান্তরের বিষয়ে চিঠি ইস্যু হয়েছে কিনা আমার জানা নেই । এ বিষয়ে তিনি অফিসে গিয়ে খোঁজ নেবেন বলে জানান।


(মূল রিপোর্ট : সিলেটের ডাক)