কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :
সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় বিকাশ কোম্পানির প্রায় সাড়ে ১২ লাখ টাকা নিয়ে দুপক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। একপক্ষ বলছেন- বড় অংকের এই টাকা ছিনতাই করা হয়েছে। অপরদিকে, বিকাশ কোম্পানির লোকজন বলছেন- ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা ঘটেনি, টাকা আত্মসাৎ করতে নাটক সাজানো হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে ছিনতাইয়ের অভিযোগকারীদের মাঝে।
অভিযোগ পাওয়া যায়, শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার তেতলি ইউনিয়নের দারোগাবাড়ির রাস্তার মুখে মহাসড়কে শাহীন আহমেদ চৌধুরী সামি (২৩) নামের এক বিকাশ কর্মীকে মারধর করে কোম্পানির ১২ লাখ ৪৪ হাজার ৯শ টাকা নিয়ে যায় একদল ছিনতাইকারী।
শাহীন দক্ষিণ সুরমার বদিকোনা এলাকার বাসিন্দা ও ১০ মাস ধরে সিলেটের বিকাশ এজেন্ট হোসাইন টেলিকমের ডিস্ট্রিবিউটর সেলস অফিসার (ডিএসও) হিসেবে চাকরি করছেন। ছিনতাইয়ের খবর পেয়ে তার স্বজন ও পরিবারের সদস্য এবং পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।
সামির চাচা আলবাব আহমদ কওমি কণ্ঠকে জানান- প্রতিদিনের মতো শনিবার ডিউটিতে গিয়ে তার ভাতিজা ওই দিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে মার্কেট থেকে সেলস শেষ করে দক্ষিণ সুরমার অতিরবাড়ি এলাকায় মাগরিরেব নামাজ পড়ে মোটরসাইকেলযোগে অফিসের দিকে রওয়ানা হন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তেতলির দারোগাবাড়ির রাস্তার সামনে সিলেট-ঢাকা সিলেট মহাসড়কে ছিনতাইয়ের শিকার হন তিনি। এসময় সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে ৩-৪ জন মুখোশধারী ছিনতাইকারী এসে সামির মোটরসাইকেলের পথ রোধ করে গলা ও পেটে চাকু ধরে এবং মারধর করে সঙ্গে থাকা বিকাশ কোম্পানির ১২ লাখ ৪৪ হাজার ৯ শ টাকা এবং মোটরসাইকেলটির চাবি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। যাওয়ার আগে সামি ও তার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিয়ে মহাসড়কের ফেলে দিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। পরে তার চিৎকারে পথচারীরা এগিয়ে এসে পরিবারের সদস্যদের ফোনে খবর দেন।
এদিকে, এ ঘটনাকে সাজানো উল্লেখ করে সামির বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন হোসাইন টেলিকমের ব্যবস্থাপক কয়েস আহমদ। এ বিষয়ে সোমবার সন্ধ্যায় কয়েসের মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি ‘দক্ষিণ সুরমা থানায় আছেন এবং এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন’ বলে জানান।
তবে সামির চাচা আলবাব আহমদ কওমি কণ্ঠকে বলেন- ‘বিকাশের ওই এজেন্ট-কর্তৃপক্ষ আমার ভাতিজার প্রতি অন্যায় আচরণ করছেন। আমার ভাতিজা ছিনতাইকারীদের হাতে বেধড়ক মারধরের শিকার হয়েছে। তার দুটি দাঁত ছিনতাইকারীদের ঘুষিতে পড়ে গেছে। অসুস্থ অব্স্থায়ও আমার ভাতিজাকে আটক দেখিয়ে পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। পুলিশের আচরণও রহস্যজনক। আমরা এ বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার চিন্তা করছি।’
তবে সামি মারধরে অসুস্থ নন বলে কওমি কণ্ঠকে জানান দক্ষিণ সুরমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিজানুর রহমান। তিনি সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় কওমি কণ্ঠকে বলেন- ওই যুবক মারধরে আহত হননি। তার শ্বাসকষ্ট আছে। দুদিন চিকিৎসা শেষে এখন তিনি ভালো আছেন। আমাদের হেফাজতে আছেন।
ওসি বলেন- সামির বিরুদ্ধে বিকাশ এজেন্ট-কর্তৃপক্ষ অভিযোগ দায়ের করেছে। আমাদেরও প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে- এটি ছিনতাইয়ের ঘটনা নয়। এমন কোনো আলামত আমরা পাইনি। ছিনতাইয়ের নাটক সাজানো হয়েছে। ওই যুবকের অস্বাভাবিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এখন হয়তো কোম্পানির টাকার গড়মিল লেগে গেছে তাই এই ঘটনা সাজিয়েছেন তিনি।
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন- তেতলি ও দারোগাবাড়ির রাস্তার মুখ এলাকায় প্রায়ই ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর এলাকাটি অন্ধকার ও নির্জন থাকার সুযোগ নেয় অপরাধীদের।
এই এলাকায় সন্ধ্যার পর পুলিশি টহল বাড়ানোর জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।