কারা ভাঙলো হারিছ চৌধুরীর নামফলক?

  • এলাকাবাসী দোষীদের বিচার চান

কওমি কণ্ঠ রিপোর্টার :

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হারিছ চৌধুরীর উদ্যোগে নির্মিত একটি সড়কের নামফলক সম্প্রতি রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। এটি সিলেট-জকিগঞ্জ রোডের আটগ্রাম এলাকায় ছিলো। 

জানা যায়, বিএনপির সরকারের আমলে সিলেট-জকিগঞ্জ রোডের আটগ্রাম থেকে কালিগঞ্জ যাওয়ার পথে পেট্রো-বাংলা রোডটি নির্মাণ শেষে উদ্বোধন করেছিলেন তৎক্ষালীন প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারিছ চৌধুরী। সে সময়ে এ সড়কসহ কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলায় অনেক সড়ক-ব্রিজ-কালভার্টসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেছিলেন এ কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ।

কিন্তু সম্প্রতি একটি মহলের উস্কানিতে মরহুম হারিছ চৌধুরীর নাম-সম্বলিত আটগ্রাম ফলকটি রাতের আঁধারে ভেঙে ফেলে কে বা কারা।

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন- একটি স্বার্থানেষী মহল সিলেটের কৃতী ব্যক্তিত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারিছ চৌধুরীর নামফলক ভেঙে তাঁর নাম মুছে ফেলার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু তারা সেটি হতে দেবেন না।  নামফলক ভাঙচুর করা দুর্বৃত্তদের দ্রুত শনাক্ত করে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন তারা।  

জকিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহিরুল ইসলাম মুন্না জানান- এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী। তিনি আজ বুধবার (১২ মার্চ) তাঁর ফেসবুক আইডিতে লেখেন- 
‘পত্রিকায় আমার আব্বু মরহুম আবুল হারিছ চৌধুরীর নামফলক ভেঙে ফেলার খবর প্রসঙ্গে:
এরকম ঘটনা হতে পারে সেই আলামত, যা বলে দেয় ডাকাতির রাজ্য কায়েম করা এক ফ্যাসিস্ট দূর হয়েছে, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তাদের গড়ে তোলা ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতি পুরোদমে বিদ্যমান, যেটা নতুন ফ্যাসিস্ট সৃষ্টির জন্য সহায়ক। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বোধকরি এসবের দায় একাধারে সরকার এবং সবগুলো রাজনৈতিক দলের ওপর বর্তায়। 
কারণ ফ্যাসিবাদের দোসররা তো এতদিনে আমাদের মাঝেই চিহ্নিত ও এখন খোলাখুলি ভাবে বিদ্যমান, এবং খবরে উল্লেখিত দুষ্কৃতিকারীদের ইন্ধনদাতা তারাই হবার কথা। 
এরাই তারা, যারা ফ্যাসিস্ট এর সাথে হাত মিলিয়ে, নানান জুলুমের শিকার হয়েও দীর্ঘদিনের আত্মত্যাগ স্বীকারের পর বরণ করা আমার আব্বুর কঠিন মৃত্যুকে বিতর্কিত করতে কোনো প্রয়াস বাকি রাখেনি। কারণ তিনি ছিলেন ঈমানদার জাতীয়তাবাদী এবং অন্যদেশের দাসবৃত্তি বা আগ্রাসী আচরণের বিরুদ্ধে খোলাখুলি ভাবে সোচ্চার একজন মুক্তিযোদ্ধা। 
আমার আব্বুর আপোষহীন, সর্বত্যাগী, কীর্তিমান সত্ত্বার মৃত্যু নেই, এবং তাঁর সেই সত্ত্বার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক কর্মকান্ডতো বার বারই ঘটে চলেছে; সর্বসম্মুখে; তেমন কোনো প্রতিবাদ ছাড়াই (তবে আমাদের মতো পরিবারগুলোকে সান্তনা আর অজুহাত দিতে কেউ কখনো কার্পণ্য করেননি)!
আব্বুর অবদানগুলো থেকে তাঁর নাম নিশ্চিহ্ন করার রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপ্রসূত এরকম অপচেষ্টা বিগত দীর্ঘ ফ্যাসিস্ট শাসনামলেও জারি ছিল (উদাহরণ: এরকম বহু নামফলক মুছে যেতে দেয়া, মুলাগুল হারিছ চৌধুরী একাডেমী, সুরমার ওপর তাঁর করা ব্রিজ ইত্যাদির নাম পরিবর্তন বিতর্ক, কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি বা গাফলতির দায় আব্বুর নামের দোষের ওপর চাপানো, দলগত ভাবে কিছু অদূরদৃষ্টিসম্পন্ন উচ্চাকাঙ্খীদের পাবলিক স্টেটমেন্টে অকৃতজ্ঞ সংকোচ বা কৃতঘ্নতাপূর্ণ অস্বীকৃতি ইত্যাদি)। 
দৃশ্যতই বেঈমান বা মুনাফিক শ্রেণীর এজেন্টরা সেই অর্থে কৃতজ্ঞ জনসাধারণের হৃদয় থেকে আব্বুর নাম মুছে দিতে ব্যর্থ। 
কিন্তু একই কারণে কানাইঘাট-জকিগঞ্জে আব্বুর করে যাওয়া রাস্তাঘাট, ব্রিজ, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, অনাথালয় বা অন্যান্য জনহিতকর প্রতিষ্ঠান অনেকগুলোই দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় ধরে অযত্ন, অনাদর, অবহেলা পেয়ে, রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে জর্জরিত হয়ে পড়ায় আসল ক্ষতিগ্রস্থ কেবল সেই বঞ্চিত নিপীড়িত সাধারণ জনগণই।  
আবারো সাধারণভাবে বলতে গেলে, আজকের দিনে এ জাতীয় দুঃখজনক ও হতাশাব্যঞ্জক ঘটনা বা পরিস্থিতি বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। 
চারিদিকে এখনও শুধু নতুন নতুন প্রতিহিংসার চাষ দেখছি। বৃহত্তর থেকে ছোট এলাকাভিত্তিক পরিসরে, যেকোনো রাজনৈতিক দলের ভেতরে বা বাইরে, কিছু স্বার্থান্নেষী লোকের আত্মকেন্দ্রিকতাকে পুঁজি করে, একের পর এক ষড়যন্ত্র করে, এটাকে জিইয়ে রাখা হচ্ছে। জেনে না জেনে ফাঁদে পা দিচ্ছেন অধিকাংশই । 
বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরে সামান্যতম পরমত সহিষ্ণুতা, প্রফেশনালিজম, পারস্পরিক মূল্যবোধ, সম্প্রীতির সাথে সহাবস্থানের রাজনীতি চর্চা থেকেও আমরা এখনো বহু বহু ক্রোশ দূরে। চারদিকে ফ্যাসিবাদের পদচিহ্ন নিয়ে আমাদের জন্য এগুলো অর্জন এমনিতেই অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হবার কথা, তদুপুরি আমাদের মাঝে চেষ্টার বালাই নেই। 
অথচ এগুলো অর্জিত না হলে দেশটিকে ঘিরে অনেক সম্ভাবনার যা একটু আভাস পাওয়া গিয়েছিলো সেটা ধুলিস্মাৎ হয়ে যাবে। 
সর্বোপরি জনগণের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হবে রাজনৈতিক দলগুলো প্রত্যেকে। 
জানিনা কিসের প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়ে তারা বুঝতে পারছেননা বা চাচ্ছেননা যে যেকোনো দুষ্কর্মকে মৃদু বা স্পষ্ট কোনোভাবে প্রশ্রয় দিয়েই লাভ নয় বরং ক্ষতির স্বীকার হচ্ছেন তারা নিজেরাই। স্টেকস আর টু হাই: লুকানো থাকছেনা কিছুই এবং পরিনাম হতে পারে ভয়াবহ।’