আলী হাসান তৈয়ব >>
আজ সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে মাহে রমজানের শ্রেষ্ঠতম দিনগুচ্ছ। রমজানের শেষ দশক এলে রাসুলুলুল্লাহ (সা.) পরনের ইজার শক্ত করে বাঁধতেন। রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের সবাইকে জাগিয়ে দিতেন। বুখারি ও মুসলিম শরিফে আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি এ দশ দিনের রাতে মোটেই নিদ্রা যেতেন না। পরিবারের সবাইকে তিনি এ রাতগুলোয় ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য জাগিয়ে দিতেন।
‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ইজার শক্ত করে নিতেন’ কথাটির অর্থ হলো তিনি এ দিনগুলোতে স্ত্রীদের থেকে আলাদা হয়ে যেতেন। রমজানের শেষ দশককে কাজে লাগানোর সবচেয়ে উত্তম উপায় হলো রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুকরণে ইতিকাফ করা।
ইতিকাফ হলো সব কাজ থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর ইবাদতের জন্য মসজিদে অবস্থান করা। রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া। মহল্লার যে কেউ মসজিদে ইতিকাফ করলে সবাই দায়মুক্ত। কেউ না করলে সবাই গুনাহগার হবে।
আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসের শেষ দশকে মসজিদে ইতিকাফ করতেন। যতদিন না আল্লাহ তাকে মৃত্যুদান করেছেন ততদিন তিনি এ আমল অব্যাহত রেখেছেন। তার ইন্তেকালের পর তার স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন।’ (বুখারি : ২০২৫)
ইতেকাফের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের ঝামেলা থেকে দূরে থেকে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত হওয়া। এ লক্ষ্যে কোনো মসজিদে অবস্থান করে আল্লাহর তরফ থেকে সওয়াব ও লাইলাতুল কদর লাভ করার আশা করা।
ইতেকাফকারীর কর্তব্য হলো অনর্থক কথা ও কাজ পরিহার করে সালাত, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আসকার, ইস্তিগফার, দোয়া ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থাকা। তবে পরিবার-পরিজন বা অন্য কারো সঙ্গে অতিপ্রয়োজনীয় কথা বলতে দোষ নেই।
ইতেকাফকারী নিজ অন্তরকে সর্বদা আল্লাহর সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখতে চেষ্টা করবে। নিজের অবস্থার দিকে খেয়াল করবে। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালনের ব্যাপারে নিজের অলসতা ও অবহেলা করার কথা মনে করবে। নিজের পাপাচার সত্ত্বেও আল্লাহ যে কত নেয়ামত দিয়েছেন তা স্মরণ করে তার প্রতি কৃতজ্ঞ হবে। গভীরভাবে আল্লাহর কালাম অধ্যয়ন করবে। খাওয়া-দাওয়া, নিদ্রা ও গল্প-গুজব কমিয়ে দেবে। কেননা এসব কাজকর্ম আল্লাহর স্মরণ থেকে অন্তরকে ফিরিয়ে রাখে।
অনেকে ইতেকাফকে অত্যধিক খাওয়া-দাওয়া ও সাথিদের সঙ্গে গল্প-গুজব করে সময় কাটানোর সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন। এতে ইতেকাফের ক্ষতি হয় না বটে তবে আল্লাহর রাসুলের ইতেকাফ ছিল অন্যরকম।
ইতেকাফ অবস্থায় স্ত্রী সহবাস, চুম্বন, স্পর্শ নিষেধ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন : ‘তোমরা মসজিদে ইতেকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হবে না’ (সুরা আল-বাকারা : ১৮৭)। শরীরের কিছু অংশ যদি মসজিদ থেকে বের করা হয় তাতে দোষ নেই। নবী করিম (সা.) ইতেকাফ অবস্থায় নিজ মাথা মসজিদ থেকে বের করতেন। তখন আম্মাজান আয়েশা (রা.) তাঁর মাথার কেশ বিন্যাস করে দিতেন। (বুখারি : ২০২৪)
ইতেকাফ অবস্থায় মসজিদ থেকে বের হওয়া তিন ধরনের হতে পারে : এক. মানবীয় প্রয়োজনে বের হওয়ার অনুমতি আছে। যেমন- পায়খানা, প্রস্রাবের জন্য, খাওয়া-দাওয়ার জন্য, পবিত্রতা অর্জনের জন্য। তবে শর্ত হলো, এসব বিষয় যদি মসজিদের গণ্ডির মাঝে সেরে নেওয়া যায় তবে মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না। দুই. এমন সব নেক আমল বা ইবাদত-বন্দেগির জন্য বের হওয়া যাবে না যা তার জন্য অপরিহার্য নয়। যেমন- রোগীর সেবা করা, জানাজায় অংশ নেওয়া ইত্যাদি। তিন. এমন কাজের জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া যাবে না যা ইতেকাফের বিরোধী। যেমন ক্রয়-বিক্রয়, চাষাবাদ ইত্যাদি। ইতেকাফ অবস্থায় এসব কাজের জন্য মসজিদ থেকে বের হলে ইতেকাফ বাতিল হয়ে যায়।